বিশেষ বিমানেও কাজের পাহাড়ে ডুব প্রধানমন্ত্রীর

শুধু সরকার নয়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমানের কর্মসংস্কৃতিও বদলে ফেলছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বিমানে সাংবাদিকদের সফরসঙ্গী করার রেওয়াজ বন্ধ করে দিয়েছেন মোদী। যে সব আমলা তাঁর সঙ্গে সফর করেছেন তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ানের ছবিটিও বদলে গিয়েছে।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

শুধু সরকার নয়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমানের কর্মসংস্কৃতিও বদলে ফেলছেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বিমানে সাংবাদিকদের সফরসঙ্গী করার রেওয়াজ বন্ধ করে দিয়েছেন মোদী। যে সব আমলা তাঁর সঙ্গে সফর করেছেন তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ানের ছবিটিও বদলে গিয়েছে। সেখানেও সর্ব ক্ষণ ফাইলে ডুবে থাকেন নরেন্দ্র মোদী। সফরের দৈর্ঘ্য যত বেশি, তত বেশি কাজ। সব মন্ত্রকের উপরে দখল রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের এখন অনেক কাজ। প্রধানমন্ত্রী তাই বিমান সফরের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন বকেয়া কাজ মেটাতে।

আগামিকালই আমেরিকা পাড়ি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। একশো ঘণ্টার মার্কিন সফরে পঞ্চাশটিরও বেশি কর্মসূচি নিয়েছেন তিনি। মোদীর পূবসূরিদের সঙ্গে তুলনা করে সরকারের এক শীর্ষ আমলা বলেন, “এত ঠাসা কর্মসূচি নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে সফর করতে দেখিনি আমরা। মোদী যখন বিদেশ সফর করেন, তখন কার্যত গোটা সচিবালয়টিই তাঁর সঙ্গে যায়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পাশাপাশি বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা এবং অন্যান্য মন্ত্রকের আমলারাও থাকেন কখনও-সখনও। প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সচিবালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন নিরন্তর।”

Advertisement

এক কূটনীতিকের কথায়, আগে যেমন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সময় সংবাদমাধ্যমের একটি বড় গোষ্ঠী সফর করত, এখন সেই চল নেই। মনমোহন সিংহও প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় অন্তত ফেরার পথে একবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতেন। এখনও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর বিদেশ সফরের সময় সাংবাদিকদের নিয়ে যান। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতাও করেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সেই সব বালাই নেই। ফলে গোটা সময়ই তিনি মজে থাকেন কাজে। তিনি সাধারণত গুজরাতি খাবারই পছন্দ করেন। তাঁর জন্য সচিবালয় থেকেই গুজরাতি খাবার আসে। কিন্তু কাজের ফাঁকে তাঁকে খাওয়ার জন্য রীতিমতো তাগাদা দিতে হয়। বিমানে সিনেমা দেখা, গান শোনার অবকাশ থাকে। কিন্তু সেই সবের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে।

প্রধানমন্ত্রী সচিবলায়ের সূত্রের মতে, সংবাদমাধ্যমকে না নিয়ে যাওয়ার পিছনে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। তিনি মনে করেন, আজকের আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তথ্য পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই সফর করতে হবে, তার কোনও মানে নেই। তার উপর যাদের নেওয়া হবে না, তাদের গোসা হবে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সময় থেকে সমস্ত পূর্বসূরিদের রেওয়াজ বিশ্লেষণ করেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের কর্তাদের মোদী জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে কোনও বিদেশ সফর থেকে ফেরার পরে তিনি দিল্লি বিমানবন্দরে সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে যে-হেতু সাংবাদিকদের বিশেষ মুখোমুখি হতে চাইছেন না, মন্ত্রী ও আমলারাও এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন।

অতীতে বিশেষ বিমানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফর করলে অন্য মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের যে আলাপচারিতার সুযোগ থাকত, এখন তা-ও নেই। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও নির্দেশ দিয়েছেন, বাকি সব কিছু ভুলে শুধু কাজের উপরে নজর দিতে। ফলে গোটা বিমানটিই আসলে ‘সরকার’-এর একটি অংশ হয়ে উঠেছে। মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কথায়, অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে গোটা বিশ্বে ভারতের জায়গা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নরেন্দ্র মোদী দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। আর এর জন্য তিনি নিজে যেমন কাজ ছাড়া কিছু জানেন না, মন্ত্রী ও আমলাদেরও সেই পথে পরিচালিত করতে চাইছেন। সব মন্ত্রীও তাঁদের মন্ত্রকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে চাইছেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সচিবালয়ের কাজ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তাতে অবশ্য কোনও আপত্তি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন