Cheating Case

সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি! ২০০ টাকা দিয়ে প্রতারিত যুবক, ৩৫ বছর পর অভিযুক্ত ধরা পড়তেই কী করলেন অভিযোগকারী?

অভিযুক্তের নাম বি কেশবমূর্তি। বেঙ্গালুরুতে তিনি সমাজসেবী হিসাবে কাজ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধেই ২০০ টাকা প্রতারণার অভিযোগ তোলেন বৈদ্য।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ১২:৪৫
Share:

সাদা পোশাক পরা অভিযুক্ত সেই ব্যক্তি কেশবমূর্তি (মাঝখানে)। ছবি: সংগৃহীত।

সাল ১৯৯০। এক যুবককে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ২০০ টাকার বিনিময়ে তাঁকে সরকারি চাকরি জুটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। অনেক কষ্টে সেই টাকা জোগাড়ও করেছিলেন যুবক। কিন্তু অভিযোগ, সেই টাকা হাতে পেয়ে বেপাত্তা হয়ে যান ওই ব্যক্তি। তার পর পুলিশে একটি অভিযোগও দায়ের করেছিলেন যুবক। কিন্তু অভিযুক্তের কোনও হদিস মেলেনি। তার পর মামলাটি প্রায় বন্ধ হতে চলেছিল। কিন্তু সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ আধিকারিক পুরনো মামলা ঘেঁটে দেখতেই আবার এই মামলাটি নিয়ে তৎপর হন তিনি। ঘটনাটি কর্নাটকের।

Advertisement

থানা থেকে ফোন পেয়েছিলেন সেই অভিযোগকারী ব্যক্তি। বর্তমানে তিনি এক জন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। পুরনো মামলা সংক্রান্ত ফোন পেয়ে ভেবেছিলেন পুলিশ হয়তো আবার বলবে, অভিযুক্তের কোনও খবর পাওয়া গেল কি না। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই এক বার করে থানা থেকে ফোন করা হত বলে জানিয়েছেন সেই যুবক তথা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী বৈদ্য। সম্প্রতি তাঁকে থানা থেকে আবার ফোন করা হয়। জানানো হয়, যাঁর বিরুদ্ধে ২০০ টাকা প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বেঙ্গালুরু থেকে। কথাটা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি বৈদ্য। এত বছর ধরে যাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল না, সেই ব্যক্তি আবার গ্রেফতার হয়েছেন! যাই হোক, পুলিশের ডাক পেয়ে থানায় হাজির হন বৈদ্য। সেখানে অভিযুক্ত দেখে তিনি চিনতে পারেননি। তাঁর বয়স বর্তমানে ৭২।

অভিযুক্তের নাম বি কেশবমূর্তি। বেঙ্গালুরুতে তিনি সমাজসেবী হিসাবে কাজ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধেই ২০০ টাকা প্রতারণার অভিযোগ তোলেন বৈদ্য। তিনি জানিয়েছেন, সেই সময় অনেক কষ্টে এক পরিচিতের কাছ থেকে টাকা ধার করে কেশবমূর্তিকে বিশ্বাস করে তা দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা পাওয়ার পর থেকে আর কোনও হদিস মেলেনি কেশবমূর্তির। উত্তর কন্ন়ড় জেলার সিরসি গ্রামীণ থানায় সম্প্রতি দায়িত্ব পান মঞ্জুনাথ গৌড়া। তিনি পুরনো মামলা ঘেঁটে দেখছিলেন। তখন তার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো মামলাটি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আর সেই মামলাটি ছিল ২০০ টাকার প্রতারণা। তার পরই অভিযুক্তের তল্লাশিতে নিজের সমস্ত সূত্রকে কাজে লাগান। কেশবমূর্তির আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের কাছ থেকে কেশবের হদিস পান। কিন্তু তিনিই অভিযুক্ত কেশব কি না, তা পরখ করতে বেঙ্গালুরুতে এক পুলিশকর্মীকে পাঠান। সেখানে পৌঁছে ওই পুলিশকর্মী ক্যুরিয়ার ডেলিভারি এজেন্ট সেজে কেশবকে ফোন করেন। আর তা থেকেই নিশ্চিত হন, এই ব্যক্তিই সিরসা থানা এলাকার সেই অভিযুক্ত। তার পরই পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। কেশবমূর্তি সেখানে সমাজসেবী হিসাবে কাজ করতেন।

Advertisement

কেশবমূর্তিকে কর্নাটকে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে আদালতেও তোলা হয়। আদালতে দাঁড়িয়ে বৈদ্যের কাছে তাঁর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। এক সংবাদমাধ্যমকে বৈদ্য আদালতে বলেন, ‘‘১৯৯০ সালে ২০০ টাকার মূল্য অনেক ছিল। সেই টাকা চলে যাওয়ার পর অনেক কেঁদেছি। পরিচিতের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম।’’ বৈদ্য বাণিজ্য বিভাগে স্নাকতোত্তর করে ব্যাঙ্কে চাকরিও পান পরবর্তীতে। বৈদ্য বলেন, ‘’৩৫ বছর আগে ২০০ টাকা আমার কাছে বিশাল বড় বিষয় ছিল। কিন্তু এখন সেই ২০০ টাকার জন্য অভিযুক্তকে জেল খাটাতে চাই না। তাই আদালতে সে কথা জানিয়েছি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও তুলে নিয়েছি। ক্ষমা করে দিয়েছি ওঁকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement