পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রুজ মিসাইলগুলির অন্যতম এই ব্রহ্মস। ছবি: সংগৃহীত।
চিনের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকাঠামোয় আঘাত হানতে পারবে পারবে ভারতের ব্রহ্মস। সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটির সাম্প্রতিকতম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। খবর দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও সূত্রের। ২৯০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে সম্প্রতি ৪৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে ব্রহ্মসের পাল্লা। আগের চেয়ে দীর্ঘ পাল্লার এই ব্রহ্মসও আগের মতোই নিখুঁত ভাবে আঘাত হেনেছে লক্ষ্যবস্তুতে। তাতেই উল্লসিত ডিআরডিও। ব্রহ্মসের পাল্লা এ বার আরও বাড়িয়ে ৮০০ কিলোমিটার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে খবর।
ভারতকে বরাবরই নিজেদের প্রতিপক্ষ মনে করে চিন। সেই কারণেই ১৯৬২ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছিল তারা, মত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। সেই যুদ্ধের পর সাড়ে পাঁচ দশক কেটে গিয়েছে। দু’পক্ষই নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে এই সুদীর্ঘ সময়ে। ভারতের কথা মাথায় রেখে দক্ষিণ চিন এবং দক্ষিণ পশ্চিম চিনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে বেজিং। সে সব পরিকাঠামো ভারতের বিভিন্ন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এ বার দেশের সেরা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মসকেও চিনের গভীরে আঘাত হানার উপযুক্ত করে তুলতে চাইছে ভারত। খবর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের।
ভারতীয় বাহিনীর অস্ত্রাগারে ব্রহ্মসের অন্তর্ভুক্তি চিনের অস্বস্তি আগেই বাড়িয়েছিল। এ বার আরও বাড়বে উদ্বেগ, মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। —ফাইল চিত্র।
ভারত-রুশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মস শুধু ভারত বা রাশিয়ার সেরা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নয়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, এটি পৃথিবীর সেরা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। আগে ২৯০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছিল ব্রহ্মসের পাল্লা। কিন্তু ভারত ২০১৬ সালে মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম বা এমটিসিআর-এর সদস্য হয়ে যাওয়ার পর ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণা ও ব্যবসা সংক্রান্ত অনেক বিষয় ভারতের কাছে আগের চেয়ে সহজ হয়ে গিয়েছে। ব্রহ্মসের পাল্লা ২৯০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ কিলোমিটার করতে আর বাধার মুখে পড়তে হয়নি ভারতকে। বর্ধিত পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্প্রতি পরীক্ষামূলক ভাবে ছুড়েছে ভারত। শব্দের চেয়ে প্রায় তিন গুণ দ্রুতগামী এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত করেছে।
আরও পড়ুন: গিলগিট-বাল্টিস্তান ভারতের, পাক দখলদারি অবৈধ: ব্রিটিশ পার্লামেন্ট
ডিআরডিও সূত্রের খবর, পাল্লা বাড়ানোর জন্য ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আনার দরকার পড়েনি। আগের চেয়ে বেশি জ্বালানি বহনের ব্যবস্থা করতে ক্ষেপণাস্ত্রটির হার্ডওয়্যারে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাল্লা বাড়ানোর জন্য সফটওয়্যারেও কিছু অদল-বদল ঘটানো হয়েছে। তাতেই ৪৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে ব্রহ্মস। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই প্রক্রিয়ায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানার যোগ্য ব্রহ্মস তৈরি করতেও ভারতের খুব একটা সময় লাগবে না।
৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র যে তৈরি করা হচ্ছে, ডিআরডিও সে কথাও স্বীকার করেছে। ডিআরডিও প্রধান এস ক্রিস্টোফার নিজেই সে কথা জানিয়েছেন বলে একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে। ২০১৯ সালে ৮০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে ভারত, ক্রিস্টোফার এমনই জানিয়েছেন বলে ইংরেজি সংবাদমাধ্যমটির দাবি। শব্দের চেয়ে তিন গুণ দ্রুতগামী হওয়ায় এবং প্রতিপক্ষের রাডার তথা মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা থাকায় ব্রহ্মসকে মাঝপথে রুখে দেওয়া খুব কঠিন। অতএব, ব্রহ্মসের পাল্লা বৃদ্ধি যে চিনের অনেকগুলি সামরিক পরিকাঠামোকেই অনিরাপদ করে তুলবে, সে নিয়ে সংশয় নেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।