Madras High Court

উচ্ছ্বাসে লাগাম চায় কোর্ট, সংবাদ প্রকাশ বন্ধ চেয়ে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন

সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে তা দেখার পরামর্শ দিয়েছে হাই কোর্ট।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

চেন্নাই শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২১ ০৬:৩৫
Share:

মাদ্রাজ হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

নির্বাচন কমিশনের ‘একটা মান-সম্মান আছে’। এই যুক্তি তুলে তাদের বিরুদ্ধে করা বিচারপতিদের মৌখিক মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ যাতে সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ না-করতে পারে, মাদ্রাজ হাই কোর্টের কাছে সেই নির্দেশ চেয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী। কিন্তু বার বার বিষয়টি নিয়ে চাপাচাপি করার পরেও হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বেঞ্চ এমন কোনও নির্দেশ দেননি। গণনাকেন্দ্রে কী ভাবে কোভিড-বিধি মেনে চলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট দেখে অবশ্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুই বিচারপতির বেঞ্চ। ২ ও ৩ মে যাতে কোনও বিজয় মিছিল বা সমাবেশ না-করা হয়, কোনও কর্মী যাতে বাজি ফাটিয়ে আনন্দ প্রকাশ না-করেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে তা দেখার পরামর্শ দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে কোভিডের এই পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রকে এ দিন তুলোধোনা করেছেন দুই বিচারপতি।

Advertisement

সোমবার একটি মামলার শুনানির সময়ে কোভিডের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনকে একক ভাবে দায়ী করে নজিরবিহীন আক্রমণাত্মক সব মন্তব্য করেন মাদ্রাজ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতি বলেছিলেন, “কোভিড সংক্রমণ এমন ভয়ানক আকার ধারণ করার পরেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় যখন অতিমারি বিধির তোয়াক্কা না-করে মিছিল, রোড শো, জনসভা হচ্ছিল, কমিশনের কর্তারা কি দেশের বাইরে ছিলেন?” দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য কমিশনের অফিসারদের বিরুদ্ধে মানুষ খুনের মামলা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন প্রধান বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যবেক্ষণে তিনি বলেছিলেন, “মানুষ বেঁচে থাকলে তবে তো গণতান্ত্রিক অধিকার উপভোগ করবে। জনস্বাস্থ্য যে সবার উপরে, নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থাকে সে কথা মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক।”

কমিশনের আইনজীবী রাজেশ দ্বিবেদী এ দিন বলেন, হাই কোর্টের এই সব পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের মান-সম্মান নষ্ট করছে সংবাদ মাধ্যম। বিচারপতিদের মৌখিক পর্যবেক্ষণ বা বিরূপ মন্তব্য এর পরে আর যাতে প্রকাশ না-করা যায়, সংবাদ মাধ্যমকে সেই নির্দেশ দিন বিচারপতিরা। শুনানির মধ্যে একাধিক বার এই আবেদন করে গিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি এস রামমূর্তির বেঞ্চ কমিশনের আর্জিতে সাড়া দেয়নি।

Advertisement

রবিবার গণনার সময়ে কোভিড বিধি বাস্তবায়নের কী পরিকল্পনা কমিশন নিয়েছে, শুক্রবারের মধ্যে তা আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়ে প্রধান বিচারপতি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন— রিপোর্ট সন্তোষজনক না-হলে রবিবারের ভোট গণনা বন্ধ করে দেওয়া হবে। নির্দেশ মেনে কমিশন এ দিন যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল, খতিয়ে দেখে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই বিচারপতি। তবে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষকে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিচারপতিরা। রবি এবং সোমবার কোনও বিজয় মিছিল বা সমাবেশ না-করার কথা বলার পাশাপাশি বাজি ফাটিয়ে আনন্দ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতেও বলেছেন। এ জন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে কর্মীদের সংযত রাখার দায়িত্ব দিয়েছেন বিচারপতিরা।

আবার কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল আর শঙ্করনারায়ণ আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এমন মারাত্মক ভাবে আসতে পারে, এটা সরকারের ধারণার বাইরে ছিল। প্রধান বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় তখন তুলোধনা করেন কেন্দ্রকে। জানতে চান, কোনও বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে এগিয়েছে কি সরকার? এত দিন তারা কী করেছে? প্রধান বিচারপতি বলেন, “কাউকে অশ্রদ্ধা না-করেই বলছি, কোনও চিকিৎসক কখনও বলবেন না যে সতর্ক থাকার দিন শেষ। অতিমারি নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হয়, স্বল্প মেয়াদি পদক্ষেপ করে লাভ হয় না। আর টানা প্রায় বছর খানেক লকডাউন করার পরেও কোন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা রয়েছি, এক বার তাকিয়ে দেখুন। ১০-১৫ মাস কী করছিল কেন্দ্র?” জবাবে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল বলেন, জানুয়ারিতে করোনা পরিস্থিতি প্রায় সহনশীল জায়গাতেই চলে এসেছিল। সরকার ভেবেছিল, বিষয়টির ইতি ঘটেছে। কিন্তু তার পরে মহারাষ্ট্র ও কেরলে হঠাৎ হুড়মুড় করে সংক্রমণ বাড়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে। এর পরে গোটা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন