কালো টাকা ফেরাবই, বার্তা মোদীর

কালো টাকা উদ্ধারে তাঁরা সঠিক পথেই এগোচ্ছেন। দেশবাসী যেন তাঁদের ‘প্রধান সেবক’-এর উপরে ভরসা রাখেন। জাতির উদ্দেশে বেতার-বার্তায় আজ এই আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কালো টাকার রহস্যভেদে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে বিশেষ তদন্তকারী দল। বিদেশি অ্যাকাউন্টের মালিকদের নামও জমা পড়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই নাম প্রকাশ করা না-করা নিয়ে টানাপড়েনে সরকারের বিরুদ্ধে ঢিলেমির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। সাম্প্রতিক বিতর্কে প্রথম বার মুখ খুলে আজ সেই অভিযোগই খারিজ করতে চাইলেন মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

কালো টাকা উদ্ধারে তাঁরা সঠিক পথেই এগোচ্ছেন। দেশবাসী যেন তাঁদের ‘প্রধান সেবক’-এর উপরে ভরসা রাখেন। জাতির উদ্দেশে বেতার-বার্তায় আজ এই আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

কালো টাকার রহস্যভেদে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে বিশেষ তদন্তকারী দল। বিদেশি অ্যাকাউন্টের মালিকদের নামও জমা পড়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই নাম প্রকাশ করা না-করা নিয়ে টানাপড়েনে সরকারের বিরুদ্ধে ঢিলেমির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। সাম্প্রতিক বিতর্কে প্রথম বার মুখ খুলে আজ সেই অভিযোগই খারিজ করতে চাইলেন মোদী। আর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তার জন্য বেছে নিলেন সনাতন গণমাধ্যম রেডিওকে। ক্ষমতায় আসার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার রেডিও-বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবং তিনি জানিয়েছেন, আগামী মাসেও তিনি একই ভাবে রেডিওর মাধ্যমে নিজের মনের কথা দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। শ্রোতারা যাতে অনুষ্ঠান শুনে নিজেদের মতামত জানাতে পারেন, সেই জন্য তাঁদের চিঠি লেখার ঠিকানাটিও বলে দেন মোদী।

‘মন কি বাত’ নামে আকাশবাণীর ওই অনুষ্ঠানে খাদি ব্যবহার, স্বচ্ছতা থেকে কালো টাকা একাধিক বিষয়কে ছুঁয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মূল প্রতিপাদ্য ছিল কালো টাকাই। লোকসভা ভোটের প্রচারে যে কালো টাকা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী স্বয়ং।

Advertisement

শ্রোতাদের ‘মেরে পেয়ারে দেশবাসীও’ সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা এই প্রধান সেবকের উপরে ভরসা রাখুন। আমি বিশ্বাস করি এ দেশের গরিব মানুষের যে টাকা বিদেশে গিয়েছে, তার প্রতিটি পয়সা দেশে ফেরত আসা উচিত। এটা আমার প্রতিশ্রুতি।” মোদী জানান, কী ভাবে টাকা ফেরত আসবে, তা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর কাছে যে তথ্য রয়েছে, তার ভিত্তিতে তিনি বলতে পারেন, সঠিক পথেই তাঁরা এগোচ্ছেন। বস্তুত, কী ভাবে ওই টাকা ফেরত আনা যাবে তা নিয়ে যেমন একাধিক মত রয়েছে, তেমনই বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ নিয়েও রয়েছে একাধিক পরিসংখ্যান। খোদ মোদীর কথায়, “না আপনি, না এই সরকার, না আগের সরকার কেউই জানে না, ঠিক কত টাকা বিদেশে রয়েছে। প্রত্যেকেরই কাছে নিজস্ব পরিসংখ্যান রয়েছে। আমি সেই পরিসংখ্যানে না গিয়ে বলতে চাই, যত টাকাই বিদেশে থাকুক, তা আমি এ দেশে নিয়ে আসব।” সাম্প্রতিক অতীতে কোনও প্রধানমন্ত্রী রেডিওর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, এমন দৃষ্টান্ত নেই। শুধু মনমোহন সিংহ নয়, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানাতেও এই উদ্যোগ দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটিও মোদীর অন্যতম ‘আউট অব দ্য বক্স’ প্রয়াস। ভবিষ্যতেও তাই দেখা যাবে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে দিল্লির বার্তা পৌঁছে দিতে মাঝেমধ্যেই আকাশবাণীকে মাধ্যম করছেন তিনি।

তবে টাকা ফেরানোর রাস্তা যে সহজ নয়, তা বিলক্ষণ জানেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। বিশেষত যখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ভারতের। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজও বলেন, “ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলির সঙ্গে চুক্তির ফলেই বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না তদন্ত শেষ হবে, ততক্ষণ ওই নাম প্রকাশ করা যাবে না। এতে চুক্তি ভঙ্গ হবে। যার ফায়দা পাবেন অ্যাকাউন্ট মালিকেরা।” এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসকেও আজ একপ্রস্ত কটাক্ষ করেছেন জেটলি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, কালো টাকা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আমেরিকারও একটি চুক্তি হতে চলেছে। সেই চুক্তি লঙ্ঘন হলে মার্কিন প্রশাসন পিছিয়ে যাবে। ফলে শুধু তথ্য যে পাওয়া যাবে না তা-ই নয়, কালো টাকাও উদ্ধারও অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এ দিকে, সিবিআইয়ের অধিকর্তা রঞ্জিৎ সিন্হা আজ জানিয়েছেন, কালো টাকা সংক্রান্ত তদন্তে সুবিধের জন্য সুইৎজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো কিছু দেশের ভারতীয় দূতাবাসে অফিসার মোতায়েন করতে চান তাঁরা। বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে ‘লেটার রোগেটরি’ (তদন্তে সাহায্য চেয়ে চিঠি) পাঠানোর বিষয়টি যাতে লাল ফিতের ফাঁসে আটকে না যায়, তাতেও জোর দিয়েছেন সিবিআই অধিকর্তা। তিনি বলেছেন, “আমরা বিশেষ তদন্তকারী দলকে একটি নোট দিয়েছি। কী কী পদক্ষেপ করলে তদন্তে সুবিধে হবে, তা জানিয়েছি।”

অবশ্য মোদী তো রেডিওতে বলেইছেন, তাঁর চেষ্টার কোনও ত্রুটি হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন