দেশলাই পকেটে নিয়েই দিব্যি বিমানে চড়েন তিনি। নিজের মুখে আজ এ কথা স্বীকার করলেন বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু। রাজধানীর ডিআরডিও ভবনে ব্যুরো অব সিভিল অ্যাভিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কথায় কথায় সেখানেই বলে বসেন নিজের অভিজ্ঞতা।
রাজুর কথায়, আগে যখন বিমানে কোথাও যেতাম, ওঠার আগে তল্লাশির সময়ই দেশলাই বা লাইটার ছিনিয়ে নিতেন বিমানকর্মীরা। পরে আর তা ফেরতও পেতাম না। মন্ত্রী হওয়ার পর অবশ্য ছবিটা পাল্টেছে। এখন আর জামাকাপড় হাতড়ে কেউ দেশলাইয়ের প্যাকেট খোঁজে না। তাই পকেটের জিনিস নিশ্চিন্তে পকেটেই রাখা যায়— হাসতে হাসতে জানালেন রাজু।
বেফাঁস এমন কথা বলে ফেলেও অবশ্য অস্বস্তি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেননি বিমানমন্ত্রী। বরং জোর গলায় বলেছেন, ‘‘সাংবাদিকরা এ নিয়ে বড় বড় করে লিখবেন জানি। কিন্তু দেশলাই কাঠি বা লাইটারের জন্য উড়ানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে, এমন একটাও উদাহরণ কি আপনারা দেখাতে পারেন?’’ মন্ত্রীর যুক্তি, নিরাপত্তার নামে যাত্রীদের এ ভাবে অহেতুক হয়রান করার মানেই হয় না।
বিমানে দাহ্য পদার্থ নিয়ে ওঠা বারণ চিরকাল। বিমানমন্ত্রী হয়ে এ রকম বেআইনি কথা তিনি বলেন কী ভাবে, রাজুর এ হেন মন্তব্যের পর তাই সেই প্রশ্ন উঠছেই। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরযেওয়ালার বক্তব্য, আইন ভাঙার পথ তো মন্ত্রী নিজে দেখিয়েইছেন। শুধু তা-ই নয়, নিজের ধূমপান-আসক্তির কথা এ ভাবে বলে তামাক-জাত দ্রব্যের বিক্রির পথও বাড়িয়ে দিলেন তিনি।
ক’দিন আগে ধূমপানে মদত দেওয়া নিয়ে বিজেপিরই এক সাংসদের মন্তব্যে প্রবল বিতর্ক হয়েছিল। দিলীপ কুমার গাঁধী নামে ওই সাংসদ দাবি করেন, তামাক খেলে ক্যানসার হয়—এ দেশে এখনও সে রকম কোনও গবেষণা হয়নি। দিলীপ কুমারের কথা নিয়ে বিতর্কের রেশ শেষ হওয়ার আগেই ফের এ নিয়ে শোরগোল ফেলে দিলেন রাজু।
তেলুগু দেশম পার্টির প্রবীণ নেতা অশোক গণপতি রাজু। তাঁর দল এখন কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ শরিক। দায়িত্ব নেওয়ার পর সেপ্টেম্বরে এই বিমানমন্ত্রীরই প্রশংসা হয়েছিল দেশ জুড়ে। সে সময় তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর নিরাপত্তার নামে অযথা অন্য বিমানযাত্রীদের যেন হয়রান করা না হয়।
একদা ভিআইপি সুবিধে নিতে অস্বীকার করেছিলেন। সেই তিনি-ই এখন ক্ষমতার সুবাদে আইন ভাঙছেন নিশ্চিন্তে। এক মন্ত্রীর দুই রূপ দেখে তাই বিস্ময় কাটছে না অনেকেরই।