আগামী বছরের লোকসভা ভোটের আগে মোহনদাস গাঁধীর সার্ধশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে রাজনীতি সরগরম। এর আগে গাঁধীর চম্পারণ যাত্রার শতবার্ষিকী নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন রাহুল গাঁধী। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এ বার বললেন—গাঁধীর ঘাতকেরাই গাঁধী পুজোয় মেতেছেন!
গাঁধীর সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অধিকাংশ অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যাননি। তবে দেখা গেল এক ঝাঁক আরএসএস নেতাকে। অমিত শাহ ছাড়া ছিলেন দত্তাত্রেয় হোসবলে, গুরু রবিশঙ্কর-সহ সঙ্ঘ বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনুগামী হিসেবে পরিচিত অন্তত ১৫ জন নেতা। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই পটেলকে ডাকা হলেও গাঁধীর পরিবারের গোপাল গাঁধী, রাজমোহন গাঁধী বা তারা গাঁধীদের কিন্তু কমিটিতে রাখা হয়নি।
বিজেপি সূত্রের খবর, গাঁধী স্মরণ কর্মসূচি এমন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে ২০১৯-এর মে মাসের আগেই সব অনুষ্ঠান সেরে ফেলা যায়। এই অনুষ্ঠানগুলিতে আরএসএস রাজ্যওয়াড়ি সংগঠনকে যেমন কাজে লাগাবে, থাকবেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা-কর্মীরাও।
সূত্রের খবর, বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। এই কর্মসূচি পালনের জন্য পৃথক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হবে। আলোচনার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মমতাকে বলেন, ‘‘দিদি, রোজ ১০ কিলোমিটার করে হাঁটছেন তো?’’ মমতা বলেন, ‘‘আরও অনেক বেশি। ২৫ কিলোমিটার করে!’’ সুতরাং বৈঠকের আবহ বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। তার পরেও বৈঠকে হাজির নবীন পট্টনায়ক বা নীতীশ কুমারের ধারণা হয়েছে, গাঁধী নিয়ে হইচই ফেলে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার অভিযোগকে ধূলিসাৎ করতে চাইছে কেন্দ্র। নবীন বলেছেন, ‘‘দেশের রাজনৈতিক আবহকে ধর্মনিরপেক্ষ ও সহিষ্ণু করে তুলতে পারলেই আমরা গাঁধীকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে পারব।’’
তবে গত কাল মমতা বৈঠকে জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত বছরের অক্টোবরেই কমিটি গঠন করে গাঁধীর সার্ধশতবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী ২ অক্টোবর থেকেই অনুষ্ঠান শুরু হবে। গাঁধীর স্মৃতিবিজড়িত বেলেঘাটার বাড়ি ২ অক্টোবর রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করবে। তাম্রলিপ্তে গাঁধীর স্মৃতিকে মাথায় রেখে মেদিনীপুরে অনুষ্ঠান হবে। ব্যারাকপুরের গাঁধীঘাটেও অনুষ্ঠান হবে। মমতা বলেন, ‘‘মহাত্মা নামটি রবীন্দ্রনাথের দেওয়া। আবার গাঁধীজি তাঁকে ডাকতেন গুরুদেব বলে। তাঁদের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আরও গবেষণা হলে যথার্থ গাঁধী স্মরণ হবে।’’
সনিয়া গাঁধী, রাহুল আমন্ত্রণ পেয়েও বৈঠকে যাননি। কংগ্রেসের তরফে পাঠানো হয়েছিল গুলাম নবি আজাদকে। তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বৈঠকে ছিলেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সরকার যা করছে করুক, তারাও গাঁধী সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনে আলাদা কর্মসূচি নিচ্ছে।