ষাট বছরে সবচেয়ে কম!
সদ্য শেষ হওয়া আর্থিক বছর বা ২০১৬-’১৭-য় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ৫.১ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। গত ৬০ বছরে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ এত কম হারে বাড়েনি। শেষ বার এত কম হারে ঋণ বৃদ্ধি হয়েছিল ১৯৫৩-’৫৪-তে।
অনাদায়ী ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদের চাপে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি নতুন ঋণ দিতে সাবধানী মনোভাব নিচ্ছে। তার সঙ্গে অর্থনীতির শ্লথ গতিই এর কারণ বলে আজ বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, নরেন্দ্র মোদী যতই অর্থনীতির উজ্জ্বল ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করুন, দেশে যে নতুন লগ্নি আসছে না তা স্পষ্ট। কারণ নতুন লগ্নি হলেই ঋণের পরিমাণ বাড়বে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘শুধু ব্যাঙ্কের ঋণ বৃদ্ধির হার যে এত কম, তা নয়। ২০১৬-’১৭-য় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির ক্ষমতার তুলনায় উৎপাদনের হারও গত ১৫ বছরে সবচেয়ে কম। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ক্ষমতার তুলনায় মাত্র ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয়েছে। এ থেকেও স্পষ্ট কারখানা তৈরি হচ্ছে না, শিল্পও হচ্ছে না। তাই বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে না।’’
সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘ঋণ না হলে লগ্নি হবে না, শিল্প হবে না, নতুন কর্মসংস্থানও হবে না।’’ জয়রামের দাবি, কর্মসংস্থানের অঙ্কে ইতিমধ্যেই এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। শ্রম মন্ত্রকের হিসেবই বলছে, মোদী সরকারের প্রথম দু’বছরে সংগঠিত ক্ষেত্রে মাত্র ৪.৪ লক্ষ নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের প্রথম দু’বছরে সেই তুলনায় ২১ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছিল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত ব্যাঙ্কগুলির খাতায় ঋণের পরিমাণ ৭৮.৮২ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩.১৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ বিলি হয়েছে মার্চ মাসের শেষ দুই সপ্তাহে। অথচ ব্যাঙ্কগুলির খাতায় জমায় পরিমাণ ১০৮ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নোট বাতিলের ফলে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কের ঋণের পরিমাণ আগের বছরের ওই সময়ের তুলনায় কমে গিয়েছিল। নোট বাতিলের ফলেই ব্যাঙ্কে জমার পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু অনাদায়ী ঋণের চাপে জেরবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ঋণের পরিমাণ আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় কমবেশি একই রয়েছে। যেটুকু ঋণের বৃদ্ধি হয়েছে, মূলত বেসরকারি ব্যাঙ্কের খাতা থেকে।