ছবি: এপি।
ভোট প্রচারের শেষ দিনে নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ফের সরকার গড়বেন তিনি। আর অমিত শাহের দাবি, বিজেপি একাই ৩০০ পার করবে। হাসিমুখে রাহুল গাঁধীর জবাব, অপেক্ষা করুন ২৩ মে পর্যন্ত। গত কয়েক বছরে কংগ্রেস ধারাবাহিক ভাবে মোদীর ফেরার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফা ভোটের আগে আজই ছিল প্রচারের শেষ দিন। আর শাসক ও বিরোধী শিবিরের নেতারা আজ প্রায় একই সময়ে মুখোমুখি হলেন সাংবাদিকদের। বিজেপি দফতরে অমিত শাহের সঙ্গে এলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আর কংগ্রেসের দফতরে রাহুল। শেষ বেলায় দু’জনেই শোনালেন ভোটে তাঁদের নিজ-নিজ কৌশল।
অমিত শাহ শোনাচ্ছিলেন, কী করে তিন বছর আগে থেকেই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল বিজেপি। যে ১২০টি আসনে বিজেপি গত বার জেতেনি, সেখানে কী ভাবে বুথ শক্ত করা যায় তার কৌশল নিয়েছেন। বিরোধীরা জোট বাঁধবে জেনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়ার ঘুঁটি সাজিয়েছেন। আর সংগঠনের সঙ্গেই কৌশলে ব্যবহার করা হয়েছে মোদী আবেগকে। এ সব মিলিয়ে বিজেপি একার জোরেই ৩০০-র বেশি আসন পেতে চলেছে। তা নিয়ে দল নিঃসংশয়। শরিকদের নিয়ে ফের মোদী সরকার হবে কেন্দ্রে। আরও শরিক আসতে চাইলে স্বাগত।
অমিত শাহের সুরে সুর মিলিয়ে মোদীও বলেন, ‘‘অনেক বছর পর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কোনও সরকার ফের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে। এ’টি গবেষণার বিষয়। কী করে এত বড় সংগঠনকে এর জন্য ব্যবহার করা যায়। সকলের হাতে নির্দিষ্ট কাজ তুলে দেওয়া যায়। মানব সম্পদকে ব্যবহার করা হয়।’’ প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা সব কাজ একেবারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে করি। বাকিরা জানতেই পারে না।’’ মোদী বোঝাতে চাইলেন, সংগঠনের জোরেই এ বারেও বিজেপির জয় হবে। আর এই কর্মযজ্ঞ নতুন প্রজন্মের কাছেও শিক্ষণীয়।
রাহুল গাঁধী যতই দুর্নীতি নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করুন না কেন, আজও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন তাঁর শপথ নেওয়ার আগেই দেশে দুর্নীতিগ্রস্তরা ধাক্কা খেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৪ সালে ১৬ মে ভোটের ফল বেরিয়েছিল। আজ ১৭ মে। পাঁচ বছর আগে আজই সাট্টাবাজদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়। তখন কংগ্রেসের দেড়শো আসন আর বিজেপির ২১৮-র কাছাকাছি আসন দিচ্ছিল সাট্টা বাজার। সব টাকা ডুবে গিয়েছে।’’ এ কথা বলেই এক গাল হেসে মোদী বলেন, ‘‘সে দিনই ওরা টের পেয়েছিল, ইমনাদারির যুগ শুরু।’’
রাহুল আজ বলেন, ‘‘২০১৪ সালে ভাল ফল না করেও গত কয়েক বছরে বিরোধী দলের ভূমিকা ‘এ-গ্রেড’ হিসেবে পালন করেছে কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদীকে আমরা ঘিরে ফেলেছি। ২০১৪ সালে মোদীর যা ভাবমূর্তি ছিল, আজ তা নষ্ট হয়েছে। এখন যে কোনও শহরে কাউকে ‘চৌকিদার’ বললেই উত্তর আসবে ‘চোর হ্যায়।’ কংগ্রেস দল ধারাবাহিকভাবে কৃষকদের সমস্যার কথা তুলেছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে ক্ষমতায় এসে দিশা দেখিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর ১৫ লক্ষ টাকার মিথ্যার মুখোশ খুলে কংগ্রেস এনেছে ‘ন্যায়’ প্রকল্প।’’
নিজের দলের কৌশল ব্যাখ্যা করে রাহুল আজ জানান, কংগ্রেসের লক্ষ্যই ছিল মোদীর ফেরার সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া। রাজ্য ধরে ধরে সে চেষ্টা হয়েছে। ৯০ শতাংশ বন্ধ করা গিয়েছে। চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো অতীতের বন্ধুদের গালি দিয়ে বাকি ১০ শতাংশ নরেন্দ্র মোদী নিজেই বন্ধ করে সাহায্য করেছেন। মোদী-আরএসএসের হাত থেকে সুপ্রিম কোর্ট, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর কাজও করছে কংগ্রেস। রাহুলের কথায়, ‘‘আমরা আমাদের কাজ করেছি, এ বারে জনতাই মালিক। তাঁরা যা রায় দেবেন, স্বীকার করে নেব।’’