আপন হতে চেয়ে ব্যঙ্গ-বাণে বিদ্ধ

এক সময়ের রুপোলি পর্দার দৃশ্যে অবাধ চলাফেরা ছিল ‘ড্রিম গার্ল’ হেমা মালিনীর। এখন তিনি উত্তরপ্রদেশে মথুরার বিদায়ী বিজেপি সাংসদ।

Advertisement

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৩২
Share:

হেমা মালিনীকে নিয়ে এরই ধরনের মিম ছড়িয়ে পড়েছে।

আমি তোমাদেরই লোক।

Advertisement

ভোটের হাওয়ায় এই বার্তাই দিতে চাইছেন প্রার্থীরা। সেই বার্তা আমজনতার কাছে পৌঁছে দিতে তাঁদের হাতিয়ার নানা দৃশ্য। সোশ্যাল

মিডিয়া সরগরম সেই সব দৃশ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণেই।

Advertisement

এক সময়ের রুপোলি পর্দার দৃশ্যে অবাধ চলাফেরা ছিল ‘ড্রিম গার্ল’ হেমা মালিনীর। এখন তিনি উত্তরপ্রদেশে মথুরার বিদায়ী বিজেপি সাংসদ। আবার জিতে সংসদে যাওয়ার জন্য প্রচার শুরু করেছেন হেমা। সেই প্রচারে গিয়েই হেমা ছবি তুলেছেন

ফসলের খেতে। মহিলা চাষিদের সঙ্গে। নিজেই সেই ছবি শেয়ারও করেছেন টুইটারে। ছবিতে হেমা বোঝাতে চাইছেন, তিনি দূরের নন,

অনেক কাছের।

সোশ্যাল মিডিয়া অবশ্য এত সহজে তা বুঝতে নারাজ! হেমার ছবি ঘিরে হাসির রোল টুইটার-ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে! টুইটারে এক জনের টিপ্পনী, ‘‘গম খেতে কাস্তে হাতে হেমাকে কেন আকাশ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে আমায় কেউ বোঝাবেন?’’ হেমার ট্রাক্টর চালানোর ছবি আর সেই ট্রাক্টরে ঠান্ডা হাওয়ার যন্ত্র দেখে তা নিয়ে

রসিকতা করতে ছাড়েননি জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও। গম খেতে হেমার ছবি দেখে একজনের চাঁচাছোলা প্রশ্ন, ‘‘ড্রিম গার্ল, না ড্রামা গার্ল?’’

সম্বিৎ পাত্রের এই ছবি নিয়েও বিতর্ক বেঁধেছে।

ড্রামা, অর্থাৎ নাটক! ভোটের আগে বাস্তবের রোদ-ঘামের কাছে রাজনীতিকদের ছুটে আসাকে নাটকই মনে হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার অনেকের। কিন্তু সত্যিই কি এগুলোকে নাটক বলা যায়? এ ক্ষেত্রে অবশ্য ‌নাটক শব্দটার ব্যবহার নিয়েই আপত্তি করছেন নাট্য-ব্যক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘নাটক জীবনের গভীর, গোপন সত্যিকে তুলে ধরে। এ ক্ষেত্রে তো তা হচ্ছে না। তাই এ সব ক্ষেত্রে নাটক শব্দটার

ব্যবহার হলেও, তা ঠিক নয়। সমালোচকেরা বলতে পারেন তাঁরা অভিনয় করছেন।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অভিনয় হেমার পেশা ছিল। ওড়িশার পুরী থেকে তাঁর দলের প্রার্থী, সম্বিৎ পাত্র পেশায় চিকিৎসক। তাঁর প্রচারের ছবিকেও বিঁধেছে ব্যঙ্গ-বাণ। সম্বিৎ টুইটারে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন, যাতে দেখা যাচ্ছে তিনি একটি মাটির বাড়ির দাওয়ায় খেতে বসেছেন। পাশেই রান্না হচ্ছে কাঠের উনুনে। সেই ছবি হাতিয়ার করেই টুইটারে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, মোদী সরকারের উজ্জ্বলা যোজনার রান্নার গ্যাস কোথায়? কাঠের উনুনে রান্না হচ্ছে কেন? কাঠকুটো কুড়িয়ে ফেরা এক মহিলার সঙ্গে হেমার ছবি নিয়েও একই প্রশ্ন ওঠে।

প্রশ্ন তুলতে অবশ্য আসল ছবিই নয়, ভুয়ো ছবিও ব্যবহার হচ্ছে। উজ্জ্বলা যোজনা নিয়ে সম্বিতকে বিঁধতে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাতিয়ার হয় এক পুরুষ ও এক মহিলার সঙ্গে সম্বিতের রাস্তায় বসে খাওয়ার একটি ছবি। সেখানে দেখা যায় রাস্তার এক পাশে কাঠকুটো দিয়ে রান্না হচ্ছে। পরে অবশ্য জানা যায়, রাস্তায় রান্না করা ওই পুরুষ-মহিলার ছবিটি ঠিক হলেও সম্বিত ওখানে হাজির ছিলেন না।

হাজির হয়েছিলেন শশী। বিয়েবাড়িতে। আমন্ত্রণ না থাকা সত্ত্বেও। কারণ, সেই ভোট! কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী অবশ্য নিজে টুইটারে স্বীকারও করেছেন তা। বর-কনের সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে টুইটারে শশী লেখেন, ‘‘ভোট কাউকে ছাড়বে না। বর-কনেকেও না। শান্ত মধ্যাহ্নভোজনের

প্রস্তুতির মাঝেই তাঁদের সাংসদ ভোট-প্রচারে হাজির!’’

আপন হতে চাওয়া এই ছবির কোলাজে এ ভাবেই উপস্থিত শাসক-বিরোধী সব পক্ষ। দেবেশ জানাচ্ছেন, কেউ কত কাছের তা বোঝাতে এমন কিছু দৃশ্য, এমন কিছু ঘটনারই প্রয়োজন হয়। তাঁর কথায়, ‘‘নেতানেত্রীদের তাই কখনও দলিতদের পা ধুইয়ে দেওয়া, কখনও ফসলের খেতে

নেমে যাওয়ার ঘটনা দেখা যায়। নাটক নয়, এগুলো আসলে

নাটকের উপাদান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন