মদে মানা নেই মিজোরামে

প্রায় দুই দশক ধরে রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করে না কমেছে লিভারের রোগ, না কমেছে নেশাড়ুর সংখ্যা। মাঝখান থেকে, প্রতি বছর ৩০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে মিজোরাম। পকেট ফুলেছে কালোবাজারিদের পকেটে। মদের বিকল্প খুঁজতে বিভিন্ন ক্ষতিকর নেশার দিকে ঝুঁকেছে নতুন প্রজন্ম। অবশেষে তাই গির্জার তীব্র বিরোধ অগ্রাহ্য করেই, ‘ড্রাই স্টেট’-এর তকমা ফের ঝেড়ে ফেলল মিজোরামে। গির্জা ও সরকারের চরম বিরোধের মধ্যেই মদ বিক্রি আইনসিদ্ধ হল রাজ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০৪:০৩
Share:

প্রায় দুই দশক ধরে রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করে না কমেছে লিভারের রোগ, না কমেছে নেশাড়ুর সংখ্যা। মাঝখান থেকে, প্রতি বছর ৩০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে মিজোরাম। পকেট ফুলেছে কালোবাজারিদের পকেটে। মদের বিকল্প খুঁজতে বিভিন্ন ক্ষতিকর নেশার দিকে ঝুঁকেছে নতুন প্রজন্ম। অবশেষে তাই গির্জার তীব্র বিরোধ অগ্রাহ্য করেই, ‘ড্রাই স্টেট’-এর তকমা ফের ঝেড়ে ফেলল মিজোরামে। গির্জা ও সরকারের চরম বিরোধের মধ্যেই মদ বিক্রি আইনসিদ্ধ হল রাজ্যে।

Advertisement

খোদ বিল পেশ করা আবগারী মন্ত্রী লাল জিরলিয়ানা প্রেসবিটেরিয়ান গির্জার সদস্য। তিনি নিজে, এই বিল পেশ করার আগে, গত রবিবার স্থানীয় গির্জার গণপ্রার্থনায় অংশ নিয়ে যিশুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। বলেন, “আমি ঈশ্বরকে বলেছিলাম তিনি সত্যিই বিলের বিরুদ্ধে থাকলে আমি যেন বৃহস্পতিবার বিল পেশ করতে না পারি। কিন্তু, ঈশ্বর আমাকে আটকাননি। উপযুক্ত বয়সের মদ্যপায়ীদের ভাল মানের মদ দিতে চলেছি আমরা। মদে ভেজাল মেশালে বা বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি করলে, মদ খেয়ে গোলমাল বাধালে ও গাড়ি চালালে কড়া সাজা দেওয়া হবে।”

গির্জার চাপে, ১৯৯৫ সালে ‘মিজোরাম লিকর টোটাল প্রহিবিসন অ্যাক্ট’ (এমএলটিপি) চালু হয়েছিল। কিন্তু, মদ্যপান বন্ধ হয়নি। বরং, পড়শি রাজ্য থেকে আনা মদ বহুগুণ বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে। নেশার টানে মিজোরা বিভিন্ন বিকল্প সন্ধান শুরু করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ছিল চামড়া পচানো জল, তামাক জারিত করা জল ও মেথ। গত ৯ জুলাই, সিআইডি এবং বিএসএফ, আইজলের বেথেলহেম ভেং থেকে নতুন ধরনের ৫২ পুরিয়া মেথ (ডব্লিউ ওয়াই) উদ্ধার করে। বাজারে যার দাম প্রায় ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। চলতি বছরে তিন দফায় পুলিশ ১ লক্ষ ৪৫ হাজার মেথ ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। জারিত তামাকে ঘি মিশায়ে তৈরি এক রকম নেশাদ্রব্যের চল রয়েছে এ রাজ্যে। এর প্রভাবে বহু তরুণ-তরুণী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বিষ মদ পান করে বহু যুবকের মৃত্যুও হয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে, মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা বেশ কিছু দিন ধরেই মদ্যপান ও বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছিলেন। কিন্তু, গির্জার চাপে রাজনৈতিক দলগুলি যে রাজ্যে ভোটের প্রচারও চালাতে পারে না, সেখানে, গির্জাকে অগ্রাহ্য করা মুখের কথা ছিল না। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে, রাজ্যে উৎপাদিত আঙুর থেকে জাওলাইদি ওয়াইন তৈরির সম্মতি আদায় করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, গির্জার আপত্তিতে তা বিক্রির ব্যবস্থা করা যায়নি। অবশ্য, রাজ্যের বেশ কিছু মন্ত্রী-বিধায়ক-আমলা থেকে শুরু করে আম জনতা বাড়িতে লুকিয়ে মদ্যপান চালাচ্ছিলেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর মদ্যপানের ছবি ফাঁস হওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়াও হয়। গত ৭ জুলাই, সিনড ও প্রেসবিটেরিয়ান গির্জা একযোগে আইন প্রত্যাহার বা শিথিল করায় আপত্তি জানায়। মদ নিষিদ্ধ করার আইন প্রতাহার করার প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আইজলে বহু পোস্টারও পড়ে।

তবু গির্জার নিষেধ না মেনেই গত কাল নিষেধাজ্ঞা তোলার বিলটি বিধানসভায় পেশ করেন আবগারী ও মাদক বিষয়ক মন্ত্রী আর লালজিরলিয়ানা। যার ফল জানতে গোটা রাজ্য নজর রেখেছিল টিভিতে। ৪০ জন বিধায়কের মধ্যে ২৫ জন বিতর্কে অংশ নেন। তীব্র বাদানুবাদ ও ৬ জন বিরোধী বিধায়কের ওয়াক-আউটের পরে, বিলটি পাশ হয়। আগের আইন প্রত্যাহার করে সরকার কী গির্জার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে গেল? মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “আমরা সংঘাত সৃষ্টি করতে নয়, বিষ মদ থেকে মানুষকে বাঁচাতে চাইছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন