মমতার চিঠি, বিল পিছোতে চাপ বিজেপির অন্দরেও

আর্থিক ক্ষেত্রের খসড়া বিলের বিরোধিতায় নাগাড়ে সুর চড়ানোর পরে এ বার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চিঠিও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আর্জি জানালেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৮
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরুণ জেটলি

আর্থিক ক্ষেত্রের খসড়া বিলের বিরোধিতায় নাগাড়ে সুর চড়ানোর পরে এ বার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চিঠিও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আর্জি জানালেন তিনি। আর এরই পাশাপাশি, দিন দুয়েক ধরেই দিল্লির দরবারে জোর গুঞ্জন, দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় তোলা ওই বিল সম্ভবত আসছে না সংসদের চলতি অধিবেশনে। ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে তা বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্র। তার আগে নাকি এ বিষয়ে রিপোর্টও জমা দিতে পারবে না সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

Advertisement

চিঠিতে ওই বিল নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন মমতা। লিখেছেন, ফিনান্সিয়াল রেজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনশিওরেন্স (এফআরডিআই) বিল শেষ পর্যন্ত আইন হলে, তা হবে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক সুরক্ষায় বড় ধাক্কা। তাঁর যুক্তি, সে ক্ষেত্রে দেউলিয়া ঘোষণার মুখে দাঁড়ানো ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আর একশো শতাংশ নিশ্চিত থাকতে পারবেন না সাধারণ মানুষ। ফলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার উপর আমজনতার বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হবে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কিছু লোকের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ কাড়ার বন্দোবস্ত রয়েছে এই বিলে।

খসড়া বিলে প্রস্তাব, কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া ঘোষণার মুখে থাকলে, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা হিসেবে গ্রাহকের আমানতের টাকা তাঁদের অনুমতি না-নিয়েই বাড়তি সময় আটকে রাখতে পারবে তারা। প্রয়োজনে তা বদলে দিতে পারবে শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড ইত্যাদিতে। শনিবার এই বিষয়গুলি নিয়ে চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

আরও পড়ুন: সংসদে দু’পক্ষের সমদূরত্বে তৃণমূল

বর্তমানে কোনও একটি ব্যাঙ্কে কারও যতগুলি অ্যাকাউন্টে যত টাকাই থাকুক, সেই ব্যাঙ্কের ব্যবসা লাটে উঠলে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে ফেরত পাবেন তিনি। কারণ, গ্রাহকপিছু ওই পরিমাণ টাকা বিমা করা থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বাকি টাকার পিছনেও থাকে কেন্দ্রের অলিখিত গ্যারান্টি। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নতুন আইনে এক লক্ষ টাকা ফেরতও অনিশ্চিত হবে? থাকবে না গ্যারান্টি? কর্পোরেটের ঋণ খেলাপের খেসারত দেবেন সাধারণ মানুষ?

বিতর্কের জল এতটাই গড়িয়েছে যে, আশ্বাস দিতে মাঠে নামতে হয়েছে খোদ জেটলি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কেন্দ্রের দাবি, বিমার বন্দোবস্ত নতুন আইনেও থাকবে। তারা বরং তা বাড়ানোর পক্ষপাতী। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গ্যারান্টিও থাকবে আগের মতো। মার যাবে না টাকা।

কিন্তু তার পরেও এক বিজেপি সাংসদ মোদীর সামনেই প্রশ্ন তোলেন এ নিয়ে। বলেন সারা দেশে আশঙ্কা তৈরি হওয়ার কথা। সঙ্গে সঙ্গে জেটলিকে বিষয়টি খোলসা করতে বলেন মোদীও। অর্থাৎ এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শাসক দলের অন্দরেও।

খসড়া বিলে ব্যাঙ্ক-সমেত সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এফআরসি নামে নতুন নিয়ন্ত্রক তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। যার অধিকাংশ সদস্য বাছবে কেন্দ্রই। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, তাতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতা খর্ব হবে। এই অভিযোগ উঠেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি, বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ, এমনকী, স্থায়ী কমিটির মধ্যেও। তাই সব মিলিয়ে, বিতর্কিত বিল আপাতত কিছু দিন হিমঘরে থাকারই সম্ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন