তরুণীকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেলেন মণিপুরী ছাত্র

এ বছরের গোড়ায় শুরু। দিল্লিতে জাতি-বিদ্বেষের জেরে খুন হতে হয় অরুণাচলপ্রদেশের ছাত্র নিদো তানিয়াকে। তা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হলেও উত্তর-পূর্বের মানুষের উপরে নিগ্রহের ঘটনা কিন্তু বন্ধ হয়নি। তার প্রমাণ ফের মিলল বেঙ্গালুরুতে। গত কাল সন্ধেয় এখানকার কোঠানুরের রাস্তায় এক তরুণীকে উত্যক্ত করছিল তিন মদ্যপ যুবক। প্রতিবাদে এগিয়ে যান বছর বাইশের মণিপুরী ছাত্র স্যামুয়েল। তখনই তিন জন চড়াও হয় তাঁর উপরে। স্যামুয়েলের মাথা ফেটে যায়। আপাতত তিনি হাসপাতালে। ওই ঘটনায় পুলিশ আজ গ্রেফতার করেছে তিন যুবককে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি ও বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

এ বছরের গোড়ায় শুরু। দিল্লিতে জাতি-বিদ্বেষের জেরে খুন হতে হয় অরুণাচলপ্রদেশের ছাত্র নিদো তানিয়াকে। তা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হলেও উত্তর-পূর্বের মানুষের উপরে নিগ্রহের ঘটনা কিন্তু বন্ধ হয়নি।

Advertisement

তার প্রমাণ ফের মিলল বেঙ্গালুরুতে। গত কাল সন্ধেয় এখানকার কোঠানুরের রাস্তায় এক তরুণীকে উত্যক্ত করছিল তিন মদ্যপ যুবক। প্রতিবাদে এগিয়ে যান বছর বাইশের মণিপুরী ছাত্র স্যামুয়েল। তখনই তিন জন চড়াও হয় তাঁর উপরে। স্যামুয়েলের মাথা ফেটে যায়। আপাতত তিনি হাসপাতালে। ওই ঘটনায় পুলিশ আজ গ্রেফতার করেছে তিন যুবককে। এরা প্রত্যেকেই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রমিক।

মাসখানেক আগে এ শহরের কোঠানুরেই একটি রেস্তোরাঁয় কন্নড় বলতে না পারার ‘অপরাধে’ এক মণিপুরী ছাত্রকে মারধর করা হয়। ওই তরুণও মারধরের চোটে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিন হামলাকারীকে গ্রেফতার হয়। তার পরেও নিগ্রহের চিত্র বদলায়নি। সেই একই এলাকায় আক্রান্ত হলেন স্যামুয়েল।

Advertisement

তিনি জানিয়েছেন, গত কাল সন্ধেয় ওই তিন জন মেয়েটিকে হেনস্থা করার পাশাপাশি তাঁকেও নানা কটূক্তি করে। অন্ধকারে ওই তিন শ্রমিকের মুখ ভাল করে দেখতেও পাননি স্যামুয়েল। তাঁর কথায়, “আমাকেও ওরা টিটকিরি দিচ্ছিল। চিনা বলে খ্যাপাচ্ছিল। ওরা আরও উস্কানিমূলক কথা বলেছে। ওই মেয়েটি পুলিশও ডাকেন। কিন্তু পুলিশ প্রথমে কিছু করতেই চায়নি। শেষমেশ তারা সক্রিয় হয়।”

স্যামুয়েলের আক্ষেপ: “আমাদের রাজ্যে তো আমরা কাউকে ঘৃণা করি না। আমার সবাইকে এক চোখে দেখি। কিন্তু এখানে মানুষ যে ভাবে আমাদের নাম ধরে ডাকে বা কথা বলে... সবই যেন বিদ্বেষপূর্ণ। সবাই ধরে নেন আমরা চিন বা নেপাল থেকে এসেছি।” উত্তর-পূর্ব বেঙ্গালুরুর ডিসিপি বিকাশ কুমার জানান, “স্যামুয়েল মণিপুরী ছাত্র। তিন জন উল্টোপাল্টা কথা বলায় তিনিও জবাব দেন। তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছি। তিন জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।”

দিল্লিতে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে আর এক মণিপুরী ছাত্রের। জয় শুনি নামে ২৩ বছরের ছেলেটি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মালব্য নগরে তিনি দাদা ও এক বন্ধুর সঙ্গে থাকতেন ভাড়াবাড়িতে। সেখানেই উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। গত কাল রাতেই আবার উদ্ধার হয় মণিপুরের আর এক ছাত্রের দেহ। এর সঙ্গে বিদ্বেষের সম্পর্ক রয়েছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দক্ষিণ দিল্লির কোটলা মুবারকপুরে নিজের বাড়িতেই রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৩৩ বছর বয়সি ওই ছাত্রের দেহটি। নাম জিনগ্রান কেংগু। তিনি মুম্বইয়ের একটি সংস্থা থেকে পিএইচডি করেছেন।

জিনগ্রানকে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ প্রথম দেখতে পান তাঁর বাড়িওয়ালার ছেলে। পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দেখে জিনগ্রানের মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন। গলায় কাটার দাগ। উদ্ধার হয়েছে একটি ছুরি। কিন্তু তাঁর কোনও জিনিসে কেউ হাত দিয়েছে বলে মনে হয়নি পুলিশের। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে তাদের ধারণা, ব্যক্তিগত আক্রোশেই খুন হয়েছেন জিনগ্রান। এই ঘটনায় দিল্লি পুলিশ কমিশনারের কাছে দ্রুত রিপোর্ট চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। রাজধানীতে উত্তর-পূর্বের যুবকদের খুন-নিগ্রহের ঘটনায় উদ্বিগ্ন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন