এখনও জারি কার্ফু। শ্রীনগরে পথচলতি মানুষের পরিচয়পত্র পরীক্ষা বাহিনীর। সোমবার। ছবি: রয়টার্স
কেটে গিয়েছে এক মাস। কিন্তু মুখ খোলেননি তিনি। এ বার কাশ্মীরের মানুষের ক্ষতে মলম দিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে এক মাস ধরে জম্মু-কাশ্মীরে চলেছে অশান্তি। তা নিয়ে গরম গরম বিবৃতি দিচ্ছে পাকিস্তান। তাদের জবাবও দিচ্ছে ভারত। কিন্তু কাশ্মীরের সমস্যা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর মুখ খোলা উচিত বলে বার বার দাবি করছেন বিরোধীরা। আজ সেই দাবি আরও জোরালো করে তুললেন জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপির জোটসঙ্গী পিডিপি-র নেত্রী মেহবুবা। জানালেন, নরেন্দ্র মোদী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো কাশ্মীরের মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বলেই আশা তাঁর।
কাশ্মীরে পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কথা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে সংঘর্ষ যে এত দিন ধরে চলবে তা যে গোয়েন্দারা আঁচ করতে পারেননি তাও একান্তে মেনে নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্তারা। বিষয়টি
আজ দিল্লিতে রাজনাথ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের সঙ্গে বৈঠক করেন মেহবুবা। তার পরেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর নীরবতার প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মনে করি উপত্যকার মানুষের ক্ষতে মলম লাগানোর প্রয়োজন আছে। আশা করি এই সুযোগে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন মোদী। অটলবিহারী বাজপেয়ীর কায়দায় উপত্যকার মন জয় করবেন তিনি।’’
কাশ্মীরের মন জয়ের জন্য বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন বাজপেয়ী। পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি উপত্যকায় বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তাঁর সরকার। তাতে উপত্যকার মানুষ কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলেন বলেই মনে করেন অনেকে। বাজপেয়ী জমানার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিশেষ ভাবে জড়িত ছিলেন গুপ্তচর সংস্থা র’-এর প্রাক্তন প্রধান আর এস দুলাত। তাঁর স্মৃতিকথা অনুযায়ী, কেন্দ্রে ফের বিজেপি ক্ষমতায় আসায় মুসলিমপ্রধান রাজ্য হলেও খুশি হয়েছিল কাশ্মীর। কারণ, মোদী বাজপেয়ীর উদ্যোগকেই আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে মনে করেছিলেন উপত্যকার মানুষ। মোদীও কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে তেমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু তার পরে মোদী সরকার তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলেই মনে করেন অনেকে। বরং সাম্প্রতিক অশান্তিতে সরকারের তরফে সহানুভূতির অভাবই বেশি চোখে পড়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। তাঁদের মতে, কাশ্মীরে জনতা-বাহিনী সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ষাট ছুঁয়েছে। কিন্তু এখনও প্রধানমন্ত্রীর তরফে কোনও বার্তা না আসাটা বিস্ময়ের। সম্প্রতি কাশ্মীরে গিয়ে নানা পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বুঝতে চেয়েছিলেন রাজনাথ। কিন্তু স্থানীয়দের বড় অংশই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। ফলে উপত্যকায় দিল্লি-বিরোধী উত্তাপের আঁচ সঙ্গে নিয়েই ফিরতে হয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
কিন্তু তার পরেও মোদী কিছু বলেননি। আজ রাজ্যসভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস, সিপিএম, জেডিইউ, তৃণমূলের মতো দলগুলি। তাদের মতে, কাশ্মীরের সমস্যাকে কেবল আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত নয়। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এর বিচার করতে হবে। খুঁজতে হবে রাজনৈতিক সমাধান। এখন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীকেই মাঠে নামতে হবে।
২০১০ সালেও প্রবল সংঘর্ষে অশান্ত হয়েছিল কাশ্মীর। তখন উপত্যকার মন বুঝতে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল মনমোহন সিংহ সরকার। আজ রাজ্যসভায় সেই প্রসঙ্গ টেনে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘ওই প্রতিনিধি দল উপত্যকায় ঘুরে আসার পরে অশান্তি অনেক কমেছিল। এখনও তেমন পদক্ষেপ করা যেতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা বুঝিয়ে দিচ্ছে সরকার কাশ্মীর নিয়ে আদৌ চিন্তিত নয়।’’
আগামিকাল রাজ্যসভায় কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলেন কিনা, তা-ই এখন দেখার।