Lok Sabha Election 2019

গেরুয়া হানার শঙ্কা, অঙ্কে বাম-কংগ্রেস

রাজধানীর তিরুঅনন্তপুরম এবং দক্ষিণ কেরলেরই পাতানামতিট্টা (যে জেলায় শবরীমালা অবস্থিত)— এই দুই কেন্দ্রকে এ বার বিশেষ ভাবে নিশানায় রেখেছে গোটা গেরুয়া শিবির।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৪
Share:

এক বার লাল, এক বার করে সবুজ। পাঁচ বছর অন্তর এই চক্রাকার পরিবর্তনে অভ্যস্ত মালাবার উপকূলে এ বারই প্রথম গেরুয়া তরঙ্গ!

Advertisement

কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরতে নরেন্দ্র মোদীর দলের এ বার এমনিতেই বিশেষ নজর দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে। তার উপরে শবরীমালা-অস্ত্র পেয়ে কেরলের মতো সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত রাজ্যেও এই লোকসভা ভোটে তেড়েফুঁড়ে নেমেছে বিজেপি। বামেদের এলডিএফ এবং কংগ্রেসের ইউডিএফের মধ্যে রাজ্যে ক্ষমতার পর্বান্তর চলতে থাকলেও কেরলের নানা প্রান্তে আরএসএসের শিকড় গেঁথে আছে বহু যুগ ধরে। কিন্তু শাখা এবং নিজস্ব সংগঠনের বাইরে সঙ্ঘের সেই প্রভাব নির্বাচনী রাজনীতিতে বিজেপির পালে হাওয়া জোগাচ্ছে— এমন দৃশ্য এখানে দেখা যাচ্ছে এই প্রথম। আর সেই বিপদের মুখে তলায় তলায় হাত মেলানোর অঙ্ক চলছে কংগ্রেস ও বাম শিবিরে। যদিও প্রকাশ্যে তারা পরস্পরের যুধুধান।

রাজধানীর তিরুঅনন্তপুরম এবং দক্ষিণ কেরলেরই পাতানামতিট্টা (যে জেলায় শবরীমালা অবস্থিত)— এই দুই কেন্দ্রকে এ বার বিশেষ ভাবে নিশানায় রেখেছে গোটা গেরুয়া শিবির। সঙ্ঘের নিরন্তর ঘর গোছানো এবং স্বয়ং মোদী-অমিত শাহের নির্দেশে বিজেপির সংগঠনের মাঠে নেমে পড়ার জেরে দুই কেন্দ্রেই পদ্মফুলের নামে গুঞ্জন টের পাওয়া যাচ্ছে ভালই। প্রধানমন্ত্রী মোদীই তিরুঅনন্তপুরমে এসে বিজেপির জোড়া অস্ত্র দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। প্রথমত, তিনি বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস ও বামেদের দিল্লিতে দোস্তি, এখানে কুস্তি— এই কৌশল আর চলবে না। এ বার বিজেপি!’’ এবং দ্বিতীয়ত, ‘‘আয়াপ্পা ভক্তদের বিশ্বাস রক্ষা করতে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই থেকে সংবিধানের পথ, কোনওটাই আমরা বাদ দেব না।’’ মোদীর এই দ্বিতীয় ইঙ্গিত শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে।

Advertisement

সর্বভারতীয় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য এ কে অ্যান্টনি বা সাংসদ শশী তারুর অবশ্য দাবি করছেন, বিজেপি কেরলে বড় জোর পাতানামতিট্টা বা পালাক্কাডে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে। কিন্তু বিজেপির ভোটের হার যে আগের চেয়ে অনেক বাড়তে পারে, সেই আশঙ্কা তাঁদের আছে। এবং সে জন্যই তলায় তলায় আলোচনা চলছে, তিরুঅনন্তপুরম-সহ কোনও আসনেই বিজেপি জিতে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠলে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে যে যেখানে শক্তিশালী, তাকে অন্য পক্ষ ‘ভোট ট্রান্সফার’ করবে। আবার এত অঙ্ক কষে ভোট হয় কি না, সেই প্রশ্নও যথারীতি আছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শবরীমালা ও বিজেপি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তারুরেরা বলছেন, ‘‘আয়াপ্পা ভক্তদের বিশ্বাস নিয়ে এতই যদি ওঁরা বিচলিত, সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেন না কেন? লোকসভাতেও মোদীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) এখনই আনা যেত!
তার জন্য আর এক বার ক্ষমতায় আসতে হবে?’’

যদিও হিন্দু ভোটের খেয়াল রাখতে কংগ্রেসকেও ‘আশ্বাস’ দিতে হচ্ছে, কেন্দ্রে সরকারে এলে ভক্তদের বিশ্বাসের মর্যাদা তারা দেবে! সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য
এম এ বেবির বক্তব্য, ‘‘কেরলের বাম সরকার সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ পালন করেছে, যা করতে যে কোনও সরকার বাধ্য। বিজেপি এবং সঙ্ঘ এটাকে সাম্প্রদায়িক প্রচারে নিয়ে গিয়ে পরিবেশ বিষাক্ত করছে।’’

কংগ্রেস ও বাম নেতারা বললেও কেরলে ঘুরে টের পাওয়া যাচ্ছে, সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে আরব ও উপসাগরীয় দেশের এবং খ্রিস্টানদের সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগ, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিকে সংখ্যাগুরু এলাকায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে সঙ্ঘ। ঘটনা হল, কেরলের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলির যোগাযোগ এবং সঙ্ঘের জমি তৈরির চেষ্টা— দু’টোই অনেক দিনের। কিন্তু এই প্রথম সে সবের যোগফলে জনমানসে প্রভাব এ ভাবে দৃশ্যমান!

শবরী-কাণ্ড থেকে বহু দূরে উত্তর কেরলের ভোট। বরাবরের লড়াই সেখানে পুরোদস্তুর রাজনীতি-ভিত্তিক। এই অংশেরই কান্নুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক পি জয়রাজন গেরুয়া শিবিরের ‘এনিমি নম্বর ওয়ান’! কিন্তু ভাডাকারা আসনে জয়রাজনের (গুজরাত হিংসার দুই মুখকে যিনি হাজির করেছিলেন) বিরুদ্ধে হাল্কা প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। তারা চাইছে, ভোট ভাগ না করে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা কে মুরলীধরনই সিপিএমের জাঁদরেল সম্পাদককে হারিয়ে দিন! বিজেপির এই যাবতীয় কৌশলই এ বার রাজনৈতিক শিবিরের চর্চার কেন্দ্রে।

ভোটের মুখে তাই বেশ খোশমেজাজেই আছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি পি শ্রীধরন পিল্লাই। দাবি করছেন, ‘‘আমাদের ভোট তো বাড়বেই। সেই সঙ্গে কেরলে একটা লোকসভা আসনও যদি বিজেপি পায়, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে গোটা খেলাটাই অন্য রকম হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন