শাস্তি কার, ‘দঙ্গলে’ প্রকাশ ও সীতা

কাঠগড়ায় চার মূর্তি। আর তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্নকে ঘিরে প্রায় আড়াআড়ি যুদ্ধে সিপিএমের বর্তমান ও প্রাক্তন দুই সাধারণ সম্পাদক! শীতের দিল্লিকে এড়িয়ে আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে তিরুঅনন্তপুরমে বসতে চলেছে সিপিএমের তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৪
Share:

কাঠগড়ায় চার মূর্তি। আর তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্নকে ঘিরে প্রায় আড়াআড়ি যুদ্ধে সিপিএমের বর্তমান ও প্রাক্তন দুই সাধারণ সম্পাদক!

Advertisement

শীতের দিল্লিকে এড়িয়ে আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে তিরুঅনন্তপুরমে বসতে চলেছে সিপিএমের তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। কেরলেরই চার নেতা-নেত্রীর শাস্তির দাবিকে ঘিরে এ বারের দক্ষিণী বৈঠকের আগে উত্তপ্ত সিপিএমের অন্দর মহল। পিনারাই বিজয়নের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগী ই পি জয়রাজন, বিদ্যুৎমন্ত্রী এম এম মানি, সাংসদ পি কে শ্রীমতি এবং নবতিপর নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন— এই চার জনের শাস্তির প্রশ্নে লড়াই বেধেছে সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রকাশ কারাটের! সাম্প্রতিক কালে দলের কেন্দ্রীয় স্তরে এমন টানাপড়েন দেখেনি সিপিএম! চার জনের মধ্যে মানি শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন। ইয়েচুরি চান, দলের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে দলীয় স্তরে জয়রাজন, মানি ও শ্রীমতির শাস্তি হোক। আর কারাট শিবির জয়রাজন, মানিকে রক্ষা করতে মরিয়া। তারা বরং শ্রীমতি এবং ভি এস-কে শিক্ষা দিতে চায়! দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, কেন্দ্রীয় কমিটির আগে ৫ তারিখ তিরুঅনন্তপুরমে পলিটব্যুরোর বৈঠকেই চূড়ান্ত মহড়া হয়ে যাবে ইয়েচুরি না কারাট— কার যুক্তি ধোপে টিকতে চলেছে।

স্বজনপোষনের দায়ে বিতর্কে জড়িয়ে জয়রাজনকে কেরলের মন্ত্রিসভা ছাড়তে হয়েছিল ইয়েচুরির চাপেই। তাঁর পরিবর্তে মানিকে মন্ত্রিসভায় নিয়েছিলেন বিজয়ন। কিন্তু পুরনো একটি খুনের মামলায় অব্যাহতি চেয়ে তাঁর আবেদন সম্প্রতি নিম্ন আদালতে খারিজ হয়েছে। ইয়েচুরি শিবিরের যুক্তি, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত দাঙ্গার মামলা প্রসঙ্গ তুলে সিপিএম যখন নিয়মিতই সরব হয়, সেখানে নিজেদের ঘর পরিষ্কার রাখার জন্য মানিকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। আর জয়রাজনকে দলীয় স্তরেও শাস্তি দেওয়া উচিত। কারাট তথা বিজয়ন শিবিরের পাল্টা বক্তব্য, জয়রাজনকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে যথেষ্ট শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আর মানির এখনও উচ্চতর আদালতে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। তাই এখনই দলীয় স্তরে শাস্তির কথা কেন?

Advertisement

ভি এসের ক্ষেত্রে দলের পলিটব্যুরো কমিশন রিপোর্ট দিয়েছে, বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও প্রবীণ এই নেতা দলের শৃঙ্খলা ভেঙেই চলেছেন। দলের ভাবমূর্তির কোনও পরোয়া করছেন না। বিজয়নেরা চান, ভি এসের শাস্তি হোক। কেরলের প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হোক তাঁকে। আবার ইয়েচুরি চাইছেন, ভর্ৎসনা করেই ক্ষান্ত দেওয়া হোক কেরলের জনপ্রিয়তম নেতাকে। বঙ্গ ব্রিগেডের সিংহ ভাগ ভি এস-প্রশ্নে সাধারণ সম্পাদকের পাশে। শ্রীমতিকে নিয়ে অবশ্য এতটা টানাপড়েন নেই। বারবার দলের বার্তা অগ্রাহ্য করে তিনি স্বজনপোষণে জড়িয়েছেন, এই অভিযোগে ইয়েচুরি ও কারাট শিবির, কেউই তাঁকে রেহাই দিতে বিশেষ আগ্রহী নয়!

দুই শিবিরের মনোভাব দেখে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক বর্ষীয়ান সদস্যের মত, ‘‘ভি এস-কে হাল্কা শাস্তি দিয়ে ছাড়তে হলে জয়রাজন ও মানির বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। তা হলে দু’পক্ষে রফা হতে পারে!’’ নতুন বছরে সিপিএমে প্রশ্ন, প্রাক্তনের চাপে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কি আপসে রাজি হবেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন