দলিত-মুসলিম ভোটেই নজর মায়ার

নির্বাচন হতে বাকি প্রায় ছ’মাস। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতা দখলে ইতিমধ্যেই সম্মুখ সমরে নেমে পড়েছে প্রায় সবক’টি দলই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

মায়াবতী

নির্বাচন হতে বাকি প্রায় ছ’মাস। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতা দখলে ইতিমধ্যেই সম্মুখ সমরে নেমে পড়েছে প্রায় সবক’টি দলই।

Advertisement

গো-রক্ষা ও দলিত অত্যাচার প্রশ্নে বিজেপি কিছুটা ব্যাকফুটে। সেই সুযোগে দলিত ও মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক একজোট করে লখনউয়ের মসনদ দখলের লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। মাঠে নেমে পড়েছে কংগ্রেসও। সেপ্টেম্বরের শুরুতে অমেঠি-রায়বরেলীতে পদযাত্রায় দেখা যাবে রাহুল গাঁধীকেও। আর কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি আপাতত আগামী ছ’মাস কেন্দ্রীয় প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান করার জন্য বেছে নিয়েছে উত্তরপ্রদেশকেই।

রাজনীতিকদের মতে, এই নির্বাচনে সবচেয়ে ‘ফেভারিট’ মায়াবতীই। তিনি আগামিকাল মাঠে নামছেন আগরায়। কুড়ি দিনের মধ্যে রাজ্যের চারটি প্রান্তে চারটি জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে থেকেই ১২ সেপ্টেম্বর লখনউয়ে জনসভা করে প্রচারে ঝাঁপাচ্ছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি।

Advertisement

শাসক সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে রাজ্যে যে বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে তৎপর এখন সমস্ত বিরোধী দলই। কংগ্রেস ইতিমধ্যে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে প্রার্থী করে প্রচারে নেমে পড়েছে। লক্ষ্য উচ্চবর্ণের ভোটারদের বার্তা দেওয়া। অন্য দিকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশ জুড়ে কর্মীদের চাঙ্গা করতে উত্তরপ্রদেশে ভাল ফল করতে মরিয়া বিজেপিও। তারা জানে, ওই রাজ্যে ভাল ফল হলে দলিত বিতর্ক, কাশ্মীর নীতি, মূল্যবৃদ্ধির মতো অস্বস্তিজনক বিষয়গুলি নিজে থেকেই চাপা পড়ে যাবে। উজ্জীবিত হয়ে লোকসভার নির্বাচনে ঝাঁপাতে পারবে দল।

মায়াবতীর সহযোগীদের মতে, ক্ষমতায় ফিরতে দলিত ও মুসলিম ভোটের উপরেই ভরসা করতে হবে। তাই আগরা দিয়ে প্রচার শুরু করছেন বিএসপি নেত্রী। কারণ উত্তরপ্রদেশের এই শহরে ওই দুই শ্রেণির প্রতিনিধিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ‘ডিএম’ (দলিত-মুসলিম) সমীকরণকে মাথায় রেখে বেছে নেওয়া হয়েছে আজমগড়, ইলাহাবাদ ও সাহারানপুরের মতো এলাকাগুলিকে। ভোট কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই সংসদের বাদল অধিবেশনে দলিত-মুসলিমদের উপরে অত্যাচার নিয়ে একাধিক বার সরব হয়েছিলেন বিএসপি নেত্রী। একই সঙ্গে প্রথম পর্বের প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুসলিম মুখ নাসিমুদ্দিন সিদ্দিকিকে। সূত্রের খবর, সমাজবাদী পার্টির মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ভাঙতে এ বার রাজ্যের ৪০৩টি আসনের মধ্যে প্রতি চারটি আসন পিছু এক জন করে মুসলিম প্রার্থী দেবে মায়াবতীর দল।

নানা কারণে বেশ বেকায়দায় পড়েছে শাসক সমাজবাদী পার্টি। অখিলেশ জমানায় রাজ্যের নানা প্রান্তে গোষ্ঠী সংঘর্ষ, দাদরিতে গো-মাংস নিয়ে গোলমালে মহম্মদ আখলাকের মৃত্যুর মতো ঘটনায় মুসলিমরাও কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে আশঙ্কা দলের। সেই সঙ্গে রয়েছে কাকা শিবপালের সঙ্গে অখিলেশের বিবাদ। তবে প্রকাশ্যে দলের দাবি, তেমন কোনও সমস্যা হবে না। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর লখনউ থেকে প্রচার শুরু করবেন অখিলেশ। সূত্রের খবর, আগামী কয়েক মাসে সংখ্যালঘুদের মন টানতে নেওয়া হবে একাধিক পরিকল্পনা। তবে তাতে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে সন্দিহান দলের অনেকেই।

ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারাও মেনে নিচ্ছেন, মায়াবতী সুবিধেজনক অবস্থানে রয়েছেন। দলের একাংশের মতে, গো-রক্ষাকে প্রচারের হাতিয়ার করা উচিত দলের। ওই বিজেপি নেতাদের মতে, এই কৌশল নিলে উত্তরপ্রদেশের কুড়ি শতাংশ উচ্চবর্ণের ভোট তাদের বাক্সে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দলিতদের মধ্যে যাটভ সম্প্রদায়ের ১৪ শতাংশ ভোট রয়েছে। এই সম্প্রদায় মায়াবতীকে বিশেষ পছন্দ করে না। তাই এই ভোট পেতেও ঝাঁপাতে চায় রাজ্য বিজেপি। ওবিসি-র মধ্যে যাদব সম্প্রদায়কে বাদ দিলে বাকি ভোটও বিজেপি পেতে পারে বলে মনে করেন রাজ্য নেতারা। তাঁদের হিসেব অনুযায়ী, সে ক্ষেত্রে লখনউ দখলের দৌড়ে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন মায়াবতী।

কংগ্রেসের পক্ষে লড়াইটা যে শক্ত তা মানছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। কিন্তু শীলা দীক্ষিতের নেতৃত্বে উচ্চবর্ণ ও মুসলিম ভোট ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে সনিয়া-রাহুল গাঁধীর দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন