ছত্তীসগঢ়ের রবার্ট বঢরার নাম শুনেছেন?
ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করেন রায়পুরের কুশাভাও ঠাকরে পরিসরে ছত্তীসগঢ় রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে এক কোণে বসে থাকা এক নেতা।
তিনি কে?
জামাইরাজা! নাম শোনেননি?
পুনীত গুপ্তর কথা বলছেন? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের জামাই? তিনি তো ফেরার!
আর ফেরার নন। জামিন পেয়েছেন। ডাক্তার। সরকারি হাসপাতাল ‘ডিকেএস পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর সুপার ছিলেন। সেখানে বেআইনি ভাবে নিয়োগ। তার পরে ৫০ কোটি টাকার জালিয়াতি। ১৫ বছর শ্বশুরমশাই মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন। জামাইবাবাজি কী করেছেন, তিনিই জানেন!
রাজনীতিতে ছিলেন নাকি?
রাজনীতি করতেন না। তবে রাজনীতির খেলায় ছিলেন।
গত লোকসভা ভোটের পর অন্তাগড় কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। কংগ্রেসের প্রার্থী শেষ বেলায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে বিজেপিকে জিতিয়ে দেন। শোনা যায়, কংগ্রেসের সেই প্রার্থীকে বিজেপি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিল। আর এর পিছনে পুনীত গুপ্ত আর অজিত জোগীর ছেলে অমিত জোগীর খেলা ছিল। সেই মামলাতেই তো আগাম জামিন পেলেন জামাই। হাসপাতালের দুর্নীতির তদন্ত চলছে।
অজিত জোগী তো আর কংগ্রেসে নেই। নতুন দল তৈরির পর বিধানসভা ভোটে মায়াবতীর সঙ্গে জোট বাঁধলেন। অজিত জোগীর নতুন দল এ বার ভোটে লড়ছে না কেন?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিধানসভায় কংগ্রেসের ভোট কাটতে গিয়ে জোগীজি তো বিজেপিরই ভোট কেটে বসেছিলেন। তাই এ বার আর বিজেপি সাহায্য করছে না। মানে, টাকাপয়সা দিচ্ছে না আর কি! দলে দলে ওঁর পার্টির লোকেরা কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন। পারলে নিজেও ফের কংগ্রেসে যোগ দেন।
রমন সিংহ তো বলেছেন, জামাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আদালতও জামিন দেওয়ার সময় বলেছে, পুলিশ এখনও কোনও তথ্যপ্রমাণ আনতে পারেনি। তা ছাড়া রমন সিংহের বিরুদ্ধে তো কোনও দুর্নীতি নেই!
কে বলল? ওঁর নাম তো ৩৬ হাজার কোটি টাকার রেশন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে। রমন সিংহ ৩৫ কিলো করে চাল বিলি করে ‘চাউলবাবা’ বলে খ্যাত হয়েছিলেন। সেই চাল বিলিতেই কেলেঙ্কারি। চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতেও নাম রয়েছে। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলে দিয়েছেন, সব তদন্ত হবে।
আপনি বুঝি রমন সিংহকে পছন্দ করেন না?
কেন করব! উনি তো ছত্তীসগঢ়িয়াই নন। মধ্যপ্রদেশের লোক হলেও কথা ছিল। হাজার হোক, মধ্যপ্রদেশ ভেঙেই তো ছত্তীসগঢ় তৈরি। উনি তা-ও নন। পাহাড়িয়া লোক। ছত্তীসগঢ়ে বিজেপি নেতা ছত্তীসগঢ়িয়া হওয়া উচিত!
তা হলে রমন সিংহই কেন এখনও ছত্তীসগঢ়ে বিজেপির মুখ? তাঁকে তো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মঞ্চেও দেখা যাচ্ছে!
দলে আর কোনও ওজনদার নেতা নেই। ১১টা লোকসভা কেন্দ্র এ রাজ্যে। বিজেপির ১০ জন সাংসদ ছিলেন। শুনেছেন তো, তাঁদের কেউ এ বার আর টিকিট পাননি। সব্বাই নতুন। রাজনন্দনগাঁও থেকে রেকর্ড ভোটে জেতা রমনের ছেলে অভিষেক সিংহকেও রেয়াত করা হয়নি। রমন সিংহের নামে আর ভোট চাইছেন না কেউ। নরেন্দ্র মোদীই সবার মুখ।
১০ জন বিজেপি সাংসদের কেউই ভাল কাজ করেননি, এটা কী হতে পারে?
করেছেন হয়তো। কিন্তু পাঁচ মাসে আগে বিধানসভা ভোটের ফল দেখেছেন? বিজেপি কংগ্রেসের কাছে ক্ষমতা হারাল। ৯০টায় মাত্র ১৮টা আসন পেল। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ না কি দিল্লিতে ডেকে বিজেপির ১০ সাংসদকে বলেছেন, আপনাদের লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা বিধানসভা কেন্দ্রে যখন দলের বিধায়কদের জেতাতে পারেননি, তখন প্রার্থী হওয়ার অধিকারও নেই।
ওরে বাপরে! এ তো সেমিফাইনালে খারাপ খেলার জন্য ফাইনাল ম্যাচে টিম থেকে বাদ?
এক দমই তাই। কিন্তু সেমিফাইনালের পর ফাইনালে গোটা দলটাই পাল্টে দিয়েছেন মোদী-শাহ। শুধু রমন সিংহ ক্যাপ্টেন রয়ে গিয়েছেন। ফাইনালে হারলে ক্যাপ্টেন ক’দিন থাকে, কে জানে!