উত্তরপ্রদেশের বহরাইচে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। ছবি: পিটিআই।
সন্ধান চাই। মণিশঙ্কর আইয়ার বা তাঁর মতো কেউ। যিনি নরেন্দ্র মোদীর জাত তুলে কটাক্ষ করবেন!
শনিবার উত্তরপ্রদেশে জনসভায় গিয়ে মোদী নিজেই নিজের জাত টেনে আনায় বিরোধীদের বিদ্রুপ, প্রধানমন্ত্রী কি এমন এক জনকে খুঁজছেন, যিনি তাঁকে নিচু জাতের বলে গাল দেবেন! ২০১৭-র গুজরাত ভোটের আগে কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার যেমন মোদীকে ‘নীচ কিসম কা আদমি’ বলে তাঁর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন।
ভোটের তিন দফা ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। সোমবার চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ। এখনও পর্যন্ত বিরোধীরা কৃষি সমস্যা, বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, দলিত নিগ্রহের মতো বিষয় নিয়েই সরব। জাতের কথা কেউই তোলেননি। মোদী কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ এড়িয়ে লাগাতার যুদ্ধ-পাকিস্তান-সন্ত্রাস নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে এ বারে যোগ হল জাতের প্রসঙ্গ, যা মোদী নিজেই তুলেছেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শনিবার উত্তরপ্রদেশের কন্নৌজে এক সভায় মোদী বলেছিলেন, ‘‘দেশের মানুষ জানতই না, আমার জাত কী। আমি মায়াবতীজি, অখিলেশজি, কংগ্রেসের লোকদের ধন্যবাদ দিতে চাই আমার জাত নিয়ে আলোচনা করার জন্য। আমি সব থেকে পিছিয়ে পড়া জাতির মানুষ। কিন্তু হাত জোড় করে বলছি, আমাকে এই জাতপাতের রাজনীতিতে টানবেন না। দেশের ১৩০ কোটি মানুষ আমার পরিবার।’’
মায়াবতী গত কালই এ নিয়ে মুখ খুলে বলেছিলেন, ‘‘আমরা তো প্রধানমন্ত্রীকে নীচ বলিনি। উনিই নিজেকে নিচু জাতের বলে পরিচয় দিয়ে ভোট চাইছেন!’’ আজ সরব হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা, তেজস্বী যাদবও। প্রিয়ঙ্কার অভিযোগ, মানুষের মূল সমস্যাগুলি থেকে নজর ঘোরাতে মোদী নিজেকেই রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। রবিবার অমেঠিতে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘আমি তো এখনও জানি না, নরেন্দ্র মোদী কোন জাতের মানুষ। আর বিরোধী বা কংগ্রেসের কেউই তো ওঁর জাতের প্রসঙ্গ তোলেননি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ম্যায় হুঁ মোদীটা কী ধরনের রাষ্ট্রবাদ? রাষ্ট্রবাদের অর্থ কী? দেশভক্তি। দেশ কে? দেশের জনতা। দেশের জনতার জন্য কিছু করেননি। যদি আপনার নিজের প্রতিই এত মোহ, তা হলে এ কেমন রাষ্ট্রবাদ?’’ তার পরেই মোদীকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘‘টাকার জোরে ভিড় জড়ো করে বক্তৃতা করা খুব সহজ। কিন্তু আসল হল মানুষের সমস্যার সমাধান। বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। মানুষের সঙ্গে কথা বললে অন্য কথা শোনা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপির নেতারা সে সব কথা কানে তুলতেই রাজি নন।’’
কংগ্রেস ও বিরোধীরা তাঁর জাত তুলে গালমন্দ করছে বলে এর আগেও অভিযোগ তুলেছেন মোদী। ললিত মোদী, নীরব মোদীর মতো সব মোদীর বিরুদ্ধেই কেন চুরির অভিযোগ, তা নিয়ে কংগ্রেসের কটাক্ষকে হাতিয়ার করে মহারাষ্ট্রের জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনগ্রসর বলেই কংগ্রেস ও তার সঙ্গীরা আমার জাত তুলে গাল দেয়। এ বার ওরা সব গণ্ডি ভেঙে পুরো অনগ্রসর শ্রেণিকে গালি দিয়েছে।’’
জবাবে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেন, ‘‘আমরা নরেন্দ্র মোদীকে উচ্চবর্ণের বলেই বিবেচনা করি। উনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় রাজনৈতিক স্বার্থে নিজের সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকাভুক্ত করেছিলেন।’’ একই অভিযোগ তুলে তেজস্বী যাদবের মন্তব্য, ‘‘মোদীজি জন্মগত ভাবে উচ্চবর্ণের, কাগজে-কলমে নিম্নবর্ণের!’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আগেই বলেছিলাম, মোদী ভোট টানতে নিজেকে সব থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির বলে তুলে ধরবেন। উনি কন্নৌজে ঠিক সেটাই করেছেন।’’
গুজরাতে ঘাঞ্চী তেলি পরিবারে জন্ম নরেন্দ্র মোদীর। এটি বর্ধিষ্ণু এবং ধনী সম্প্রদায় বলেই পরিচিত ছিল। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের তালিকাভুক্তও ছিল না। কিন্তু মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ঘাঞ্চী তেলিকে ওবিসি বলে ঘোষণা করেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগেও নিজের জাত নিয়ে রাজনীতি করেছিলেন মোদী। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীই প্রথম ব্যক্তি, যিনি নিজের জাত নিয়ে প্রচার করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। নিজেকে ওবিসি বলে তুলে ধরেছেন। এখন বলছেন, উনি জাতপাতের রাজনীতি করেন না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কী ভাবেন? বোকার দল, যাঁদের স্মৃতি লোপ পেয়েছে?’’ জবাবে মোদীর অন্যতম সেনাপতি অরুণ জেটলির দাবি, ‘‘মোদী কখনওই জাতের রাজনীতি করেন না।’’
লোকসভা ভোটের প্রচারে মোদী নিজেই নিজের জাত টেনে আনায় ফেসবুক-টুইটারে খোঁজ পড়েছে মণিশঙ্কর আইয়ারের। এ বারের ভোটে তিনি কোথায়? অনেকে কটাক্ষ করেছেন, বালাকোটে বায়ুসেনার হানায় তিনিও নিহত হলেন না কি! আইয়ার এ সবের জবাবে জানিয়েছেন, তিনি বেঁচেবর্তেই রয়েছেন। দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করছেন। বিজেপি নেতারা তামিল জানেন না বলে তাঁর খোঁজ পাচ্ছেন না।