বারাণসীতে প্রচারে তেজবাহাদুর যাদব (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র
জওয়ানদের দেওয়া খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাতারাতি সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। তাঁর সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। অনুশাসনহীনতার অভিযোগে বিএসএফ থেকে বরখাস্ত হতে হয়েছিল তাঁকে। বিএসএফের সেই জওয়ান তেজবাহাদুর যাদব এ বার ভোট-যুদ্ধে। বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি।
অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র প্রতীকে লড়ছেন তেজ বাহাদুর। জওয়ানদের খাদ্যের মান উন্নত করা নিয়ে যে লড়াইয়ের শুরু, তা কি ভোটের পরও মনে থাকবে? মঙ্গলবার প্রচারের মাঝখানে মোবাইল ফোনে এই প্রশ্ন শুনে তেজ থমকালেন। গলায় হাতজোড় করা সুর, ‘‘কী চেয়েছিলাম বলুন, তো! শুধু সরকারকে দেখাতে চেয়েছিলাম— যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিচ্ছেন, তাঁরা সামান্য রুটিই তো শুধু চাইছেন। এই রুটি চাওয়ার চক্করে আমার কুড়ি বছরের ছেলেটাকেও হারিয়ে ফেললাম!’’ গত জানুয়ারিতে তেজের ছেলে রোহিতকে রেওয়াড়ির শান্তি বিহারের বাড়ির বন্ধ ঘরে পিস্তল হাতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, রোহিত আত্মহত্যা করেছেন। প্রসঙ্গত, সে সময়েই তেজ বহিষ্কৃত হন।
বিএসএফের প্রাক্তন জওয়ানের দাবি, এত কিছুর পরও মানুষ তাঁর পাশে থাকবেন। ‘‘মোদীর কথায় প্রভাবিত হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েছিলাম। বদলে কী পেলাম?’’ ক্ষোভ ঝরে পড়ে তেজের গলায়। প্রাক্তন জওয়ানের অভিযোগ, বিজেপির আইটি সেল তাঁর নামে ফেক প্রোফাইল খুলে এবং ফোটোশপ করা ছবি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জোরকদমে ভোট প্রচারে নেমে পড়েছেন তেজ। প্রচারে করছেন খাকি-রঙা জওয়ানের পোশাক পরে। প্রচারের ব্যস্ততার ফাঁকেই বলেন, ‘‘তিনটি বিষয়ে জোর দিচ্ছি—জওয়ান, কৃষক এবং যুবক সম্প্রদায়। জওয়ান যুদ্ধ করতে গিয়ে মরছে। চাষি খেতে চাষ করে না খেয়ে মরছে। দেশের যুব সম্প্রদায় বেকারত্বে ভুগছে।’’
এসপির হয়ে ভোটে কেন? তেজের উত্তর, ‘‘এই দলের নীতির সঙ্গে আমার মানসিকতা, ভাবনা মেলে। দলের প্রধান, তাঁর বাবা সকলেই জওয়ানদের শ্রদ্ধা করেন।’’ অখিলেশ মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এই ফৌজি বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নিচ্ছেন।’’
এ বার তো গায়ে রাজনীতির রং লাগল। যাঁরা ‘বিদ্রোহী’ জওয়ান তেজের অনুগ্রাহী ছিলেন, তাঁরা কি ততটা সমর্থন করবেন? তেজের যুক্তি, ‘‘ফ্যান-ফলোয়ার দিয়ে ভোটে জেতা যায় না। রাজনীতি করতে গেলে মাটিতে নেমে কাজ করা ক্যাডার লাগে। সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়ে দলীয় কর্মীদের সাহায্য পেয়েছি। তাঁরা মানুষের জন্য কাজ করছেন, আমায় সাধারণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।’’
তার মধ্যেই তাঁকে নোটিস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে কমিশন জানায়, ‘দুর্নীতি বা রাষ্ট্রের প্রতি অকৃতজ্ঞতা’র কারণে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের বরখাস্ত হওয়া কর্মীরা পাঁচ বছর লোকসভা ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। বুধবারের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে তেজবাহাদুরকে। তার পরেই স্থির হবে তাঁর ভোট-ভাগ্য।