বহিষ্কৃত মাওবাদী নেতা সব্যসাচী ধৃত ওড়িশায়

ওড়িশায় মাওবাদীদের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সব্যসাচী পণ্ডা এখন পুলিশের হাতে। বছর দু’য়েক আগেই অবশ্য পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন সব্যসাচী। তার পর ‘দলবিরোধী’ কার্যকলাপ এবং ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের’ জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। সেই ইস্তক দলের সঙ্গে সব্যসাচীর তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না। কাজেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, না কি তিনি পুলিশের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া করে ধরা দিলেন তা নিয়ে গোয়েন্দাদের একাংশেরই সন্দেহ রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:০০
Share:

ওড়িশায় মাওবাদীদের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সব্যসাচী পণ্ডা এখন পুলিশের হাতে। বছর দু’য়েক আগেই অবশ্য পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন সব্যসাচী। তার পর ‘দলবিরোধী’ কার্যকলাপ এবং ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের’ জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। সেই ইস্তক দলের সঙ্গে সব্যসাচীর তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না। কাজেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, না কি তিনি পুলিশের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া করে ধরা দিলেন তা নিয়ে গোয়েন্দাদের একাংশেরই সন্দেহ রয়েছে।

Advertisement

ওড়িশা পুলিশের ডিজি সঞ্জীব মারিক অবশ্য শুক্রবার বলেছেন, “বৃহস্পতিবার রাতে গঞ্জাম জেলার ব্রহ্মপুর শহরের বড়বাজার এলাকা থেকে সব্যসাচীকে গ্রেফতার করা হয়।” পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৫০টি নাশতকার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালে কন্ধমাল জেলায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা স্বামী লক্ষ্মণানন্দ সরস্বতী এবং তাঁর পাঁচ সঙ্গীর হত্যাকাণ্ডে তিনি মূল অভিযুক্ত ছিলেন। পুলিশের দাবি, ২০০৬ সালের মার্চে উদয়গিরিতে একটি থানা এবং জেলে হামলা চালানো হয়েছিল সব্যসাচীর নির্দেশেই। ওই ঘটনায় দু’জন পুলিশকর্মী নিহত হয়েছিলেন। পুলিশ জানায়, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নয়াগড়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ১৮ জনকে খুন করে সব্যসাচীর দলের জঙ্গিরা। লুঠ করা হয় প্রচুর একে ৪৭, এসএলআর, ইনস্যাস রাইফেল। ২০১২ সালে ইতালির দু’জন নাগরিকের অপহরণেও তাঁর নাম জড়িয়ে ছিল। সব্যসাচীর খোঁজ পেতে পুলিশ-প্রশাসন ২০ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করে।

পুলিশ জানিয়েছে, কন্ধমালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতার হত্যাকাণ্ডের জেরে ছড়িয়ে যাওয়া গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার জেরে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে বিপুল জনমত তৈরি হয়। সে জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হন সব্যসাচী।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের নভেম্বরে যৌথ বাহিনীর হাতে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেণজির মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গে দলের নেতৃত্বে ‘শূন্যতা’ তৈরি হয়। তার বছর খানেক আগেই কাঞ্চন-সহ দলের পাঁচ রাজ্যনেতা পুলিশের জালে ধরা পড়েছিলেন। কিষেণজির মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সন্দেহ ছিল, পশ্চিমবঙ্গে দলের রাজ্য কমিটির কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তার জেরেই এ সব কাণ্ড ঘটেছে।

সে দিকে তাকিয়ে ওড়িশার পাশাপাশি সব্যসাচীকে পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, তত দিনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কিছুটা দুরত্ব তৈরি হয়েছিল। তার কিছু দিন পরেই মাওবাদীদের সাধারণ সম্পাদক গণপতি-সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে ‘খোলা চিঠি’ পাঠান সব্যসাচী। তাতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দক্ষিণ ভারতীয়দের আধিপত্য নিয়ে তিনি সরাসরি সমালোচনা করেন। চর সন্দেহে যে কোনও লোককে ‘মৃত্যুদণ্ড’ অর্থাৎ নির্বিচারে খুনের বিরুদ্ধেও মুখ খোলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, দলের এক শ্রেণির নেতা কমিউনিস্ট আর্দশ থেকে সরে গিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। শুধু তা-ই নয়, দক্ষিণ ভারতীয় নেতারা তেঁতুল এবং শুকনো লঙ্কা খেতে ভালবাসেন। যা স্বাস্থ্যর পক্ষে ক্ষতিকারক। দলের অন্য সদস্যদেরও সে সব খেতে জোর করা হয়। তা না-হলে তাদের বিদ্রুপ করা হয়। ওই চিঠি পাঠিয়েই কার্যত দলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলেন সব্যসাচী। ২০১২ সালের অগস্টে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এর পর ‘ওড়িশা মাওবাদী পার্টি’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন সব্যসাচী। পরে সেটির নাম বদলে সিপিআই (মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট-মাওইস্ট) করেন। পুলিশের দাবি, এ বছর ফেব্রুয়ারিতে গঞ্জামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনি জখম হয়েছিলেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তাঁর শক্তি ক্রমশই কমছিল। কিন্তু সব্যসাচীর স্ত্রী শুভশ্রী পণ্ডা এখনও মাওবাদী সংগঠনেই রয়েছেন। ওড়িশার মালকানগিরি এলাকায় দলের বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তিনি। স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পর শুভশ্রী বলেছেন, “উনি কোনও খুনি নন, বিপ্লবী।” ওই মাওবাদী-নেত্রী সব্যসাচীকে দ্রুত আদালতে পেশ করার দাবি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন