বাংলার উপেক্ষার শিকার পূর্ণিমারা

নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নবীকরণের জন্য ভিন্‌ রাজ্য থেকে এসে বসবাসকারীদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নথিপত্র, পূর্বপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র সংক্রান্ত প্রমাণ জমা দিতে হয়। সেই সব নথি বিভিন্ন রাজ্যে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। তেমন প্রায় আড়াই লক্ষ নথি যাচাই হয়ে ফেরত আসেনি। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো ১ লক্ষ ২০ হাজার নথির মধ্যে মাত্র ১৫ হাজার যাচাই হয়েছে। ১ লক্ষ ৫ হাজার নথি যাচাই ঝুলে রয়েছে। ফলে বাদ পড়েছে লক্ষাধিক বাঙালির নাম।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৯
Share:

ওঁরা সেই বাদ পড়া চল্লিশ লক্ষের এক-এক জন।

Advertisement

আরও খতিয়ে দেখলে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে লক্ষাধিক নথি যাচাই হয়ে ফেরত আসেনি, পরিবারগুলি তারই শিকার। তালিকায় নাম না-ওঠা ৪৮,৪৫৬ জন বিবাহিতা মহিলার মধ্যে এক দিকে যেমন প্রত্যন্ত চর এলাকার মহিলারাও রয়েছেন, তেমনই আছেন গুয়াহাটির বাসিন্দা, মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের বধূরাও।

নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নবীকরণের জন্য ভিন্‌ রাজ্য থেকে এসে বসবাসকারীদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নথিপত্র, পূর্বপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র সংক্রান্ত প্রমাণ জমা দিতে হয়। সেই সব নথি বিভিন্ন রাজ্যে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। তেমন প্রায় আড়াই লক্ষ নথি যাচাই হয়ে ফেরত আসেনি। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো ১ লক্ষ ২০ হাজার নথির মধ্যে মাত্র ১৫ হাজার যাচাই হয়েছে। ১ লক্ষ ৫ হাজার নথি যাচাই ঝুলে রয়েছে। ফলে বাদ পড়েছে লক্ষাধিক বাঙালির নাম।

Advertisement

হুগলির ধনেখালির শিবাইচণ্ডী গ্রামের মেয়ে পূর্ণিমা মিত্র। ২০ বছর আগে বিয়ে হয়ে গুয়াহাটি এসেছিলেন। আছে অসমের ভোটার কার্ড। বাংলার নথিপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম তালিকায় নাম আসার পরে নিশ্চিন্ত হন। কিন্তু দ্বিতীয় তালিকায় যে বিবাহিতদের নাম বাদ পড়েছে, তার মধ্যে তিনিও রয়েছেন। ধনেখালিরই পোড়াবাজারের রত্না বসু ১৯৭১ সালের অনেক আগে গুয়াহাটির সরকারি কর্মীকে বিয়ে করে গুয়াহাটির লাল গণেশ এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ভোটার কার্ড রয়েছে। কিন্তু তাঁর নথিও বাংলা থেকে যাচাই হয়ে না-আসায় তালিকার বাইরে রত্না। হুগলির সান্ত্বনা মিত্র ১৯৫০-এর দশকে বিয়ে হয়ে গুয়াহাটি এসেছেন। তখন থেকে এখানকারই ভোটার। তাঁর পুত্র অজয় মিত্র দিসপুর কলেজের শিক্ষক। অজয়বাবুর স্ত্রী অর্পিতাদেবীও বিয়ের সূত্রে ২৩ বছর ধরে গুয়াহাটির বাসিন্দা। কিন্তু অজয়বাবুর নাম থাকলেও চূড়ান্ত খসড়ায় তাঁর মা ও স্ত্রী, কারও নামই নেই। কারণ সেই বঙ্গসংযোগ ও নথি যাচাই না হওয়া।

কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক প্রশান্ত চক্রবর্তীর দুই দাদা ‘ভারতীয়’। তবে তাঁদের স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান তালিকায় নেই। এক বৌদি আবার খাস উজানি অসমের অসমিয়া। অন্য দিকে, নগাঁওয়ের এক প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছেলের নাম তালিকায় থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে, পুত্রবধূর নাম তালিকার বাইরে।

পল্টনবাজারের প্রাণতোষ রায় ও তাঁর ছেলে-মেয়ের নাম তালিকায় ওঠেনি। ১৯০৫ সাল থেকে তাঁরা গুয়াহাটিতে। তিনি জয়প্রকাশ নারায়ণের লোক সংগ্রাম সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫-এ জরুরি অবস্থার সময় ১৯ মাস মিসায় বন্দি ছিলেন। তার আগে ১৯৬৪-তে মণিপুর থেকে দিল্লি পর্যন্ত পদযাত্রায় সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য থাকা
প্রাণতোষবাবুকে মথুরা ও গোরক্ষপুর জেলেও বন্দি রাখা হয়েছিল। কারামুক্তির নথি আছে তাঁর কাছে। ২০১৬-য় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তাঁকে সংবর্ধনাও দেয়। তাঁর দাবি, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নথি তাঁর কাছে থাকলেও এনআরসি কেন্দ্রে তা জমা দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনেই হয়নি। তালিকায়নাম তো থাকবেই! কিন্তু এ বার প্রাণতোষবাবুর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন