বিজেপির সঙ্গে জোট নিয়ে চাপে মেহবুবা

সবে মেহবুবা মুফতি সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যেই পিডিপি-বিজেপি সম্পর্ক ঝড়ের মুখে। ফের জম্মু-কাশ্মীরে কবে রাজ্যপাল শাসন জারি হবে, উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্ন। নীতি আয়োগের রবিবারের বৈঠকে যোগ দিতে আজ দিল্লি এসে পৌঁছেছেন মেহবুবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২১
Share:

সবে মেহবুবা মুফতি সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যেই পিডিপি-বিজেপি সম্পর্ক ঝড়ের মুখে। ফের জম্মু-কাশ্মীরে কবে রাজ্যপাল শাসন জারি হবে, উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্ন। নীতি আয়োগের রবিবারের বৈঠকে যোগ দিতে আজ দিল্লি এসে পৌঁছেছেন মেহবুবা। রাজ্যের বর্তমান সঙ্কট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক করবেন।

Advertisement

কিন্তু এই বৈঠকেও সমাধানসূত্র মিলবে কি না, তা নিয়ে দুই শিবিরই যথেষ্ট সন্দিহান। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে দিতে পিডিপি-র হাত ধরেছিল বিজেপি। মতাদর্শগত ভাবে বিপরীত মেরুর হলেও বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেছিলেন প্রয়াত মুফতি মহম্মদ সইদ ও তাঁর মেয়ে মেহবুবা। কিন্তু পিডিপি সূত্রের খবর, এখল দলের অন্দরমহলেই মেহবুবার উপরে জোট ভাঙার জন্য চাপ তৈরি হয়েছে।

বিবাদের মূল বিষয়, উপত্যকায় শান্তি আনার কৌশল। সেনার কড়া নীতি, পাথর ছোড়ার মোকাবিলায় কাশ্মীরি যুবককে জিপের সামনে বেঁধে ঘোরানোয় পিডিপি নেতারা ক্ষুব্ধ। বিধান পরিষদে নির্বাচনের একটি আসনে পিডিপি প্রার্থীর হারের পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে মেহবুবার দলের নেতারা মনে করছেন।

Advertisement

বিবাদ মেটাতে কাশ্মীর গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা রাম মাধব। রাজ্যপাল এন এন ভোহরা ও রাজ্য পুলিশের ডিজি শিসপাল বৈদ্যের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পিডিপি-র দূত হিসেবে তাঁর কাছে যান মেহবুবার অর্থমন্ত্রী হাসিব দ্রাবু। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী বিজেপি নেতা চন্দ্রপ্রকাশ গাঙ্গা মন্তব্য করেছিলেন, পাথর ছুড়লে তাদের পেটানো, দরকারে গুলি করা উচিত। তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন দ্রাবু। কিন্তু তারপর রাম মাধব নিজেই কাশ্মীরি যুবককে জিপের সামনে বেঁধে ঢাল করাকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘‘প্রেম ও যুদ্ধে কিছুই অসঙ্গত নয়।’’

আরও পড়ুন:​ কাশ্মীরে ৯ বছরের মেয়েকে রড দিয়ে মার গো-রক্ষকদের

এতেই আরও ঘি পড়েছে আগুনে। মেহবুবার ঘনিষ্ঠ নেতা, শিক্ষামন্ত্রী সৈয়দ আলতাফ বুখারি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে কি যুদ্ধ ঘোষণা হয়েছে? সব বাধা কাটিয়েও যাঁরা ভোট দিয়ে গণতন্ত্রে বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে? না কি বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করতে যুদ্ধ হচ্ছে?’’ বুখারির মন্তব্যে স্পষ্ট, মেহবুবার ঘনিষ্ঠ নেতারাই এখন বিজেপির সঙ্গে জোট ভাঙতে চাইছেন। আজ রিয়াসি জেলায় যাযাবর সম্প্রদায়ের এক পরিবারের গো-রক্ষকদের হামলায় আরও তিক্ত হয়েছে বিজেপি-পিডিপি সম্পর্ক।

কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের যৌথ প্রার্থী হিসেবে সম্প্রতি শ্রীনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ফারুক আবদুল্লা। ফারুকের দলের আমন্ত্রণে রাহুল গাঁধী কাশ্মীরে গিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতে, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সম্মানজনক রাস্তা হল বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। তাতে যদি রাজ্যপাল শাসন জারি হয়, হবে। তিনি বলেন, ‘‘পিডিপি-বিজেপি জোট যে দুর্ঘটনা ছিল, আরও অনেক লোক সেটা বুঝতে পারছেন দেখে আমি খুশি।’’ দিন তিনেক আগে বিজেপির কোর গ্রুপে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর রাজনাথ সিংহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়তের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। সূত্রের খবর, সেখানেও রাজ্যপাল শাসন জারির ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের দাবি মেনে মোদী সরকার সেই পথে হাঁটবে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।

কাশ্মীরে ৯ বছরের মেয়েকে রড দিয়ে মার গো-রক্ষকদের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন