কেরলেও কি প্রার্থী কংগ্রেস সভাপতি

উত্তর ভারতের পাশাপাশি নিজেকে দক্ষিণ ভারতেরও নেতা হিসেবে তুলে ধরতে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বার বারাণসীর পাশাপাশি দক্ষিণের কোনও রাজ্য থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে জল্পনা চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫৯
Share:

রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

শুধু অমেঠী নয়। কেরলের ওয়ানাড় লোকসভা কেন্দ্র থেকেও রাহুল গাঁধী প্রার্থী হতে পারেন বলে জল্পনা উস্কে দিল কংগ্রেস।

Advertisement

কেরল কংগ্রেসের প্রস্তাব, রাজ্যের ওয়ানাড় লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হোন দলের সভাপতি। দিল্লিতে এআইসিসি জানিয়েছে, শুধু কেরল নয়, কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু থেকেও এমন প্রস্তাব এসেছে। রাহুল গাঁধী বিষয়টি বিবেচনা করছেন। তবে কেরল কংগ্রেসের সভাপতি মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রনের দাবি, প্রথমে অনিচ্ছুক হলেও রাহুল গাঁধী তাঁদের প্রস্তাবে রাজি হন। কিন্তু এআইসিসি-র মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার দাবি, এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

উত্তর ভারতের পাশাপাশি নিজেকে দক্ষিণ ভারতেরও নেতা হিসেবে তুলে ধরতে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বার বারাণসীর পাশাপাশি দক্ষিণের কোনও রাজ্য থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে জল্পনা চলছে। তাতে দ্রাবিড়ভূমিতে বিজেপির ফল ভাল হতে পারে বলে বিজেপি নেতাদের আশা। কিন্তু রাহুল দ্বিতীয় কোনও আসনে লড়তে পারেন শুনেই বিজেপির অভিযোগ, অমেঠীতে জয় নিশ্চিত নয় বুঝেই রাহুল কেরলের নিরাপদ আসন খুঁজছেন।

Advertisement

অমেঠীতে রাহুলের প্রতিদ্বন্দ্বী, বিজেপির স্মৃতি ইরানি আজ ‘#ভাগ রাহুল ভাগ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইটারে কটাক্ষ করেছেন, ‘অমেঠী তাড়িয়ে দিয়েছে। নানা জায়গা থেকে আমন্ত্রণের নাটক করছেন। রাহুলজি, এ বার সিংহাসন খালি করুন।’ রাহুলের অমেঠীতে ‘বিপদ’ প্রমাণ করতে অমেঠী জেলা কংগ্রেস কমিটির প্রস্তাবও তুলে ধরেছেন স্মৃতি। অমেঠী জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রস্তাব করেছে, দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী রাহুল অমেঠীর পাশাপাশি দক্ষিণের রাজ্যের নেতাদের প্রস্তাবও গ্রহণ করে দ্বিতীয় আসনে লড়ুন। উনি দু’টি আসনেই বিপুল ভোটে জিতবেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

স্মৃতিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ ও কংগ্রেস প্রার্থী শশী তারুর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদীও দক্ষিণের কোনও রাজ্য থেকে লড়ুন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, উনি তিরুঅনন্তপুরম থেকেই লড়ুন আমার বিরুদ্ধে। কংগ্রেস নেতা সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী দক্ষিণের নেতাদের প্রস্তাব বিবেচনা করবেন ঠিকই। কারণ ওঁকে আদর-সম্মান জানানো হচ্ছে। কিন্তু উনি একাধিক বার বলেছেন, অমেঠী ওঁর কর্মভূমি ছিল ও থাকবে।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অতীতে ইন্দিরা এবং সনিয়া গাঁধীও পারিবারিক দুর্গ হিসেবে পরিচিত আসনের পাশাপাশি দক্ষিণের রাজ্য থেকে ভোটে লড়েছেন। ১৯৭৮-এ চিকমাগালুর উপনির্বাচনে জয়ের হাত ধরেই ইন্দিরা গাঁধীর রাজনৈতিক কেরিয়ার নতুন মোড় নেয়। ১৯৮০-তে রায়বরেলীর পাশাপাশি অন্ধ্রের মেডক থেকেও জিতেছিলেন ইন্দিরা। ১৯৯৯-তে একই ভাবে সনিয়া গাঁধী অমেঠীর পাশাপাশি কর্নাটকের বল্লারি থেকে লড়েছিলেন। কেরলের মতো তামিলনাড়ুর কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, রাহুল তাঁদের রাজ্য থেকে লড়লে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ ভারত জোড়ার কাজ করবেন। এআইসিসি নেতারা বলছেন, কেরলের পাশাপাশি তামিলনাড়ু, কর্নাটকের নেতাদের প্রস্তাবও খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত হবে।

বাম দুর্গ কেরলে রাহুল গাঁধীর প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবে খুশি হতে পারেননি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ওয়ানাড় আসন এবং কেরলে কংগ্রেসের মূল লড়াই বামেদের সঙ্গে, বিজেপির বিরুদ্ধে নয়। তিনি বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী এখানে বিজেপির সঙ্গে লড়তে আসছেন না, বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়তে আসছেন।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কেরলে গিয়ে বিজেপির পাশাপাশি বামেদেরও এক হাত নিয়েছেন রাহুল। পিনারাই বলেন, ‘‘রাহুলের আগমনে ভোটের লড়াইয়ে প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ভুল বার্তা যাবে যে, বিজেপি নয়, বামেদের বিরুদ্ধেই লড়ছে কংগ্রেস। কংগ্রেসকে ভাবতে হবে, তারা দেশকে কী বার্তা দিতে চায়।’’

দশ বছর আগে আসন পুনর্বিন্যাসের পরে গঠিত ওয়ানাড় আসনে ২০০৯-এ কংগ্রেস দেড় লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছিল। ২০১৪-য় কংগ্রেস জিতলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে জয়ের ব্যবধান ২০ হাজারের ঘরে নেমে আসে। এ বারও কংগ্রেসের ওমেন চান্ডির গোষ্ঠীর সঙ্গে রমেশ চেন্নিথালা গোষ্ঠীর মধ্যে এই আসনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বিবাদ ছিল। পরে ওমেন গোষ্ঠীর নেতা টি সিদ্দিকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। ওমেন ও সিদ্দিক জানিয়েছেন, রাহুল রাজি হলে আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। উত্তর কেরলের ওয়ানাড় লোকসভা আসনটি কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু লাগোয়া। ওই আসনে রাহুলের উপস্থিতি অন্য দুই রাজ্যেও প্রভাব ফেলবে বলে কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি।

এই কেন্দ্রে বিজেপি নিজেদের প্রার্থী দেয়নি। আসনটি তারা ছেড়েছে কেরলে জোটসঙ্গী ‘ভারত ধর্ম জনসেনা’ দলকে। অন্য দিকে এখানে কংগ্রেসের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যে সিপিএমের শরিক সিপিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন