ছুটিতে গ্রামে ফিরে মুখিয়া দিল্লির গবেষক

দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈব-প্রযুক্তি নিয়ে এমএসসি করার পরে ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছিলেন পাকুড়ের বছর পঁচিশের ওই তরুণী। চলছিল আইএএস পরীক্ষা প্রস্তুতিও। কয়েক দিন আগে ছুটিতে তিনি ফেরেন নিজের গ্রাম ইলামিতে। তখনই আচমকা বদলে যায় মিসফিকার জীবন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

ইলামি গ্রামে নিজের বাড়িতে মিসফিকা। — নিজস্ব চিত্র।

দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈব-প্রযুক্তি নিয়ে এমএসসি করার পরে ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছিলেন পাকুড়ের বছর পঁচিশের ওই তরুণী। চলছিল আইএএস পরীক্ষা প্রস্তুতিও। কয়েক দিন আগে ছুটিতে তিনি ফেরেন নিজের গ্রাম ইলামিতে। তখনই আচমকা বদলে যায় মিসফিকার জীবন।

Advertisement

গ্রামে সেই সময় পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি চলছিল। মুখিয়া পদের জন্য মনোনয়ন জমা দিচ্ছিলেন প্রার্থীরা। মিসফিকাকে চেনেন গ্রামের সবাই। যে কোনও কাজে ওই তরুণী এগিয়ে যেতেন সব সময়। কয়েক জন গ্রামবাসী তাই তাঁকেও নির্বাচনের ময়দানে নামার অনুরোধ জানান।

দ্বিধায় ছিলেন মিসফিকা। কিন্তু আত্মীয়-বন্ধুদের আর্জিতে না করতে পারেননি। ‘নারকেল’ চিহ্ন নিয়ে তিনি ভোট-যুদ্ধে নেমে পড়েন। ইলামি গ্রামের মুখিয়া পদটি মহিলা সংরক্ষিত। চার দফায় ভোটগ্রহণ করা হয়। ফলপ্রকাশের দিন জানা যায়— মিসফিকাকেই সমর্থন করেছেন বেশিরভাগ ভোটার।

Advertisement

ঝাড়খণ্ডের পঞ্চায়েত ভোটে কোনও রাজনৈতিক দল লড়াই করে না। মিসফিকা জানান, কোনও দিন তিনি রাজনীতি করেননি। কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান সব সময়। মুখিয়ার আসনে বসার পর এ বার তাই ইলামিকে ‘মডেল গ্রাম’ হিসেবে গড়তে চান মিসফিকা। ফোনে

ঝরঝরে বাংলায় তিনি বলেন, ‘‘ইলামির ভোলবদলে যা যা করতে হয় করব। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও সাহায্য চাইব। পাঁচ বছরের মধ্যে ইলামিকে মডেল গ্রাম করতেই হবে।’’

মিসফিকার কাহিনির সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে ছবি রাজাওয়াতের। পুনের কলেজ থেকে এমবিএ ডিগ্রি পাওয়ার পর এ দেশের প্রথম সারির কয়েকটি সংস্থায় চাকরি করেছিলেন তিনি। এক দিন আচমকা বদলে যায় ছবির জীবন। রাজনীতির ধারেকাছে না থাকলেও, মানুষের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন বছর আটত্রিশের ওই মহিলা। ছোটবেলা কেটেছিল রাজস্থানের জয়পুরে। ওই শহরের ৬০ কিলোমিটার দূরের সোরা গ্রামের বাসিন্দারা কয়েক বছর আগে তাঁকেই সরপঞ্চ নির্বাচিত করেন। দু’দশক আগে সোরার সরপঞ্চ ছিলেন ছবিদেবীর ঠাকুর্দা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিংহ। এখনও গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য কাজ করে চলেছেন ছবিদেবী।

রাজস্থানের ওই মহিলার মতোই ইলামির সদ্য-নির্বাচিত মুখিয়ার বক্তব্য— তাঁদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। রাস্তাঘাট খারাপ। সব বাড়িতে নেই শৌচাগার। তিনি চান, সব চেয়ে প্রথমে গ্রামে বিদ্যুৎ নিয়ে আসতে। প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরিও তাঁর লক্ষ্য।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ১৮৭ ভোটে পরাজিত করেছেন মিসফিকা। তাঁর জয়ে খুশি গ্রামবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা কাসিম আনসারি বলেন, ‘‘মিসফিকা উচ্চশিক্ষিতা। গ্রামের সবাইকে ভালবাসেন। উনি আমাদের জন্য ভাল কিছু করবেনই।’’

মেয়েকে ভোট ময়দানে নামতে প্রথমে মানা করেছিলেন লুথফুল হক। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে পড়াশোনায় খুব ভাল। আমি চাই ও আইএএস অফিসার হোক। কিন্তু গ্রামের পরিচিতদের জোরাজুরির পরে মানা করিনি। মুখিয়া যখন হয়েছে, তখন মেয়েকে গ্রামের উন্নয়নের জন্য কাজ করার উৎসাহ দেব।’’

আইএএস হওয়ার স্বপ্ন কি তবে মুছে ফেললেন?

মিসফিকার জবাব, ‘‘ক্যানসার নিয়ে গবেষণার কাজটা আপাপত স্থগিত রেখেছি। তবে আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবই। তাতে পাশ করতেই হবে। আইএএস অফিসার হয়ে দেশের সেবা করার আগে গ্রামের উন্নয়ন করে যেতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন