অরবিন্দকে বিঁধতে মমতা-নাম প্রধানমন্ত্রীর

সমীক্ষা বলছে, পালে হাওয়া এ বারও আম আদমির। সেই সমীক্ষা দেখে ক্রমশ মনোবল ভেঙে পড়ছে তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের। এ ছাড়া রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদীকে নিয়ে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির দুর্গ হাসিলে মরিয়া নরেন্দ্র মোদী আজ ভোট-পূর্ব রাজধানীতে নিজের শেষ সভায় নতুন চাল দিলেন। অরবিন্দ কেজরীবালকে একঘরে করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share:

সমীক্ষা বলছে, পালে হাওয়া এ বারও আম আদমির। সেই সমীক্ষা দেখে ক্রমশ মনোবল ভেঙে পড়ছে তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের। এ ছাড়া রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদীকে নিয়ে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির দুর্গ হাসিলে মরিয়া নরেন্দ্র মোদী আজ ভোট-পূর্ব রাজধানীতে নিজের শেষ সভায় নতুন চাল দিলেন। অরবিন্দ কেজরীবালকে একঘরে করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করলেন তিনি।

Advertisement

সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নিত্য আক্রমণ শানাচ্ছেন মমতা। মোদী যেখানে উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতিকে বাধা হতে না দেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন, তখনও মমতার মনোভাবে বদল নেই। আসন্ন নীতি আয়োগের প্রথম বৈঠকেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর গরহাজিরার সম্ভাবনা প্রবল। তা সত্ত্বেও আজ কেজরীবালকে বিঁধতে যখন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ‘দেশসেবা’র উদাহরণ তুলে ধরেছেন মোদী, তখন প্রথমেই এসেছে মমতার নাম।

মোদীর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই হোন, কি মুলায়ম-মায়াবতী, কিংবা চন্দ্রবাবু নায়ডু। অথবা নবীন পট্টনায়ক বা নীতীশ কুমার এঁদের কাউকে গত লোকসভায় সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। কিন্তু এ কাদের ষড়যন্ত্র, যিনি (কেজরীবাল) নির্বাচন জিততে পারেন না, তাঁকে জেতানোর জন্য ২৪ ঘণ্টা মেহনত করা হয়েছে? সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা হয়েছে?”

Advertisement

বলা বাহুল্য, এই তোপের লক্ষ্য কেজরীবাল। গত লোকসভা ভোটে বারাণসীতে মোদীর কাছে হেরেছিলেন তিনি। ভোটের আগে কিছু সমীক্ষা বলেছিল, মোদী তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে হারবেন। বাস্তবে হয়েছিল উল্টো। কিন্তু এখন সেই অতীতও ভরসা দিচ্ছে না মোদীকে। কারণ, দিল্লির ভোট যত এগিয়ে আসছে, সমস্ত জনমত সমীক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছেন কেজরীবাল। আজ সন্ধ্যায় আম আদমি পার্টি-ও তাদের সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে বলে আপ পাবে ৫১টি আসন, বিজেপি ১৫টি, কংগ্রেস ৪টি।

বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, এই ধরনের সমীক্ষায় কর্মীরা যে মনোবল হারাচ্ছেন, মোদী তা জানেন। আজ তাই কর্মীদের চাঙ্গা করতে তিনি মনে করিয়েছেন, বিরূপ সমীক্ষা উল্টে দিয়ে একার ক্ষমতায় তিনি কেন্দ্রে সরকার গড়েছেন। মোদীর বক্তব্য, দিল্লির গত বিধানসভা ভোটের আগে সমীক্ষায় আপ-কে ৫০টি আসন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এক নম্বর দল হতে পারেনি আপ। আর বারাণসীতে তো তিনি হেরেইছেন। অথচ সেই সময়ে কিছু সংবাদমাধ্যম কেজরীবালকে তুলে ধরেছিল সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।

সেই সূত্র ধরেই মোদী বলেন, “ভারতে নেতা নেহাত কম নেই। তাঁদের সঙ্গে আদর্শগত মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, এমন নেতারা দেশের হিতের জন্য জীবন সমর্পণ করেছেন। নিজ-নিজ রাজ্যে তাঁদের গুরুত্ব আছে। মানুষ তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।” এর পরেই মমতা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রাক্তন ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীদের নাম করেন মোদী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ক্ষেত্রেও একটি কৌশল রয়েছে মোদীর। অতীতে অরবিন্দের ধর্না-রাজনীতির বিরুদ্ধে সংসদে সরব হয়েছিল প্রায় সব দলই। আজ বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতা-নেত্রীদের (যাঁদের মধ্যে আছেন মমতা-নীতীশের মতো কট্টর মোদী-বিরোধীরাও) নাম টেনে আখেরে অরবিন্দকে একঘরে করার চেষ্টা করলেন মোদী। বার্তা দিলেন, এঁরা কখনওই অরবিন্দের পাশে ছিলেন না।

আসলে প্রচলিত রাজনীতির ঘরানার বাইরে গিয়েই কেজরীবাল বিজেপিকে প্যাঁচে ফেলে দিচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞদের মত। লোকসভা ও তার পরে বিভিন্ন বিধানসভা ভোটে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েই ভোট টেনেছেন মোদী। কিন্তু দিল্লির ভোটের আগে দেখা যাচ্ছে, অরবিন্দের একান্ত ‘স্থানীয়’ রাজনীতি তাঁকে এগিয়ে দিচ্ছে। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ ও জলের দাম সস্তা করা কিংবা দুর্নীতি দমনের মতো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। কাজেই, ব্যক্তি কেজরীবালকে নিশানা করা ছাড়া যে উপায় নেই, টিম-মোদী তা বুঝতে পারছে।

এই অবস্থায় আপের বিরুদ্ধে ওঠা কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ নিয়েও তেড়েফুঁড়ে ঝাঁপাতে হয়েছে বিজেপিকে। অরুণ জেটলি এক নিবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, আজ যদি কেজরীবাল রাজস্ব বিভাগের অফিসার থাকতেন, তা হলেও কি একই প্রতিক্রিয়া দিতেন? জেটলির কথায়, “তিনি (কেজরীবাল) তাঁকে গ্রেফতার করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন। কিন্তু তিনি কি জানেন না, এটি ফৌজদারি দণ্ডবিধির আওতায় আসে না? এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয় আয়কর বিভাগ।” অর্থমন্ত্রীর কটাক্ষ, সুইস ব্যাঙ্ক থেকেও কালো টাকা চেকে নেওয়া যায়। তাতে অপরাধ লঘু হয় না।

তোপ চলছে অনেক। লক্ষ্যভেদ হবে তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন