National- Lok Sabha Election 2019

‘মেঘনাদ-মোদী’র তত্ত্ব নিয়ে রসিকতা, উদ্বেগও

‘হৃদয়ে মোদী’ হ্যাশট্যাগ-সহ প্রধানমন্ত্রীর টিভি সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো পোস্ট করার পরেও তড়িঘড়ি নিজেদের দু’টি টুইটার পেজ থেকে তা মুছে দিল বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০২:২৭
Share:

হাসাহাসি চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে যোগ দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারাও। আম আদমিরা কেউ ‘ছিছি’ করছেন, কারও প্রবন্ধের শিরোনাম— ‘বিজ্ঞানের দেওয়ালকেও টপকে গেল নরেন্দ্র মোদীর আমিত্ব’।

Advertisement

আর ‘হৃদয়ে মোদী’ হ্যাশট্যাগ-সহ প্রধানমন্ত্রীর টিভি সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো পোস্ট করার পরেও তড়িঘড়ি নিজেদের দু’টি টুইটার পেজ থেকে তা মুছে দিল বিজেপি। একটি কেন্দ্রীয় পেজ, একটি গুজরাত রাজ্য বিজেপির। মোছার আগেই অবশ্য সেই ক্লিপিং ভাইরাল। বিজেপির ইউটিউব চ্যানেলে পুরো সাক্ষাৎকার দেখা যাচ্ছে এখনও। যেখানে মোদী নিজেই বলছেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোট অভিযানের রাতে ঝেঁপে বৃষ্টি নামায় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা যুদ্ধবিমান পাঠানো নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। চেয়েছিলেন অভিযানই পিছিয়ে দিতে। তিনি তখন তাঁদের বলেন, ‘‘আমি বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, মেঘ থাকলে আমরা পাকিস্তানি রেডারের থেকে বাঁচতে পারি।’’ তখনও নাকি চিন্তা ছিল। মোদীর বক্তব্য, ‘‘আমি বললাম, ঠিক আছে। মেঘ থাকুক। ওরা রওনা হল।’’

প্রধানমন্ত্রী একে বলছেন ‘ক্লাউড বেনিফিট’। আর সাধারণ মানুষ বলছে, ‘‘তা হলে তো বর্ষাকালে দেশজুড়ে বিমান চলাচলই বন্ধ থাকার কথা! এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল তো রেডার দেখেই বিমান নিয়ন্ত্রণ করে।’’ কেউ অভিধান খুলে দেখিয়েছেন, রেডার কাজই করে বেতার-তরঙ্গের ভিত্তিতে। সেখানে মেঘ কোনও বাধা নয়। কিন্তু মোদী তো বলছেন, তাঁর কথা শুনে বৃষ্টি সত্ত্বেও অভিযান চালাতে রাজি হয়েছিল বিমানবাহিনী! সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির টুইট, ‘‘মোদী যা বললেন তার অর্থ— আমাদের বায়ুসেনা অপেশাদার এবং অশিক্ষিত। উনি তো বায়ুসেনাকে অপমান করলেন!’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

‘‘এই প্রথম এ সব কথা বলছি। জানি না আমাদের অফিসারদের কেমন লাগবে’’— সাক্ষাৎকারে বলেছেন মোদী। প্রশ্ন উঠেছে, তবে বললেন কেন? সরকারের ‘ওয়ার-রুমের’ গোপনতম কৌশল লোকসভা ভোটের মধ্যে প্রকাশ্যে বলে দিলেন কি শুধু ভোটের তাগিদে?

এ যেন মেঘ না চাইতেই মিম!

আকাশের মেঘ যে রেডারকে ফাঁকি দিতে পারে, সেই 'অভিনব তথ্য' প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তুলে ধরতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যঙ্গ-বর্ষণ শুরু। পাঁচ বছরের 'জুমলা'র অভিযোগ তুলে 'মির্জা ক্লাউডি'-র নামে শায়েরি যেমন ছড়িয়েছে, তেমনই ছড়িয়েছে হাতে মেঘের কার্টুন নিয়ে বিজয় মাল্যের ছবি। "আপনি কী ভাবে সবার অগোচরে ভারত ছাড়লেন?" উত্তরে মাল্য দেখাচ্ছেন সেই মেঘ। এমন মেঘে মেঘেই গড়িয়েছে রঙ্গব্যঙ্গের বেলা। রইল তারই কিছু বাছাই নমুনা।

এ নিয়েই আজ নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন ইয়েচুরি। লিখেছেন, কমিশনের নিষেধ সত্ত্বেও ফের সেনার নামে ভোট চাইছেন মোদী। আজও উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে বলেছেন, ‘‘সবার প্রশ্ন, ভোটের সময়ে মোদী জঙ্গি মারছে কেন?’’ ইয়েচুরির ক্ষোভ, ‘‘কমিশনকে দেখে মনে হচ্ছে, মোদী এবং অমিত শাহ আদর্শ আচরণবিধির আওতাতেই আসেন না।’’ ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার টুইট-রসিকতা, ‘‘পাক রেডার মেঘের মধ্যে কাজ করে না। এই তথ্যটা পরের অভিযানগুলোর সময়ে মনে রাখতে হবে।’’ কংগ্রেস তো ছড়াই কেটে দিয়েছে, ‘‘জুমলাই দিলেন পাঁচ বছর / ভাবলেন মেঘলা দিন, কিছুই ধরা পড়বে না রেডারে।’’

নেটিজ়েনরা আরও চাঁছাছোলা। কেউ বিজয় মাল্যের ছবিতে ফোটোশপ করে হাতে মেঘ জুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘‘এ বার বোঝা গেল, এঁরা পালালেন কী ভাবে।’’ কেউ লিখলেন, ‘‘মোদী তো পূর্ণিমায় চাঁদে যান পাঠাবেন, কারণ নামার জন্য বেশি জমি পাওয়া যাবে।’’ ফেসবুকে কারও খোঁচা, ‘‘মোদী তো স্বয়ং মেঘের আড়ালে থাকা মেঘনাদ!’’

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মোদীর দাবি সত্যি হলে, গোটা বিষয়টিই অত্যন্ত উদ্বেগের। প্রথমত, সে ক্ষেত্রে ধরতে হয়, নিজেদের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান— সমস্ত বিসর্জন দিয়ে স্রেফ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযান চালায় বায়ুসেনা। দ্বিতীয়ত একটি চ্যানেলের দাবি, সে রাতে মেঘের জন্যই বালাকোটের জইশ ঘাঁটি ধ্বংসের উপরে সরাসরি ভিডিয়ো-নজরদারি করতে পারেনি বায়ুসেনা। কারণ, দৃশ্যমানতা ছিল না।

চ্যানেলটির দাবি, ভারতের ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান সে দিন দু’রকম ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি হল ইজ়রায়েলে তৈরি ‘ক্রিস্টাল মেজ়’ ক্ষেপণাস্ত্র। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এই ক্ষেপণাস্ত্র উঁচু থেকে নিক্ষেপ করা হলে তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা পর্যন্ত গোটা পথের ভিডিয়ো পাঠাতে পাঠাতে যায়। বিশ্বের সমস্ত বড় শক্তি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। কিন্তু ঝড়বৃষ্টির জন্য সে দিন এই ক্ষেপণাস্ত্র কাজেই লাগেনি। তার বদলে ছোড়া হয়েছিল ‘স্পাইস-২০০০’ নামে অন্য এক ক্ষেপণাস্ত্র। চ্যানেলটির মতে, ‘ক্রিস্টাল মেজ়’ ব্যবহার করা গেলে সারা বিশ্বকে বালাকোট অভিযানের অকাট্য প্রমাণ দিতে পারত ভারত।

এর দায়ও কি মোদীর? প্রশ্নটা এখনও তাঁকে করেনি কেউ। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলে রেখেছেন, ‘‘যে পণ্ডিতেরা মোদীকে গাল পাড়েন, এমন অবস্থায় তাঁদের মাথা কেন কাজ করে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন