Leopard

সকালে উঠেই দেখা চিতাবাঘের সঙ্গে

সকাল সকাল লেজে টান আর লোম উৎপাটনের জ্বালায় তার চেয়েও বেশি আঁতকে উঠল দরজার বাইরে থাকা চিতাবাঘ।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:০০
Share:

হেঙেরাবাড়িতে বন্দি সেই চিতাবাঘ। নিজস্ব চিত্র

ভোর থেকে অস্থির হয়ে পড়েছিল পোষা সারমেয় স্টেলা। কিন্তু ডাকাডাকি করেনি। মালকিন মৌসুমী বরা দরজা খোলার আগেই সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়েছিল দরজার দিকে। নিত্যদিনের অভ্যাসমতোই দরজার বাইরে ঝুলতে থাকা কাপড় টেনে আনতে হাত বের করে খামচে ধরেছিলেন মৌসুমীদেবী। কিন্তু কাপড় এল না হাতে। উঠে এল দুই গাছা হলদে লোম!

Advertisement

আঁতকে উঠলেন মৌসুমী!

সকাল সকাল লেজে টান আর লোম উৎপাটনের জ্বালায় তার চেয়েও বেশি আঁতকে উঠল দরজার বাইরে থাকা চিতাবাঘ।

Advertisement

কিন্তু মালকিনকে বাঁচাতে চূড়ান্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিল স্টেলা। সে চিৎকার-চেঁচামেচি না করে চিতাবাঘের সঙ্গে আলাপ জমালো! সেই সুযোগে মৌসুমীদেবী অন্য ঘরে দিয়ে দরজা বন্ধ করলেন। লোক ডাকলেন। বাড়িতে থাকা ছাত্রী আবাসের আবাসিকদেরও সতর্ক করা গেল।

সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ গুয়াহাটির হেঙেরাবাড়িতে শুরু হওয়া এই বাঘবন্দি খেলা শেষ হল প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে। বন দফতর তাকে ঘুমপাড়ানি গুলির সাহায্যে কাবু করে চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসে।

শীতের শুরুতে খাদ্যাভাবে আশপাশের পাহাড় থেকে গুয়াহাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় চিতাবাঘ ঢুকে পড়ে। চিতাবাঘ থাকা পাহাড়গুলির জঙ্গল ক্রমেই সাফ হয়ে যাচ্ছে নগরায়ণের ধাক্কায়। তাই বাড়ছে মানুষ ও চিতাবাঘের সাক্ষাৎ ও সঙ্ঘাত।

বন দফতর জানায়, হেঙেরাবাড়ির নিখিলেশ বরুয়া নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে সম্ভবত রাতেই ঢুকেছিল চিতাবাঘটি। বাড়ির একটি অংশ ভাড়া নিয়ে ছাত্রী নিবাস চালান মৌসুমী বরা। তিনিই প্রথম চিতাবাঘটি দেখতে পান। মৌসুমী বলেন, “আমার কুকুর স্টেলা ছটফট করছিল অনেকক্ষণ থেকে। অন্য দিন অন্ধকার থাকতেই প্রাতর্ভ্রমণে বের হই। আজ ভাগ্যিস যাইনি। দরজা খুলতে যাওয়ার সময় স্টেলাই এগিয়ে যায়। বাইরে তখন চিতাবাঘ রয়েছে জানতাম না। স্টেলাকে দেখে সে মুখ এগিয়ে দেয়। স্টেলাও তার নাকে ভিতর থেকেই নাক ঘসছিল। আমি তা বুঝিনি। দরজার বাইরে কাপড় ঝোলে। তা টান দিতেই হাতে লোম ছিঁড়ে এল। ভয় পেয়ে যাই। স্টেলা চিৎকার করলে তখন চিতাবাঘ উল্টে আমায় আক্রমণ করত। তাই সে বুদ্ধি করে চিতাবাঘের মন অন্য দিকে আটকে রাখে।’’

ছাত্রী নিবাসের ছাত্রীরা দরজা বন্ধ করে আতঙ্কে সময় কাটাতে থাকেন। বন দফতরের কর্মী ও পশু চিকিৎসকেরা এলেও আশপাশের মানুষের চিৎকারে চিতাবাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া যাচ্ছিল না। তার মধ্যেই সে দেখতে পায় খাঁচা পাতা হচ্ছে। তাই লাফিয়ে অন্য বাড়িতে চলে যায়। এরপর সেই বাড়িতে তাকে লক্ষ্য করে প্রথম ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। কিন্তু মানুষের চিৎকারে ফের লাফ দিয়ে পালায় সে। পরে একটি বাড়ির বৈঠকখানায় ঢুকে পড়ে
বেতের সোফার নীচে আশ্রয় নেয় চিতাবাঘটি। সেখানে ফের ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়।

চিড়িয়াখানার ডিএফও তেজস মারিস্বামী জানান, পুরুষ চিতাবাঘটির জ্ঞান ফিরেছে, সে সুস্থই আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন