—ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে বুধবার সকালেই প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের (পিএমও) এক কর্মী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সেই প্রস্তাব দেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সবক’টি বিরোধী দলের কাছে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব আসেনি। তাই বিকেলের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, তিনি বা তাঁর দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী নয়। তৃণমূল সূত্রেই এ খবর পাওয়া গিয়েছে।
পিএমও-র এক কর্মী এ দিন সকালে তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন বলে খবর। তিনি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন বলে জানা গিয়েছে। সুদীপ ওই পিএমও কর্মীকে জানিয়ে দেন, নিজের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। দলনেত্রীর সঙ্গে কথা না বলে এ বিষয়ে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না বলেও সুদীপ জানিয়ে দেন। পিএমও-র ওই কর্মীকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, তৃণমূল এখন অন্যান্য বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ তৃণমূল একা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে ভুল বার্তা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আসা প্রস্তাব সম্পর্কে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পর দলনেত্রীকে বিশদে জানান। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদকেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি জানিয়ে রাখেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব অবশ্য কংগ্রেস সহ আরও কয়েকটি দলের কাছে এসেছিল। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার সব বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলতে চান বলে প্রথমে ধারণা তৈরি হয়েছিল। তার পর স্পষ্ট হয় যে কংগ্রেস, তৃণমূল সহ কয়েকটি মাত্র দলের সঙ্গে সরকার কথা বলতে উৎসাহী। এই বিষয়টি বিরোধী শিবির ভাল চোখে দেখেনি। বুধবার বিকেলে গুলাম নবি আজাদ বিষয়টি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। মমতা জানিয়ে দেন, আন্দোলনকারী সব ক’টি দলকে না ডাকা হলে তিনি বা তাঁর দল প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের সঙ্গে কোনও বৈঠকে যাবেন না। যন্তর-মন্তরের ধর্নাস্থল থেকে বেরনোর সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে জানান, গণতন্ত্রে আলোচনার পথ কখনোই বন্ধ হয় না। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে রাজি নই, এমন বলা যায় না। কিন্তু যে দলগুলি নোট বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি মাত্র দলকে নিয়ে সরকার বৈঠক করতে চাইলে, সে প্রস্তাব এই মুহূর্তে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
নোট বাতিলের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁদের উদ্যোগে আজ গোটা বিরোধী পক্ষ ঐক্যবদ্ধ ভাবে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চরমসীমাও দিয়েছিলেন। সেই চরমসীমা শেষ হতেই মমতা দেশজুড়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে দিয়েছেন এবং বুধবার সকাল থেকে সংসদ চত্বরে ১৫টি বিরোধী দলের সাংসদরা সম্মিলিত বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ক্রমশ মোদী সরকার বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন, জাতীয় রাজনীতির গত কয়েক দিনের গতিপ্রকৃতি দেখলেই তা স্পষ্ট। সেই জন্যই নরেন্দ্র মোদী এ বার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তৃণমূলের কথা বলতে চাইছেন বলে রাজনৈতিক শিবির মনে করছে। কংগ্রেস সহ অন্য বিরোধী দলগুলি সংসদে বিক্ষোভ করলেও, মমতার মতো পথে নামেনি তারা। তাই সরকার জানে, তৃণমূলকে শান্ত করতে পারলেই, বিরোধী পক্ষের আক্রমণের ঝাঁঝ অনেকটা কমে যাবে। শুধু তাই নয়, বিরোধী পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া গিয়েছে, এমন বার্তাও বিজেপি চারিয়ে দিতে সক্ষম হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিলেন না। আন্দোলনের ঝাঁঝ যে কমবে না, সে কথা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন। এতে কিছুটা হলেও অস্বস্তি বাড়বে বিজেপির।
আরও পড়ুন: ‘পিছু হঠা মোদীজির রক্তে নেই, পিছু হঠবেন না’ প্রত্যাঘাত বেঙ্কাইয়ার