ধনী তালিকায় এগিয়ে ‘কৃষিজীবী’ সাংসদেরা

পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর রিপোর্ট বলছে, দেশের ধনী সাংসদদের একটি বড় অংশ কৃষির সঙ্গে যুক্ত। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

এডিআর-এর রিপোর্টে প্রকাশ, আয়ের নিরিখে সাংসদদের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন অভিনেতা, পরিচালক, গায়কেরা। ছবি: সংগৃহীত।

অভাব, অনটন, বঞ্চনা নিয়ে কৃষকদের ‘লং মার্চ’ দেশবাসীর স্মৃতিতে এখনও মলিন হয়নি। ভোটের আগে কৃষকদরদি ভাবমূর্তি তৈরিতেও রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। এরই মাঝে সামনে এসেছে একটি নতুন তথ্য। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কমিশনে জমা পড়া তথ্যের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর রিপোর্ট বলছে, দেশের ধনী সাংসদদের একটি বড় অংশ কৃষির সঙ্গে যুক্ত।

Advertisement

এডিআর-এর রিপোর্টে প্রকাশ, আয়ের নিরিখে সাংসদদের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন অভিনেতা, পরিচালক, গায়কেরা। তাঁদের এক-এক জনের বার্ষিক গড় আয় এক কোটি টাকার বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন যে সাংসদেরা তাঁরা পেশাগত ভাবে কৃষি ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের এক-এক জনের গড় বার্ষিক আয় ৭৫ লক্ষ টাকারও বেশি। সেরা আয়ের তালিকায় রয়েছেন নিখাদ ‘কৃষিজীবী’, ‘কৃষি এবং রাজনীতি’ এবং ‘কৃষি এবং চাকরি’ পেশাভুক্ত সাংসদেরাও।

শুধু তাই নয়, ওই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ওই হিসেব অনুযায়ী, দেশের সব থেকে ধনী সাংসদ, অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরের জয়দেব গল্লার (নিজস্ব বার্ষিক আয় ১৬.৩০ কোটি টাকা) পেশা হিসেবে কৃষি ও ব্যবসার উল্লেখ রয়েছে। ওই তালিকাতেই রয়েছেন শরদ পওয়ার কন্যা এবং এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে। নিজেকে কৃষিজীবী হিসেবে ঘোষণা করা এই সাংসদের নিজস্ব বার্ষিক আয় প্রায় ১ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রশ্ন উঠেছে, দেশজুড়ে চাষিদের যখন এই বেহাল দশা, তখন ‘কৃষিজীবী’ সাংসদদের আয় এত বেশি কী করে? কেউ কেউ অবশ্য টিপ্পনী কেটে বলছেন, ২০১৪ সালের নিরিখে এই আয় তো ইউপিএ জমানার। এই হিসেব দেখিয়ে রাহুল গাঁধী বলতেই পারেন, তাঁদের আমলে চাষিদের অবস্থা ভাল ছিল।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা অরিজিতা দত্তের মতে, কৃষি অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ দেশে বিভাজন রয়েছে। বড় জোতের মালিকদের আর্থিক অবস্থা, সম্পত্তির সঙ্গে প্রান্তিক চাষি, কৃষি শ্রমিক, ভাগচাষি, ছোট জোতের মালিকের আর্থিক অবস্থা মেলানো যায় না। এই সাংসদেরা প্রত্যেকেই ধনী কৃষক পরিবারের সদস্য। তাই সাংসদের তালিকায় থাকা ‘চাষি’দের আয় দেখে সামগ্রিক ভাবে কৃষকদের অবস্থা বোঝা সম্ভব নয়।

সিপিএম নেতা রবীন দেবের মতে, তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের সাংসদেরা ধনী শ্রেণির প্রতিনিধি। এই যে সম্পত্তি ও আয়ের হিসেব তা বড় জোতের মালিক শ্রেণির। শুধু তাই নয়, বহু ক্ষেত্রে বড় ব্যবসায়ীর বা উচ্চপদে চাকরিরতরাও তাঁদের অর্থ এই জোতদারিতে বিনিয়োগ করেছে। তার ফলেই কৃষিক্ষেত্রে বৈযম্য ক্রমশ বাড়ছে এবং সেই বঞ্চনা জাতীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে। নরেন্দ্র মোদী হোক বা রাহুল গাঁধীর মুখেও তাই চাষিদের কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তী বলছেন, সাংসদেরা গোটা দেশের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র অংশ। তাঁদের আয়ের হিসেবে গোটা দেশকে দেখা উচিত নয়। তাই এই বৈষম্যের ছবি বদলাতে কৃষি ক্ষেত্রে সরকারি নীতি সংস্কারের প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘ঋণ মকুব সাময়িক সুরাহা হতে পারে। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি, পরিকাঠামো উন্নয়ন দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন