—ফাইল চিত্র।
বেকারত্ব, কৃষি সঙ্কট, দুর্নীতি, বেহাল অর্থনীতি, মূল্যবৃদ্ধি— তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ নিয়েই চুপ নরেন্দ্র মোদী। বরং বালাকোট নিয়ে জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে প্রচার তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পরে এখন রাজীব গাঁধীকে ভোটের ময়দানে টেনে কংগ্রেসকে কার্যত বাধ্য করেছেন এ নিয়েই মুখ খুলতে। গত কাল তাঁর অভিযোগ ছিল, শ্বশুরবাড়ির বিদেশি লোকজনকে নিয়ে নৌসেনার যুদ্ধজাহাজে সপরিবার ছুটি কাটিয়েছিলেন রাজীব। আজ কংগ্রেস আঘাত ফিরিয়ে বলল, রাজীব-হত্যার জন্য দায়ী বিজেপিই।
অঙ্ক মেনেই শেষ দু-দফার ভোটের আগে জঙ্গি হামলায় নিহত প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে টেনে এনেছেন মোদী। এ নিয়ে নানা মহল নিন্দায় সরব হলেও মোদী ও তাঁর সেনাপতিরা সুর আরও চড়িয়েছেন। ফলে কংগ্রেস চাইলেও রাজীব-বিতর্ক থেকে বেরিয়ে বেকারত্ব-সহ অন্য মৌলিক বিষয়গুলি নিয়ে সরব হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এই অবস্থায় আজ কংগ্রেস পাল্টা আঘাত করল। সনিয়া গাঁধীর প্রাক্তন রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল আজ বলেন, ‘‘কতটা ভয় পেলে প্রধানমন্ত্রী এক জন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করতে পারেন? কিন্তু রাজীব-হত্যার জন্য দায়ী কে? বিজেপির সমর্থনে চলা ভি পি সিংহ সরকারই রাজীবের অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রস্তাব খারিজ করে এক জন মাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার দিয়েছিল। অথচ রাজীবের প্রাণনাশের হুমকি ছিল, গোয়েন্দা তথ্যও ছিল।’’
রাজীবকে মোদী ‘দুর্নীতিগ্রস্ত নম্বর ওয়ান’ বলার পরেই কংগ্রেসে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়। পাল্টা প্রচারের নির্দেশও দেওয়া হয়। কংগ্রেস ভেবেছিল, মোদী তাতে দমে যাবেন। কিন্তু তা হয়নি। উল্টে তিনি রোজ একটি করে অভিযোগে জড়াচ্ছেন রাজীবকে। তবে কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগে অস্বস্তি যে তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে আজ সকালেই অরুণ জেটলির মন্তব্যে। জেটলি বলেন, ‘‘রাজীব গাঁধীর হত্যা হয় ’৯১ সালের মে মাসে। অথচ ’৯০ সালের নভেম্বর থেকে কেন্দ্রে চন্দ্রশেখরের সরকার ছিল, যাকে সমর্থন করত কংগ্রেস। সেই সময় থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কংগ্রেস রাজীব-হত্যার জন্য ডিএমকে-কেই দায়ী করত। এই ইস্যুতে যুক্তফ্রন্ট সরকারের থেকে সমর্থনও তুলে নিয়েছিল। এখন কংগ্রেস বিজেপির ভূমিকা আবিষ্কার করেছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিজেপিকে কিছুটা ব্যাকফুটে যেতে দেখে কংগ্রেস আরও একটি তথ্য সামনে এনেছে— মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে কত বার বায়ুসেনার বিমানে চড়ে বেসরকারি সফর করেছেন। সে সব সফর মূলত দলের প্রচারের কাজে হওয়ায় বিজেপি টাকা মিটিয়েও দিয়েছে বলে জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘এমন একটি সফরে মাত্র ৭৪৪ টাকাও মেটানো হয়েছে! এটা বায়ুসেনাকে নিজের ট্যাক্সি হিসেবে ব্যবহার করা নয়?’’ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নেত্রী দিব্যা স্পন্দনা আবার টুইটারে লিখেছেন, ‘‘কানাডার নাগরিক অক্ষয় কুমারকে রণতরী আইএনএস
সুমিত্রা-তে নিয়ে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেটা কি ঠিক কাজ হয়েছিল?’’
রাহুল গাঁধী আজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘মোদী ভয় পেয়ে গিয়েছেন। আমরা তাঁকে গুঁড়িয়ে দিয়েছি। তাই আমাদের গালি দিচ্ছেন।’’ আর উত্তরপ্রদেশে মোদীকে এক হাত নিয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেছেন, ‘‘ওঁর থেকে ভীতু আর দুর্বল প্রধানমন্ত্রী আমি জীবনে দেখিনি। বড় বড় প্রচারে রাজনৈতিক শক্তি আসে না। আসে জনতার কথা শুনে সমস্যার সমাধান করা, বিরোধীদের কথা শোনার শক্তি থেকে।’’ বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে আজ শরিক শিবসেনার মুখপাত্র ‘সামনা’য় প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে— রাজীব গাঁধীকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।