—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কাজের খোঁজে ঠিকানা বদল হয়েছিল। কখনও গ্রাম বা ছোট শহর থেকে নিজের রাজ্যেরই বড় শহরে। কখনও ভিন্ রাজ্যের শহরে। নতুন জায়গায় বসবাস করতে করতে সেখানেও ভোটার তালিকায় নাম উঠেছিল। সেই সঙ্গে আদি ঠিকানাতেও ভোটার তালিকায় নাম থেকে গিয়েছিল। এখন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর শুরু হতে সাধারণ মানুষের অনেকেই শহরের ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে নিয়েছেন। গ্রাম বা যেখানে স্থায়ী ঠিকানার ভোটার তালিকাতেই নাম রেখে দিয়েছেন।
কলকাতা থেকে চেন্নাই, সুরাত থেকে জয়পুর— বিভিন্ন শহরে এসআইআর-এর জেরে ভোটার তালিকায় বিপুল নাম বাদ গিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক বা অন্য শহরে কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের সিংহভাগ গ্রামের বা স্থায়ী ঠিকানাতেই ভোটার তালিকায় নাম রেখে দিতে চেয়েছেন। সেই সিদ্ধান্তই শহরাঞ্চলে বেশি নাম বাদ যাওয়ার কারণ বলে নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের ধারণা।
কেন এই প্রবণতা? এসআইআর-এর কাজে নিযুক্ত রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী আধিকারিকেরা মনে করছেন, মানুষ নিজের ভিটেমাটির ঠিকানায় বসবাসের প্রমাণ হিসেবে ভোটার তালিকায় নাম রাখতে চাইছেন। যাতে ভবিষ্যতে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ বা প্রশ্ন উঠলে হাতে কোনও নথি-প্রমাণ থাকে। বিভিন্ন খয়রাতি প্রকল্পের সুযোগসুবিধা পেতেও ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া কর্মীরা নিজের রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম রাখছেন। যেমন, কলকাতায় খেটে খাওয়া বিহারের বহু মানুষ এ বার কলকাতায় ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে দিয়েছেন।
ভোটারদের এই প্রবণতা দেখে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতৃত্বের ঘুম ছুটে গিয়েছে। সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে এসআইআর-এর ফলে বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ পড়তে চলেছে। যার মধ্যে বিজেপি সমর্থকদের বড় অংশও রয়েছেন। যোগীর চিন্তার কারণ হল, এর ফলে শহুরে এলাকায় বিজেপির নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়ে যেতে পারে। বিশেষত নয়ডা, গাজ়িয়াবাদের মতো দিল্লি সংলগ্ন এলাকায়। কারণ এই দুই শহরে অধিকাংশ বাসিন্দাই আদতে ভিন্ রাজ্যের মানুষ। তাঁরা শহর থেকে নাম কাটিয়ে গ্রামে বা নিজেদের রাজ্যে ‘হোম টাউন’-এর ভোটার তালিকায় নাম রাখতে আগ্রহী।
শনিবার লখনউয়ে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যোগী-সহ উত্তরপ্রদেশের নতুন বিজেপি সভাপতি পঙ্কজ চৌধরি ও অন্য নেতাদের বৈঠক হয়েছে। ২০২৭-এ উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শহুরে এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক বিজেপি সমর্থকদের নাম বাদ যাওয়ার বিপদ নিয়ে আলোচনা হয়। নড্ডা বুথ স্তরে দলের কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ, বিজেপি রাজ্যে রাজ্যে ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা খুঁজতে বেরিয়েছিল। কোথায় কত বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা মিলল, তার উত্তর মিলছে না। বিজেপি এখন নিজের ভোটারদের নাম কাটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে।
বিহারের পরে নির্বাচন কমিশন যে ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর শুরু করেছে, তার বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, রাজস্থান, তামিলনাড়ুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি রাজ্যেই দেখা যাচ্ছে, গোটা রাজ্যে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার যে হার, তার থেকে বড় শহরগুলিতে ওই হার অনেক বেশি। নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, শহরে মৃতের হার বেশি হতে পারে না। সেখানে অনুপস্থিত, ডুপ্লিকেট, স্থানান্তরিতের হার বেশি হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গে খসড়া তালিকায় গোটা রাজ্যে ৭.৬% ভোটার কমেছে। অথচ উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় এই হার ২৫ শতাংশের আশেপাশে। গুজরাতে ১৪.৫৬% নাম বাদ গিয়েছে। সুরাত ও আমদাবাদে এই হার ২৫ শতাংশের বেশি। তামিলনাড়ুতে ১৫% ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। চেন্নাইয়ে ৩৫ শতাংশের বেশি ভোটার কমেছে। রাজস্থানে ৭.৭% ভোটার কমেছে খসড়া তালিকায়। জয়পুরে বাদ গিয়েছে ১১.২ শতাংশ ভোটারের নাম। মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর কেরল-মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়ের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে। উত্তরপ্রদেশের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ৩১ ডিসেম্বর। সেখানেও একই দৃশ্য দেখা যাবে বলে কমিশন কর্তাদের ধারণা।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে