প্রতীকী ছবি।
নির্বাচনের সময় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি যেমন থাকে, তেমনই নেতা-কর্মীদেরও দেওয়া হয় নানা উপহার-উপঢৌকনের টোপ। কমিশনের নজরদারি থাকে বটে, কিন্তু সে সব আইনি মারপ্যাঁচের ফাঁক গলে জেতানো বা লিড দেওয়ার জন্য পুরস্কার দেওয়ার নজিরও রয়েছে। আর দলের নেতা-কর্মীদের এই রকম পুরস্কারের তালিকায় উপরের সারিতে রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে এখন রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে আকর্ষণীয় নজরানার হাতছানি। কোনও নেতা দিচ্ছেন নগদ এক কোটি, কেউ ৫০ লাখ, কেউ বা বিদেশ সফরের মতো লোভনীয় বিজ্ঞাপন।
তবে শর্তও আছে। প্রার্থীকে বেশি ভোটের লিড দিতে হবে। লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিধানসভা ভিত্তিক যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি লিড আসবে, সেখানকার নেতাদের দেওয়া হচ্ছে মোটা টাকার অফার। কারও ঘোষণা, লিড যত বেশি হবে, সেই অনুযায়ী উপহারের ডালি হবে তত ভারী।
কেমন সেই অফার? যেমন তামিলনাড়ুর আরাক্কোনম কেন্দ্রের ডিএমকে প্রার্থী এস জগৎরক্ষাণন। তিনি কোনও রাখঢাক না করেই দলের নেতা-কর্মীদের জন্য নগদ এক কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। ভেল্লোর কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন ডিএমকে-র কোষাধ্যক্ষ এস দুরাইমুরুগানের ছেলে কাথির আনন্দ। ছেলেকে জেতাতে দুরাইমুরুগান পুরস্কার দেবেন ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ যে বিধানসভা এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি লিড পাবেন, সেখানকার নেতারা ওই টাকা পাবেন। কম যান না তাঁরই প্রতিপক্ষ ভেলোর কেন্দ্রের এআইএডিএমকে প্রার্থী এসি সন্মুগম। তাঁর ঝুলি থেকে আবার বেরিয়েছে একাধিক পুরস্কার। তালিকায় রয়েছে ছ’টি বুলেট বাইক, দেশে এবং বিদেশে থাকা খাওয়ার খরচ-সহ বেড়ানোর টিকিট।
আরও পড়ুন: অমেঠির সঙ্গে কেরলের ওয়ানাড কেন্দ্রেও প্রার্থী হচ্ছেন রাহুল, ঘোষণা কংগ্রেসের
আরও পডু়ন: রামদাসের শোকগাথাই সার, আলো পড়ে না তেলঙ্গ টাকলির মুখে
দুই দলই বলছে, ঘোষণার পর থেকেই দলীয় কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নিজের দলের প্রার্থীকে জেতাতে। কারণ লিড যত বেশি হবে, উপহারের বহরও তত বড় হবে। আর কপাল খুললে প্রার্থীর খরচে ঘুরে আসতে পারবেন বিদেশেও। তবে শর্ত একটাই, শুধু লিড বেশি হলেই হবে না, প্রার্থীকে জিততেও হবে। সব মিলিয়ে দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
সাড়া অবশ্য নির্বাচন কমিশনেও পড়েছে। এই প্রার্থীদের উপর কড়া নজর রেখেছে নির্বাচন কমিশন। ভেলোরের নির্বাচনী আধিকারিকের মাধ্যমে খবর পেয়ে শনিবারই কাথির কাটপাডি এলাকার বসভবনে যান কমিশনের আয়কর দফতরের কর্মী-অফিসরারা। বাড়ির পাশাপাশি কাথির মালিকানাধীন একটি স্কুল এবং তাঁর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর বাড়িতেও তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। কমিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই অভিযানে মোট ১৯ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু হলফনামায় কাথির জানিয়েছিলেন, তাঁর হাতে নগদ ৯ লক্ষ টাকা রয়েছে। সেই কারণেই বাকি ১০ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই প্রবণতা চালু করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আরাক্কোনম কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের ডিএমকে প্রার্থী এস জগৎকৃষ্ণন। তিনি এক সময় ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের মোট ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি লিড পাবেন, সেই বিধানসভার নেতাকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেবেন। তার পর নানা সময়েই দলীয় নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যেই এই রকম প্রতিযোগিতার মানসিকতা তৈরি করে বিভিন্ন দল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রতিযোগিতার কথা বলছেন দুরাইমুরুগানও। নিজের বা তাঁরই দলের জগৎরক্ষাণনের ঘোষণার মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছেন না। তাঁর মতে, ভোটে দলীয় কর্মীদের জন্য এই ইনসেন্টিভ আসলে ক্লাসের ফার্স্ট বয়কে পুরস্কৃত করার মতো। দুরাইমুরুগান বলেন, ‘‘এই নগদ টাকা দলের কর্মীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার বাতাবরণ তৈরি করবে। একই সঙ্গে প্রার্থীর জয় পাওয়াও সহজ হবে।”
নজির অবশ্য এ রাজ্যেও রয়েছে। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে প্রায় এই রকমই ঘোষণা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছিলেন, বিরোধী শূন্য হলেই সেই পঞ্চায়েতকে ৫ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হবে। আবার অতি সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছেন আসানসোলের মেয়র তথা তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এই লোকসভা ভোটেই তিনি ঘোষণা করেছেন, কাউন্সিলরদের যাঁরা বেশি লিড দিতে পারবেন, তাঁদের জন্য পুরস্কার থাকবে এবং একই ভাবে খারাপ পারফরম্যান্স করলে তার জন্যও থাকবে শাস্তির ব্যবস্থা। তার জেরে নির্বাচন কমিশন তাঁকে শো কজও করে।