তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ দলীয় কর্মীদের গণনার টেবিল ছাড়া চলবে না। বিজেপি নির্বাচন কমিশনের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গণনাকেন্দ্রগুলির বাইরে গোলমাল করার চেষ্টা হবে। এমনই এক আবহে আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভোট গোনা শুরু। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাত জেগে ইভিএম পাহারা এবং গণনার টেবিলে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার নির্দেশ জারি করেছেন। একই নির্দেশ দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও।
বুধবার সারা দিন বিভিন্ন দলের নেতা ও প্রার্থীরা গণনা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। কেউ কেউ আবার টেনশন কাটাতে দিনটি কাটান হাল্কা মেজাজে। মমতা অবশ্য গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন বিরোধী নেতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও তাঁর কথা হয়। বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষায় নরেন্দ্র মোদীর ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখানোর পরেই ইভিএম কারচুপির অভিযোগ আরও জোরদার করেছে বিরোধীরা। তৃণমূল নেত্রী এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। পরে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা-সহ বিরোধী দলগুলির শীর্ষ নেতারাও সকলেই রাত জেগে ইভিএম পাহারা এবং গণনার টেবিলে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার নির্দেশ জারি করেন।
এই রাজ্যে অবশ্য সেই রাত-পাহারা কয়েক দিন ধরেই চলছে। তবে শুধু বিরোধীরাই নয়, এমন পাহারা দিচ্ছে বিজেপিও। তবে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘গণনাকেন্দ্রের বাইরে ইভিএম পাহারার নামে যে ভাবে তৃণমূল লোক জড়ো করছে, তাতে আমাদের আশঙ্কা চূড়ান্ত গোলমাল হবে।’’ এর জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বিজেপিই তো চায় ইভিএম পাল্টে দিতে। ইভিএম হ্যাক করতে। সে সব করতে পারছে না বলে রাগে এ সব বলছে। তৃণমূল গোলমাল করবে কেন?’’ সিপিএমের কর্মীদের প্রতি সূর্যবাবুর আবেদন, ‘‘দুই দলের নেতারা মাঝে মাঝেই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন। প্ররোচনা তৈরি হচ্ছে। গণনার সময়ে যাতে কোনও রকম গোলমাল না হয়, তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আসানসোলে স্ট্রং রুম পাহারায় বসেছে তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি। বিজেপি নেতারা জানান, ভোট গ্রহণের পর থেকেই স্ট্রং রুমের দরজায় তাঁদের দু’জন করে কর্মী পাহারায় রয়েছেন। গণনাকেন্দ্রের অদূরে তাঁবু খাটিয়ে বসেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সিপিএমও স্ট্রং রুমের দরজায় পাহারায় রয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে ইউআইটি এবং এমবিসি পলিটেকনিক কলেজে ভোটগণনাকেন্দ্রের সামনে পাহারায় রয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। বুধবার বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের স্ট্রং রুম, পলিটেকনিক কলেজে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি মনিটরে ফুটছে না বলে তৃণমূল অভিযোগ করেছে।
চূড়ান্ত ফল তো বটেই, প্রবণতা আসতেও এ বার কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে বলে রাজনৈতিক দলগুলি মনে করছে। কারণ, ইভিএমের ভোট গোনার সঙ্গে নির্দিষ্ট সংখ্যক বুথের ভিভিপ্যাটের স্লিপ গোনা হবে এ বার। তৃণমূল নেত্রী এ দিন ফের দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ফলপ্রকাশের সময়ে যদি দেখা যায় বিজেপির ভাল ফলের খবরগুলি আগে আসছে, তা হলে ভেঙে পড়ার কারণ নেই। ইচ্ছাকৃত ভাবেই এগুলি আগে প্রচার করা হবে।’’ রাজ্যে তো বটেই, দেশেও বিজেপি যে ‘ভাল ফল’ করবে না এবং নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় ফিরবেন না, এই দাবিতে তৃণমূল নেত্রী এখনও অটল। অন্য দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আর তো কয়েক ঘণ্টা! এখনই এত উদ্বেল কেন?’’