লাভ ছাড়ছেন দোকানিরা, ধর্ম-জাতপাত ভুলে ত্রাণে ঝাঁপ কেরলের

শুধু কাশেরগড় জেলাতেই তেমন প্রভাব প়ড়েনি। স্বাভাবিকের তিন গুণ বৃষ্টি হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।

Advertisement

সন্দীপ চক্রবর্তী, গবেষক

তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২১
Share:

উদ্ধার: বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছে এক বন্যা কবলিতকে। ছবি: এএফপি।

স্থানীয়রা বলেন, ‘নীলাকুরিঞ্জি’। বাংলা করলে দাঁড়ায়, নীল ফুল। তবে এ ঠিক নীল নয়, বেগুনি-ঘেঁষা। ১২ বছর পর-পর ফোটে। আর পশ্চিমঘাটের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর পাহাড়ি ঢাল ছেয়ে যায়। ২০০৬-এর পরে এই বছরটা তাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেরলের কাছে। অগস্ট থেকে অক্টোবর— ভরা মরসুমে অন্তত এক কোটি পর্যটকের মুখ চেয়ে মুখিয়ে ছিল মুন্নার। এক বছর ধরে বুকিং নিয়েছে সব পর্যটন সংস্থা। ‘নীলাকুরিঞ্জি’-র জন্য ২১ পাতার একটা ই-ব্রশিওরও বার করেছিল রাজ্য পর্যটন দফর। বন্যা সব ভেস্তে দিল। তিরুঅনন্তপুরমে ন্যাশনাল ইনস্টিউট ফর ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ল্যাবে বসে আমরা নিরাপদ। তবু ধাক্কা দিয়ে গেল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার সেই লাইনটা— ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য।’

Advertisement

তা হলে! সত্যিই কি ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা? অগস্টের প্রথমেও তেমন কিছু টের পাইনি। শুনছি, বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু ওইটুকুই। ইনস্টিটিউটে ‘ওনাম’ পালনের জন্য ১৩ অগস্ট পর্যন্ত চুটিয়ে চাঁদা তুলেছি সবাই। কিন্তু ঘোর কাটল সেই উৎসব শুরুর দিনেই। ১৫ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবসেও রাতভর ভারী বৃষ্টি। সকালে উঠে দেখি, কলেজের পিছনের জলাভূমিটা ভেসে গিয়েছে। ক্যাম্পাসের একটা পাঁচিল ভেঙে জল ঢুকছে। আশপাশের সব ক’টা রাস্তা জলের নীচে। এ বার!

ঘরে বিপদ বাড়ছে দেখেই খোঁজ নিতে শুরু করলাম। জানলাম, রাজ্যের ১৩টা জেলাই বন্যার কবলে। শুধু কাশেরগড় জেলাতেই তেমন প্রভাব প়ড়েনি। স্বাভাবিকের তিন গুণ বৃষ্টি হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। স্কুল-কলেজ বেশির ভাগই বন্ধ। সব এখন ত্রাণশিবির। আমরাও তাই নেমে পড়লাম মাঠে। উৎসব মাথায় উঠল। চাঁদার টাকা জমা পড়ল রিলিফ ফান্ডে। কিন্তু তাতে আর কী এমন হয়! অগত্যা হাত পাতলাম অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশনের কাছেও। হতাশ হইনি।

Advertisement

কিন্তু চমকে গেলাম ত্রাণে নেমে। ‘ভগবানের আপন দেশ’ কেরল। অথচ ধর্ম, জাতপাত কিংবা রাজনীতির ভেদাভেদ এখানেও বিস্তর। কিন্তু অন্যের বিপদে স্থানীয়দের যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখলাম, এমনটা আগে দেখিনি।

নিজেদের মতো করে টাকা তুলে প্রথমে ভাবা হয়েছিল, ত্রাণ তহবিলেই পাঠানো হবে। কিন্তু দরকারটা যে আপৎকালীন! তাই গত কালও বাজার করেছি। আর জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়েছি পিক-আপ পয়েন্টে। পুরুষ-মহিলাদের অন্তর্বাস থেকে শুরু করে কৌটোর দুধ, বিছানার চাদর, বই, ওষুধপত্র। দোকানদারদের অনেককেই লাভের অঙ্কটা এখন ছেড়ে দিচ্ছেন। মাছ ধরা বন্ধ। জেলেরা নৌকো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে উদ্ধার কাজে।

সর্বত্র নেই-রাজ্য। হাসপাতালে অক্সিজেন কমছে। ইনসুলিনের চাহিদা ব্যাপক। কোথাও মোবাইলে টাওয়ার আছে, তো বিদ্যুৎ নেই। সম্প্রতি এক ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটারি থেকে ফোন চার্জের উপায় বাতলেছেন। ফেসবুকে তা খুব শেয়ার হচ্ছে।

সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভও। সে বার শুধু চেন্নাই শহর বন্যার কবলে পড়েছিল। তা-ও কেন্দ্র জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করেছিল। কেরলের প্রায় পুরোটা আজ জলের নীচে, তবু কেন্দ্রের বিশেষ হেলদোল নেই বলে আক্ষেপ রাজ্যবাসীর একটা বড় অংশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন