বাদ পড়ে ক্ষুব্ধ জোশীর চিঠি ভোটারদের

মোদী বা অমিত শাহের মতো কোনও শীর্ষ নেতা নন, বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণীর কাছে ভোটে না লড়ার বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা রামলাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:৩৯
Share:

২০১৪ সালের এ ছবি কি এখন অতীত? —ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে দলের প্রবীণ নেতাদের ক্ষোভ আজ প্রকাশ্যে বেরিয়েই পড়ল।

Advertisement

মোদী বা অমিত শাহের মতো কোনও শীর্ষ নেতা নন, বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণীর কাছে ভোটে না লড়ার বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা রামলাল। আডবাণীকে বলা হয়েছিল, যাতে তিনি নিজেই ভোটে না লড়ার কথা প্রকাশ্যে জানান। দলের তরফে এমন আচরণে ক্ষুব্ধ আডবাণী সে কথা শোনেননি। রামলাল একই বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন আর এক প্রবীণ নেতা মুরলী মনোহর জোশীর কাছেও। তাঁকেও বলা হয়, ভোটে না লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করুন প্রকাশ্যে। বেজায় ক্ষুব্ধ জোশী কাজটা করলেন, তবে অন্য ভাবে। তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র কানপুরের ভোটারদের উদ্দেশে তিন লাইনের বার্তা পাঠালেন। তাতে লিখলেন, রামলাল এসে তাঁকে জানিয়েছেন, কানপুর কিংবা অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে তাঁর ভোটে লড়া উচিত নয়।

মোদী-অমিত শাহের কাজকর্মের বিরুদ্ধে এর আগে আডবাণী-জোশী-শান্তা কুমাররা খোলা চিঠি লিখে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেছিলেন। এ বারেও সে রকম তোড়জোর শুরু করেছেন তাঁরা। আঁচ পেয়ে বিজেপি নেতৃত্ব তা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ক্ষুব্ধ প্রবীণদের ঘনিষ্ঠ শিবির থেকে বলা হচ্ছে, মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এঁদের অসম্মান করা শুরু করেছেন। অথচ জনসঙ্ঘের আমল থেকে এঁরাই নিজেদের চেষ্টা এবং পরিশ্রমে আজকের বিজেপিকে তিলতিল করে তৈরি করেছেন। সেই জোরেই আজ মোদী প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ দলের সভাপতি।

Advertisement

দলের অন্দরে এই বিক্ষোভকে অবশ্য পাত্তা দিচ্ছেন না মোদী-শাহেরা। আজ জোশীর ওই রকম বিস্ফোরক চিঠির কয়েক ঘণ্টা পরেই কানপুর কেন্দ্রে নতুন একজনকে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে বিজেপি। ফলে আডবাণী, জোশী, শান্তা কুমার, ভুবনচন্দ্র খাণ্ডুরি, কারিয়া মুণ্ডার মতো প্রবীণরা আর প্রার্থী হচ্ছেন না এ বারে।

এ বছরেই পঁচাত্তরে পা দিচ্ছেন বিদায়ী লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। মোদী-শাহ জুটি ক্ষমতায় আসার পরেই ঠিক করেছেন, ৭৫ বছরের উপরে কাউকে পদ দেওয়া হবে না। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের ইন্দৌর কেন্দ্র থেকে এ বারেও প্রার্থী হতে চাইছেন সুমিত্রা। কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও ওই আসন থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রবীণদের অবজ্ঞা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপির অন্দরে। আডবাণী-ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, ‘‘যাঁরা মোদীদের তৈরি করলেন, এখন তাঁদেরই এমন অনাদর? একবার মোদী এসে বললে গাঁধীনগর থেকে অমিত শাহকে প্রার্থী করতে কি মানা করতেন আডবাণী?’’ গাঁধীনগর থেকে ৩০ মার্চ মনোনয়ন পেশ করবেন।

এক সময় আডবাণীর অনুগামী অরুণ জেটলি এখন মোদীর সেনাপতি। তিনি বলছেন, ‘‘যে কোনও দলে প্রজন্মের বদল হয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পাঁচ বছর আগেই এই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। টিকিট কেটে দেওয়ার কোনও বিষয় নয়।’’

জেটলি যা-ই বলুন, শুধু প্রবীণরা নন, টিকিট কাটা যাওয়ায় শাহনওয়াজ হোসেন, গিরিরাজ সিংহের মতো নেতারাও ক্ষুব্ধ। প্রকাশ্যে অবশ্য শাহনওয়াজ বলছেন, ‘‘৫০০ জন কর্মী লড়বেন, ১১ কোটি লড়াইটা করাবেন। আমরা সেই ১১ কোটির দলে।’’

বিজেপিতে প্রবীণদের এই হেনস্থা নিয়ে আসরে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই মোদী-বিরোধী এবং দীর্ঘদিনের বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা রাহুল গাঁধীর সঙ্গে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবারই তিনি কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। আজ অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, ‘‘লালকৃষ্ণ আডবাণী-মুরলী মনোহর জোশীদের প্রতি যে আচরণ করছে বিজেপি, সেটি আমাদের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। হিন্দু সংস্কৃতিতে প্রবীণদের সম্মান করতেই শিখেছি আমরা।’’ ওমর আবদুল্লার খোঁচা, ‘‘প্রবীণদের প্রতি বিজেপির অসম্মান দেখে বলতে পারি, পরিবার পরিচালিত দল বড়দের অনেক বেশি সম্মান দেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন