করজোড়ে: সংসদ চত্বরে গাঁধী-মূর্তির সামনে মুখ্যমন্ত্রী। পিটিআই
সকালে লোকসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে তীব্র সংঘাতের জেরে সনিয়া গাঁধীর প্রতি ঘোর উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিকেলে বিরোধীদের ধর্না মঞ্চ হয়ে রাতে রাহুল গাঁধীর উপস্থিতিতে শরদ পওয়ারের বাড়ির দীর্ঘ বৈঠকে সেই ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে গেল।
সকালের উষ্মা যে কিছুটা কমছে তার ইঙ্গিত বিকেলের ধর্নামঞ্চেই দিয়েছিলেন মমতা। জানিয়েছিলেন, রাজ্যে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে লড়াই চললেও কেন্দ্রে বিজেপিকে হটানোর স্বার্থে এককাট্টা হয়ে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত তিনি। আজ সকালে মমতা যখন সেন্ট্রাল হলে পৌঁছন তখন মোদী সরকারের আনা ‘অনিয়ন্ত্রিত অর্থলগ্নি সংস্থা নিষিদ্ধকরণ বিল’ নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী ওয়েলে দাঁড়ানো তৃণমূল নেতাদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন, ‘‘মানুষের টাকা ওঁরাই লুট করেছেন।’’
সেন্ট্রাল হলে এসে গোটা বিষয়টি মমতাকে জানান তাঁর সাংসদেরা। দৃশ্যতই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল নেত্রী। আর ঠিক সেই সময়েই ঢোকেন সনিয়া গাঁধী। মমতার সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ায় তিনি বলেন, ‘‘আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে থাকি। কিন্তু আমরা বন্ধু।’’ মমতা উত্তরে শুধু বলেন, ‘এ দিনটা আমি ভুলব না।’ এরপর তিনি জানান, এ দিন লোকসভায় যা ঘটল তার পরে আর কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না।
দুপুরে কেজরীবালের ধর্না মঞ্চে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা এসে ক্ষত মেরামতির চেষ্টা করেন। তাঁর বক্তৃতায় মমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। আনন্দ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি আজ থেকে না, ৪০ বছর ধরে চিনি। তিনি আমার বোনের মতো। তাঁর নেতৃত্বে ব্রিগেড সম্মেলন এক বিরাট জোটের ইঙ্গিত দিয়েছে। মমতা অত্যন্ত লড়াকু নেত্রী।’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআই-এর ডি রাজা
আজ সমাবেশে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু মমতা আসার ঠিক আগেই মঞ্চত্যাগ করেন।
মমতা তাঁর বক্তৃতায় উপস্থিত প্রায় সব নেতার নাম উল্লেখ করলেও সুকৌশলে উচ্চারণ করেননি কংগ্রেস প্রতিনিধির নাম। বলেছেন, ‘‘যে যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে। বাংলায় আমরাই শক্তিশালী ফলে আমরা লড়ব। বিএসপি-এসপি জোট উত্তরপ্রদেশ এবং পওয়ারজিরা লড়বেন মহারাষ্ট্রে। রাজস্থান মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়ে কংগ্রেস মূল বিজেপি-বিরোধী দল। আমার রাজ্যে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই করার অভ্যাস আমার রয়েছে। ওদের সঙ্গে রাজ্যে জোট করে লাভ হয় না। কারণ, ওদের ভোট ওরা আমাদের হাতে তুলে দেয় না।’’ এর পরেই মমতা বলেন, ‘‘তবে বড় কাজের জন্য ছোট ছোট বলিদান দিতেই হয়। মোদীকে হটিয়ে দেশকে বাঁচাতে রাজ্যে লড়াই থাকলেও আমরা লোকসভা নির্বাচনে এককাট্টা হয়ে লড়ব।’’