মোদী-মোকাবিলা না রাহুল-উত্থান? লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন

গেরুয়া পতাকায় মোড়া রামলীলায় দাঁড়িয়ে বিরোধীদের অনৈক্যের মুখোশটি খুলে দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৪
Share:

রামলীলা ময়দানের জনসভায় মোদী। ছবি: পিটিআই।

ঠিক এক সপ্তাহ আগে ‘আমার নাম রাহুল সাভারকর নয়, রাহুল গাঁধী’ বলে দিল্লির রামলীলা ময়দানের সভায় কংগ্রেস কর্মীদের উজ্জীবিত করেছিলেন কংগ্রেস নেতা। এক সপ্তাহ পরে ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তেমনই এক মুহূর্ত তৈরি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গেরুয়া পতাকায় মোড়া রামলীলায় দাঁড়িয়ে বিরোধীদের অনৈক্যের মুখোশটি খুলে দিলেন।

Advertisement

নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড়। অমিত শাহের কথামাফিক এর পর গোটা দেশে আসবে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)। তা নিয়েও আশঙ্কা তুঙ্গে। কিন্তু যদি বিরোধীরা একজোট হয়ে রাজ্যসভায় বিলটি আটকে দিতেন তবে নাগরিকত্ব আইন তৈরিই হত না। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। কিন্তু উচ্চকক্ষে তো নয়। তাই মোদী আজ গোটা রামলীলাকে দাঁড় করালেন সংসদ ও সাংসদদের ‘সম্মান’ জানাতে। ‘মোদী-মোদী’ ধ্বনি তুলে জনতাও কুর্নিশ জানালেন প্রধানমন্ত্রীকে।

কিন্তু বিরোধীরা জানেন, আসলে তাঁদেরই মুখোশ খুললেন মোদী। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিরোধী শিবিরের এক নেতা বললেন, ‘‘শরদ পওয়ার প্রকাশ্যেই বলেছেন, বিজেপির বিকল্প এক জন নেতা দরকার। এমন এক জন যিনি দেশে থাকবেন। বিরোধী শিবিরে সবচেয়ে বড় দল কংগ্রেস। তার প্রধান নেতা রাহুল গাঁধী। অথচ তিনিই ইস্তফা দিয়ে বসে আছেন। আবার পদে ফেরার তোড়জোড় হচ্ছে। কিন্তু দেশে থাকার নাম নেই।’’

Advertisement

আজ যখন রামলীলায় জনসভা করলেন নরেন্দ্র মোদী, সেই সময়ে রাজঘাটে সনিয়া গাঁধী-রাহুল গাঁধীরা শান্তিপূর্ণ ধর্নায় বসার পরিকল্পনা করেছিলেন। পুলিশ অনুমতি দেয়নি। কারণ, আজ মোদীর সভা নিয়েই এমনিতেই ব্যস্ত তারা। ফলে সেটি পিছিয়ে গিয়েছে সোমবার পর্যন্ত। আগামিকাল বেলা তিনটের পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত কংগ্রেস নেতাদের বসার কথা রাজঘাটে। কিন্তু এত দিন পর কেন? দেশ উত্তাল গত কয়েকদিন ধরেই? প্রধান বিরোধী দল হয়েও কংগ্রেস কেন পথে নেই? প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা এর মধ্যে দু’দিন কিছু ক্ষণের জন্য দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে বসেছেন ছাত্রদের সঙ্গে। কিন্তু বাকিরা?

এই প্রশ্নগুলি কংগ্রেসের অন্দরেই উঠছে। আবার দলের অন্দর থেকে উত্তরও আসছে। উত্তর হল, ‘‘সনিয়া গাঁধী এত দিন দলের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নেননি, কারণ রাহুল ছিলেন বিদেশে।’’ কিন্তু তাতে আরও প্রশ্ন উঠছে। দু’মাস আগে দেশের আর্থিক ঝিমুনির বিরুদ্ধে কংগ্রেস রামলীলাতে বড় জনসভা করার পরিকল্পনা করেছিল। পিছিয়ে দেন সনিয়া। এক বার নয়, দু’বার। কেন? রাহুল গাঁধী দেশে ছিলেন না। সেই সভা হয়েছে গত সপ্তাহে। আর সেই সভার পরে ‘অফিসিয়াল’ সফর বলে কোরিয়া চলে গিয়েছেন রাহুল।

কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘দলের মধ্যে একটি বিষয় এখনও স্পষ্ট নয়। নরেন্দ্র মোদীর মোকাবিলা করাই কি কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য না কি বারংবার রাহুল গাঁধীর উত্থান কী ভাবে হবে, সেটি স্থির করা? যদি তা না হয়, তাহলে কেন বারবার কোনও বড় কর্মসূচির জন্য রাহুলের দেশে ফেরার অপেক্ষা করা হবে? নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিভাজনের রাজনীতি থেকে মোড় ঘুরিয়ে বেহাল অর্থনীতির দিকে নিয়ে আসা উচিত ছিল রাহুল গাঁধীর। কিন্তু রামলীলা সভায় সাভারকরের নাম বলে সে কৌশলও বানচাল করে দিয়েছেন তিনি!’’

রাহুল অবশ্য আজ মোদীর বক্তৃতা শুরু হতেই টুইট করেন দেশের যুবকদের উদ্দেশে। জানান, মোদী-শাহ তাঁদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছেন। বেকারি, অর্থনীতির ক্ষতি নিয়ে যুবকদের ক্রোধের মোকাবিলা তাঁরা করতে পারবেন না। তাই তাঁরা বিভাজনের কথা বলছেন, ঘৃণার পিছনে লুকোচ্ছেন। মোদীর বক্তৃতা শেষে ছাত্রদের উদ্দেশেও একই সুরে আর একটি টুইট করেন রাহুল। প্রিয়ঙ্কা অবশ্য আজ ছুটে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন