লন্ডন সফরের মুখে মমতাকে ‘জিহাদি দিদি’ সম্বোধনে হুমকি ফোন, মেল

প্রাণনাশের হুমকি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জিহাদি-দিদি’ হিসাবে সম্বোধন করে রাজ্যে বিনিয়োগ বন্ধ করার ডাক। সঙ্গে অসংখ্য সমার্থক পোস্টার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন যাওয়ার সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই টেলিফোন এবং ই মেল-এর মাধ্যমে উপরোক্ত হুমকিগুলি চড়া হচ্ছে একটি মার্কিন মোবাইল নম্বর এবং‌ ‘নারায়ণ এস ডি’ নামক এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ই মেল আইডি থেকে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০০:০২
Share:

—ফাইল চিত্র।

প্রাণনাশের হুমকি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জিহাদি-দিদি’ হিসাবে সম্বোধন করে রাজ্যে বিনিয়োগ বন্ধ করার ডাক। সঙ্গে অসংখ্য সমার্থক পোস্টার।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন যাওয়ার সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই টেলিফোন এবং ই মেল-এর মাধ্যমে উপরোক্ত হুমকিগুলি চড়া হচ্ছে একটি মার্কিন মোবাইল নম্বর এবং‌ ‘নারায়ণ এস ডি’ নামক এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ই মেল আইডি থেকে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, গত বেশ কিছু দিন ধরে চলা এই হুমকির প্রেক্ষিতে প্রথমে ৯ জুলাই এবং আজ কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে দু’দফায় এফআইআর দাখিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এফআইআর-এ গোটা হুমকি-কাণ্ডে সন্দেহের তির ‘দক্ষিণপন্থী সংগঠন’ তথা আরএসএস-বিজেপি-র দিকেই নির্দেশিত হয়েছে।

পাশাপাশি, গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে ব্রিটেনে অবস্থিত ভারতীয় দুতাবাসকে। এই হুমকির কথা মাথায় রেখে মমতার সফরে নিরাপত্তা যাতে বাড়ানো হয়, তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দূতাবাস। আগামিকাল দুপুরে লন্ডনগামী বিমানে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী। লন্ডনে তিনি থাকাকালীন যাতে কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা না ঘটে সে দিকে কড়া নজর রাখার ব্যাপারে ভারতীয় দূতাবাসকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ব্রিটিশ প্রশাসন।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছে যার জন্য এতটা উদ্বিগ্ন তৃণমূল তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার?

ঘটনার সূত্রপাত ৯ জুলাই দুপুরে। প্রথমে তৃণমূল সাংসদ সুব্রত বক্সী এবং তার কিছু ক্ষণ পর রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন একই নম্বর থেকে তাঁদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন পান। পরে খোঁজ করে দেখা যায়, যে নম্বরটি থেকে ফোন দু’টি করা হয় সেটি আমেরিকার নিউ জার্সি অঞ্চলের নম্বর। জানা গিয়েছে, লাইনের ওপার থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা ছাড়া হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। তাঁর লন্ডন সফরের সঙ্গে ওই হত্যার হুমকিকে সংযুক্ত করেই কথা বলে অজ্ঞাতপরিতয় ব্যক্তি। তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে তাঁরা জিহাদিদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। নারীপাচারের স্বর্গ হয়ে উঠেছে রাজ্য।

এর পর গত কাল থেকে আজ পর্যন্ত চারটি মেল তৃণমূলের ডেরেক ও ব্রায়েনের কাছে এসেছে। তাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের এনায়েতপুরের নাবালিকার অপহরণের ঘটনার উল্লেখ করে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। বিভিন্ন পোস্টার এবং স্লোগান রয়েছে এই মেলগুলিতে। ‘পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করার অর্থ সন্ত্রাসে বিনিয়োগ করা’, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ বন্ধ করুন’ ‘পশ্চিমবঙ্গে শিশুকন্যাদের বাঁচান’, ‘পশ্চিমবঙ্গ শিশুকন্যাদের অপহরণ ধর্ষণ এবং বিক্রি করার আখড়া’, এমনকী ‘জিহাদি দিদি’-র মতো পোস্টারও মেলগুলির সঙ্গে পাঠানো হয়েছে। ডেরেকের বক্তব্য, গত দু’মাস ধরে গোটা বিশ্বে সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে সাইবার প্রযুক্তি ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। মগরাহাটের ঘটনাটিকেও সাম্প্রদায়িকতার সুর দিয়ে প্রচার চালানো হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন প্রবাসকালে একটি বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

দলের পক্ষ থেকে প্রথম যে এফআইআর-টি করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ‘একটি পুরুষ কণ্ঠ নাগাড়ে কদর্যভাষা ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এবং হিংসাত্মক মন্তব্য করেছে। মগরাহাটের কোনও ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলা হয় যে এর চরম পরিণতির জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এমনকী, খুন করার হুমকিও দেওয়া হয়।’ প্রথমটিতে না করলেও দ্বিতীয় এফআইআর-এ সরাসরি বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের দিকেই আঙুল তুলেছে তৃণমূল। বলা হয়েছে, ‘বিদ্বেষপূর্ণ ওই ই-মেলগুলির বক্তব্য এবং বলার ধরন দেখে এটাই মনে হচ্ছে যে বিজেপি-র সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী আরএসএস-এর মতো উগ্রবাদী দক্ষিণপন্থী সংগঠন এই প্রচার করছে।

মমতার সঙ্গে লন্ডন সফরে যাচ্ছেন ডেরেক। আজ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা যত ঘটবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যয় তত বাড়বে। উনিই আমাদের সাহসী হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।’’ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু লন্ডন নয়, দেশের ভিতরেও কয়েক জন তৃণমূল নেতার নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন