মলাট বাদ দিয়ে ৪২ পৃষ্ঠার ইস্তাহারে ‘কর্মসংস্থান’ শব্দটি এল ১২ বার। আর ‘চাকরি’ শব্দটি তিন বার। কিন্তু কর্মসংস্থান বা চাকরির সংখ্যা নিয়ে ইস্তাহারে বিজেপি একটি শব্দও খরচ করল না।
পাঁচ বছর আগে লোকসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী বছরে ২ কোটি নতুন চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা নিয়ে মোদীকে নিশানা করে, কংগ্রেসের ইস্তাহারে রাহুল গাঁধী কর্মসংস্থানের উপর সবথেকে বেশি জোর দিয়েছেন। কিন্তু সোমবার বিজেপির ইস্তাহারে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-অরুণ জেটলিরা চাকরি তৈরি নিয়ে নতুন কোনও প্রতিশ্রুতির পথে হাঁটলেন না। ক্ষমতায় ফিরলে নরেন্দ্র মোদী নিজের তৈরি ২ কোটি নতুন চাকরির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে কী করবেন, তারও নির্দিষ্ট দিশা মিলল না বিজেপির ইস্তাহারে। ১২ বার কর্মসংস্থানের কথা এলেও, কোথাও তার সংখ্যার উল্লেখ মিলল না।
এই খামতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা, রাজীব গৌড়াদের অভিযোগ, চাকরি তৈরি নিয়ে কথাবার্তাই বিজেপির ইস্তাহার থেকে উধাও। সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘মোদী বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যার অর্থ, পাঁচ বছরে ১০ কোটি চাকরি। বাস্তবে এই পাঁচ বছরে চাকরির সংখ্যা ৪.৭ কোটি কমেছে।’’ লোকসভা ভোটের প্রথম ভোটগ্রহণের মাত্র তিন দিন আগে বিজেপির ইস্তাহারে বলা বয়েছে, চাকরির সুযোগ তৈরি করতে অর্থনীতির ২২টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হবে। নতুন প্রজন্মের পরিকাঠামোয় বিপুল বিনিয়োগের কথাও রয়েছে। যা থেকেও কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বিজেপির দাবি, ক্ষমতায় এলে আগামী পাঁচ বছরে পরিকাঠামোয় ১২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। রাহুল গাঁধীর ‘ন্যায়’ প্রকল্পের টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে বিজেপি প্রশ্ন তুলেছিল। এ বার বিজেপি নিজেই ১২৬ লক্ষ কোটি টাকার উৎস নিয়ে নীরব।
কংগ্রেসের অভিযোগ, নোট বাতিল ও তার পরে জিএসটি-র জন্যই বহু মানুষ রোজগার হারিয়েছিলেন। নোট বাতিল ও জিএসটি, দুইয়েরই ধাক্কা লেগেছিল বিজেপির অন্যতম বড় ভোটব্যাঙ্ক— ছোট ব্যবসায়ী, দোকানদারদের উপরে। সেই ক্ষতে মলম লাগাতে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ছোট-মাঝারি শিল্পে ১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে। জিএসটি-তে নথিভুক্ত ব্যবসায়ীরা ১০ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমার সুবিধা পাবেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য বাজেটে ঘোষিত ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনা’-র আওতায় ছোট দোকানদারদের আনা হবে। ব্যবসায়ীদের সর্বভারতীয় সংগঠন সিএআইটি তা স্বাগত জানিয়েছে। আদিবাসীদের কর্মসংস্থানের জন্য তৈরি হবে ৫০ হাজার ‘বন ধন বিকাশ কেন্দ্র’। উদ্যোগপতিদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা বন্ধকহীন ঋণ দেওয়া হবে।