National News

জিএসটি-র জন্য মধ্যরাতের অধিবেশন ডাকলেন মোদী

আসলে, নেহরুর আদর্শগত জায়গায় ছিল ভারত গড়ার স্বপ্ন। ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদীও বার বার জানিয়েছেন, তাঁর পাখির চোখ আসলে নতুন ভারত গড়ে তোলা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ১৯:৫১
Share:

প্রাক্তন ও বর্তমান। ছবি: সংগৃহীত।

গুরুত্বের নিরিখে হয়তো কোনও মিল নেই। কিন্তু, আনুষ্ঠানিকতার বহরে ৭০ বছর আগের এক রাতে ফিরে যেতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

আগামী ৩০ জুন মাঝরাতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে বসছে বিশেষ এক অধিবেশন। উপলক্ষ, অভিন্ন পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি)। দেশের স্বাধীনতা লাভের মুহূর্তে মধ্যরাতে সংসদে ভাষণ দেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। স্বাধীনতা প্রাপ্তির সঙ্গে কোনও ভাবেই মিল নেই। কিন্তু, জিএসটি নিয়ে ফের মধ্যরাতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে মোদী কি এটাই বলতে চাইছেন, দেশ ফের এক বার পুরনো থেকে নতুনের পথে যাত্রা শুরু করছে!

আরও পড়ুন, কর্পোরেট বন্ডে বাড়তি সুদ মিলতে পারে

Advertisement

টিক যেমনটা বলেছিলেন জওহরলাল নেহরু। সেই রাতে দেশবাসীর উন্মাদনা তুঙ্গে। সদ্য স্বাধীন হয়েছে দেশ। তার মধ্যেই জাতির উদ্দেশে সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নেহরু ভাষণ দিচ্ছেন। ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট মধ্যরাতে সংসদের ওই অধিবেশনে নেহরু বলেছিলেন, ‘রাত ঠিক ১২টায় গোটা বিশ্ব যখন নিদ্রামগ্ন, তখন ভারতবর্ষ স্বাধীন নব জীবনে জাগ্রত হবে। একটি পরম ক্ষণ সমাগত। এই পরম ক্ষণে আমরা পুরনো থেকে নতুনের দিকে যাত্রা করছি। একটি যুগের অবসান হচ্ছে...’। নতুন ভারতের জন্ম ক্ষণে সেই রাত ছিল সত্যি সত্যিই নতুন যুগে প্রবেশের শুভ ক্ষণ।


১৬ অগস্ট, ১৯৪৭-এর আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতা

জিএসটি চালু হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তকে তেমন ভাবেই দেখতে চাইছে বিজেপি। ৩০ জুনের রাতকে বিশেষ ভাবে বরণ করা হবে সংসদের সেন্ট্রাল হলে। রাত ১১টায় শুরু হওয়া ওই অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি-সহ কেন্দ্রের উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্তারা। এ ছাড়া ওই অধিবেশনে প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং এইচডি দেবেগৌড়াকেও। সব দলের শীর্ষ রাজনীতিকদের পাশাপাশি ওই অধিবেশনে হাজির থাকবেন জিএসটি কাউন্সিলের সদস্যরাও। রাত ১২টা ১০ পর্যন্ত ওই অধিবেশন চলবে। সেই রাতের সঙ্গে কোনও ভাবে ধারে ও ভারে এই রাতের তুলনা চলে না। তবুও, মোদী সরকার আড়ম্বরের জায়গায় কোনও ত্রুটি রাখতে চাইছে না। জিএসটি চালু হওয়ার দিন মাঝরাতে সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডেকে গোটা বিষয়টাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাইছে তারা। অবধারিত ভাবেই স্বাধীনতা প্রসঙ্গের উল্লেখ না করেই মোদী মনে করিয়ে দেবেন, এ-ও এক পরম ক্ষণ। যে ক্ষণে পুরনো থেকে নতুনের দিকে যাত্রা করছে দেশ। একটি যুগের সূচনা হচ্ছে।

দেখুন নেহরুর সে দিনের সেই ভিডিও:

আসলে, নেহরুর আদর্শগত জায়গায় ছিল ভারত গড়ার স্বপ্ন। ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোদীও বার বার জানিয়েছেন, তাঁর পাখির চোখ আসলে নতুন ভারত গড়ে তোলা। বিজেপি-র দাবি সেই লক্ষ্যে মোদী ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন। তারই অন্যতম এই জিএসটি। এর ফলে, দেশ এক নতুন দিশায় দৌড়বে। ঠিক স্বাধীনতা লাভের পর যেমনটা ভাবা হয়েছিল। আর সে কারণেই নাকি মোদী বস্তুত, স্বাধীনতার জন্ম ক্ষণের মতো করে আনুষ্ঠানিকতার বহরে জিএসটির জন্মকে মিলিয়ে দিতে চাইছেন।

আরও পড়ুন, জিএসটি-র রিটার্ন জমার নিয়ম শিথিল

যদিও কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, জিএসটির ভাবনা আসলে তাদেরই। প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ওই সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবনা এই জিএসটি। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহেরও তাতে সায় ছিল। তাদের দাবি, মোদীর আমলে শুধু সেটা কার্যকরী হচ্ছে। এর কোনও কৃতিত্বই বিজেপি-র নয়। বিজেপি যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তারা আপাতত ৩০ জুনের অপেক্ষায়।

নেহরু ওই ভাষণে বলেছিলেন, ‘যে ধর্মেরই হই না কেন, আমরা ভারতমায়ের সন্তান। আমাদের সকলের সমান অধিকার।’ নেহরুর জুতোয় যদি সত্যিই পা গলিয়ে থাকেন মোদী, যাত্রাটা একই পথে থাকবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন