শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে হলফনামায় ভুয়ো তথ্য দেওয়ায় মণিপুরের পর্যটন দফতরের পরিষদীয় সচিব তথা মইরাংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক এম পৃথ্বীরাজ সিংহের বিধায়ক পদ বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে হাইকোর্ট পৃথ্বীরাজের বিধায়কপদ বাতিল করায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখল। অবশ্য তাতেও বিশেষ দমছেন না পৃথ্বীরাজ। তিনি জানান, সামনের বছর নির্বাচনে তিনি মইরাং থেকে লড়ে ফের জিতবেন।
২০০৭ সালের নির্বাচন থেকেই পৃথ্বীরাজ নিজেকে মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ হিসেবে দাবি করে হলফনামা পূরণ করছেন। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেতেন তিনি। ভুয়ো তথ্য দেওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী এনসিপি প্রার্থী, পি শরৎচন্দ্র পৃথ্বীরাজের হাইকোর্টে মামলা ঠোকেন। চার বছর মামলা চলার পরে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট জানায়, পৃথ্বীরাজের এমবিএ ডিগ্রি ভুয়ো। জনতা ও নির্বাচন কমিশনকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য দেওয়ায় তাঁর বিধায়কপদ বাতিল হয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান পৃথ্বীরাজ। লাভ হয়নি।
সু্প্রিম কোর্টের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং বিচারপতি অনিলা আর দাভের ডিভিশন বেঞ্চ গত কালের রায়ে জানিয়েছেন, প্রার্থীর প্রকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতা জানার অধিকার ভোটারদের আছে। কিন্তু পৃথ্বীরাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে: জেরায় পৃথ্বীরাজ জানিয়েছেন, তিনি মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন কিনা তা মনে করতে পারছেন না। এমন কী আদৌ এমবিএ ডিগ্রি তাঁর আছে কিনা, তাও তাঁর স্মরণে নেই। তিনি দোষ চাপিয়েছেন তাঁর হয়ে হলফনামা তৈরি করা প্রতিনিধি ও যান্ত্রিক ত্রুটির উপরে। কিন্তু হলফনামার ২৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করা চাকপাম বিশ্বজিৎ সিংহ দাবি করেন, তিনি পৃথ্বীরাজ ও তাঁর নির্বাচনী এজেন্টের কথা মতোই মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি পাওয়ার কথা লিখেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের মতে, ইচ্ছাকৃত ভাবেই ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাই বিধায়ক হিসেবে পৃথ্বীরাজের নির্বাচনই বাতিল করা হল।
আগামী বছরের গোড়াতেই মণিপুর বিধানসভার নির্বাচন। তাই আপাতত উপনির্বাচন হবে না মইরাং আসনে। তবে হাইকোর্টের পরে সুপ্রিম কোর্টেও জয় পেয়ে খুশি শরৎচন্দ্র।
তবে আদালতের রায়ে মিথ্যাচারের দায়ে বিধায়কপদ হারিয়েও ‘লজ্জিত’ নন পৃথ্বীরাজ। বরং এখন তিনি মণিপুরের বাড়িতে বসে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করছেন, গোটা ব্যাপারটাই সামান্য ‘ক্ল্যারিকাল মিসটেক’। তিনি আসলে চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছিলেন। ভুল করে মহীশূর লেখা হয়েছে। আদালতের রায় আগের নির্বাচন নিয়ে। তাঁর দাবি, আগামী নির্বাচনে এই রায়ের কোনও প্রভাব পড়বে না। এবং আগামী নির্বাচনে হলফনামা লিখবেন সতর্ক হয়েই।