স্বাগত: পটনা বিমানবন্দরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
শেষ পর্যন্ত লালুপ্রসাদের ‘বিরোধী-সমাবেশ’ তাবড় নেতারা এড়িয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু যাদব-নেতার পাশেই রইলেন। এবং আগামী কাল গাঁধী ময়দানের বিশাল সমাবেশে যাবতীয় মনোযোগের কেন্দ্রে তিনিই।
বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে জোটবদ্ধ করতে ২৭ অগস্ট গাঁধী ময়দানে বিরোধী ‘কনক্লেভ’-এর আয়োজন গত কয়েক মাস ধরেই করছিলেন আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ। অখিলেশ-মায়াবতীকে যেমন তিনি এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করে গিয়েছেন, তেমনই মমতা-সীতারাম ইয়েচুরিকেও একই বন্ধনীতে বাঁধতে চেয়েছিলেন। মঞ্চে যত না রাহুলকে, তার থেকেও বেশি করে চেয়েছিলেন সনিয়া-প্রিয়ঙ্কাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের জোটবদ্ধ করার সেই সাফল্য তিনি পাচ্ছেন না। রাহুল বিদেশে। শারীরিক কারণে সনিয়াও পটনায় হাজির থাকতে পারছেন না। প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাচ্ছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা গুলাম নবি আজাদকে। আসব বলেও পিছিয়ে গেলেন মায়াবতী। তিনিও প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন। আর সিপিএম-ও লালুকে পথে বসালেন।
এই পরিস্থিতিতে লালুজিকে দেওয়া ‘কথা’ রেখে মমতা আজ সন্ধ্যায় পটনায় পৌঁছন। রাজভবনে রাত্রিবাস করবেন। যদিও পটনার একটি পাঁচতারা হোটেলেও তাঁর জন্য ঘর ‘বুক’ করা ছিল।
তবে জোটবদ্ধ বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের এই ‘বিচ্ছিন্ন’ চেহারায় দৃশ্যতই কিছুটা হতাশ লালুপ্রসাদ। যদিও মুখে তিনি সে কথা স্বীকার করছেন না। বরং আগামী কাল পটনার গাঁধী ময়দানের আরজেডির ‘বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও’ সভা ঐতিহাসিক ভূমিকা নেবে বলেই লালুর দাবি। ১০ সার্কুলার রোডের সরকারি নিবাসে লুঙ্গি ও ফতুয়া পরে বসেই সারাদিন সভার খুঁটিনাটির তদারক করেছেন। নিয়মিত ফোনে নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। খোঁজ রাখছিলেন সমর্থকদের খাওয়ার ব্যবস্থা থেকে বড় নেতাদের আসার সময়সূচি নিয়েও। তারই ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে। এই ব্যবস্থা শেষ করেই ছাড়ব।’’ সভায় দশ লক্ষ সমর্থক হাজির হবেন বলে তাঁর দাবি। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করছেন তাঁরা সকলেই হাজির থাকবেন। এনসিপি সাংসদ তারিক আনোয়ার, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন, জেভিএমের বাবুলাল মারাণ্ডি, এআইইউডিএফের বদরুদ্দিন আজমলরা হাজির থাকবেন বলে আরজেডি নেতৃত্ব জানিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির হওয়ায় বিজেপি-বিরোধী জোটের গুরুত্ব বহুগুণে বাড়বে বলেই মনে করছেন আরজেডি নেতৃত্ব। লালুপ্রসাদ কার্যত এই সভা থেকেই তাঁর উত্তরাধিকারী তেজস্বীকে সামনে আনতে চাইছেন। পটনা শহরের সর্বত্র আরজেডির ব্যানার-পোস্টারে তেজস্বীকেই নেতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলীয় সমর্থকরা পটনায় আসতে শুরু করেছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পটনার গাঁধী ময়দানের নিরাপত্তাও চোখে পড়ার মতো। লালুর সভায় হাজির থাকবেন বলে এ দিন দুপুরে দিল্লি থেকে পটনায় আসেন জেডিইউ নেতা শরদ যাদবও। শরদের বক্তব্য, ‘‘বিরোধী ঐক্য মজবুত করার জন্যই ‘জেডিইউ’ কাজ করবে।’’