পিতা-পুত্র। সংসদে সেই আলিঙ্গন(ডান দিকে।। ফাইল চিত্র
নরেন্দ্র মোদীর প্রতিপক্ষ নেতা রাহুল গাঁধী। কিন্তু ভোটে কাদা ছুড়তে গিয়ে প্রতিপক্ষ নেতার পরিবারের প্রয়াত ব্যক্তিকেও ছাড়লেন না প্রধানমন্ত্রী। জবাবে মোদীর ‘কর্মফল’ স্মরণ করিয়ে ‘বিশাল আলিঙ্গন’ ফিরিয়ে দিলেন রাহুল গাঁধী।
কয়েক মাস আগে সংসদে এ ভাবেই যখন রাজীব গাঁধী ও তাঁর পরিবারের একের পর এক সদস্যের উদ্দেশে কাদা ছুড়ছিলেন মোদী, রাহুল সটান গিয়ে তাঁকে আলিঙ্গন করেছিলেন। এ বারের আলিঙ্গনটি অবশ্য দিলেন টুইটে। সদ্য গত কালই একটি ভোটসভায় নাম না করে রাহুলকে বিঁধে মোদী বলেছেন, ‘‘আপনার বাবার পারিষদেরা তাঁকে ‘মিস্টার ক্লিন’ বলত। কিন্তু দেখতে দেখতে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান’ হয়ে তাঁর জীবনকাল শেষ হয়ে গিয়েছে। নামদার, এই দেশ ভুল মাফ করে। ধোঁকাবাজদের নয়।’’
জঙ্গি হানায় নিহত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খোদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে হতবাক অনেকেই। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘১৯৯১ সালে যে রাজীব গাঁধী প্রয়াত হয়েছেন, তাঁর ভাবমূর্তি এ ভাবে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে শালীনতার সব মাত্রা ছাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কি ভুলে গিয়েছেন, আদালতে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন রাজীব গাঁধী? এমনকি পূর্বতন বিজেপি সরকারও সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে কোনও আবেদন দায়ের করেনি?’’ মোদীর মন্তব্য ঘিরে ক্ষোভে ফুঁসছে কংগ্রেস। তারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে। অন্য দলগুলিও ক্ষুব্ধ। সোশ্যাল মিডিয়াও ভাসছে রাজীব-আবেগে। কংগ্রেসের নেতারাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন এ প্রসঙ্গে মোদীর সঙ্গে অটলবিহারী বাজপেয়ীর ফারাক। এক সময় অটলের কিডনির চিকিৎসার জন্য নিজে উদ্যোগী হয়ে তাঁকে আমেরিকায় পাঠিয়েছিলেন রাজীব। সেই প্রসঙ্গ তুলে অটল বলেছিলেন, ‘‘রাজীব গাঁধীর জন্যই আমি আজও জীবিত।’’ এর আগে একবার সনিয়া গাঁধীকে ‘কংগ্রেসের বিধবা’ বলার অভিযোগ উঠেছিল মোদীর বিরুদ্ধে। কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করকে (তখনও সুনন্দা জীবিত) ‘৫০ কোটির বান্ধবী’ বলেছিলেন।
মোদীর মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে রাজীব-কন্যা প্রিয়ঙ্কা আজ টুইট করলেন, ‘‘শহিদের নামে ভোট চেয়ে তাঁদের বলিদানকে অপমানিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বারে আর একজন ভাল মানুষের বলিদানকেও অপমান করলেন। জবাব অমেঠীর জনতা দেবেন, যাঁদের জন্য রাজীব গাঁধী নিজের জীবন দিয়েছেন। সত্যিই মোদীজি এই দেশ ধোঁকাবাজদের কখনও মাফ করে না।’’
প্রিয়ঙ্কা যতটা ক্ষোভ দেখালেন, রাহুল ততটাই পরিমার্জিত। সংসদে মোদীকে আলিঙ্গনের পরেও রাহুল বলেছিলেন, ‘‘আমার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মুখে একের পর এক কথা শুনে মনে হচ্ছিল, এই মানুষটির মনে ঘৃণা ও ক্রোধ ভরা আছে। কোনও দিন ভালবাসা পাননি। কিন্তু আমার মনে ওঁর জন্য ঘৃণা নেই, তাই আলিঙ্গন করে ওঁকে ভালবাসা দিলাম।’’ আজ ঠিক সেই পথেই রাহুল টুইট করলেন, ‘‘মোদীজি, লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছে। আপনার কর্মফল অপেক্ষা করছে। নিজের সম্পর্কে আপনার ভিতরের বিশ্বাস আমার বাবার উপরে চাপিয়েও পার পাবেন না। আপনার জন্য আমার সব ভালবাসা রইল এবং একটি বিশাল আলিঙ্গন। রাহুল।’’
রাহুলের জবাবে হতচকিত বিজেপি। অস্বস্তির আরও বড় কারণ, ভোটেও এ বারে রাজীব-আবেগকে অস্ত্র করছে কংগ্রেস। অন্য বিরোধী দলের নেতারাও রাজীব-সম্পর্কে মোদীর কুকথার প্রতিবাদে নেমেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ টুইট করেন, ‘‘রাজীব গাঁধী সম্পর্কে ‘এক্সপায়ারি বাবু’ মোদীজি যে মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাজীবজি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন, দেশের জন্য প্রাণও দিয়েছেন। এই ভাষা ও স্পর্ধার নিন্দা করি।’’ তেজস্বী যাদব থেকে অখিলেশ যাদব, সকলেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন। ক্ষত মেরামত করতে গিয়ে বিজেপি উল্টে সুর চড়াল রাজীবের বিরুদ্ধেই। মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বফর্সের পাশাপাশি শিখ দাঙ্গা, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তুললেন। অরুণ জেটলিও টুইটে বফর্স-কাণ্ডের কাত্রোচ্চির প্রসঙ্গ টেনে রাজীবকেই আক্রমণ করলেন।