প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি- ইন্টারনেট।
দলিত বিতর্ক যখন বিজেপির পিছু ছাড়ছে না, পর্যাপ্ত দলিত কর্মী জড়ো করতে না পারায় খোদ অমিত শাহকেও সভা বাতিল করতে হচ্ছে, নিজের দলের সাংসদও প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করছেন- সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গেল মহাত্মা গাঁধী আর অহিংসা, প্রেম ও ক্ষমার কথা।
আজ তাঁর রেডিও বার্তা ‘মন কি বাত’-এ নরেন্দ্র মোদী তাঁর সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, সেই সফর নিছক কূটনীতি, বাণিজ্যের ছিল না। এটি ছিল এক প্রকারের তীর্থযাত্রা। মহাত্মা গাঁধী আর নেলসন ম্যান্ডেলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মোদী বলেন, ‘‘অহিংসা, প্রেম ও ক্ষমা- এই শব্দগুলি কানে পড়লেই এই দু’জনের কথা মনে পড়ে। গীতায় যে কর্তব্যের কথা বলা আছে, ‘সাম্য ও সমান সুযোগ’ যে কোনও সমাজ ও সরকারের কাছে এর থেকে বড় কোনও মন্ত্র হতে পারেনা।’’
গত কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে দলিতদের উপরে নিগ্রহের পর প্রধানমন্ত্রীর উপরে চাপ বাড়ছে। সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলার দাবি জানাচ্ছেন। দিল্লির বিজেপিরই সাংসদ উদিত রাজ দলিতদের উপর হিন্দু ধর্মের ‘তথাকথিত রক্ষক’দের বৈষ্যমের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তার প্রেক্ষিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল বিজেপির সব দলিত সাংসদদের ইস্তফা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। এরইমধ্যে আজ মোদীর রাজ্য গুজরাতে ক’দিন আগে প্রতিবাদের সময় আত্মহত্যার চেষ্টা করা এক দলিতের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ঘোরালো পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী আজ প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষে সংযমের বার্তা দিলেন। বোঝালেন, তাঁর সরকার ঐক্য ও সমান সুযোগের মন্ত্র নিয়েই এগোচ্ছে। আগামী ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় বক্তৃতার আগেও আম-জনতার পরামর্শ চেয়েছেন তিনি।
ক’দিন আগেই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির এক নেতা দয়াশঙ্কর সিংহ দলিত নেত্রী মায়াবতীর বিরুদ্ধে অপশব্দ ব্যবহার করেছিলেন। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর এক মন্তব্যের পর উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে বড়সড় ধাক্কা খেতে হয়েছে মোদী ও অমিত শাহকে। আজ আগরায় একটি বড় দলিত সভা করার কথা ছিল অমিত শাহের। সেখানে প্রায় ৪০ হাজার দলিতকে জড়ো করে নরেন্দ্র মোদীর বার্তা দেওয়ার কথা ছিল বিজেপি সভাপতির। কিন্তু এই সভাতে আসার ব্যাপারে দলিতদের উৎসাহ না দেখে সভা বাতিল করতে হয়েছে। দল আনুষ্ঠানিকভাবে অতিবর্ষণের দোহাই দিলেও বিজেপি সূত্রের মতে, দয়াশঙ্করের মন্তব্যের পর মায়াবতী অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এই সভা হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কর্মসূচিও প্রস্তুত রেখেছিলেন বহুজন সমাজ নেত্রী।
কাল থেকে সংসদের আবার অধিবেশন শুরু। সব বিরোধী দলের সমর্থন নিয়ে পণ্য ও পরিষেবা করের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিলটিও পাশ করানোর দায় রয়েছে সরকারের। কিন্তু দলিত ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েই গত সপ্তাহেই বিস্তর হাঙ্গামা করেছে বিরোধীরা। বিজেপি সূত্রের মতে, সে কারণেই পরিস্থিতি শান্ত করতে আজকে হাল ধরতে হল প্রধানমন্ত্রীকে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হল, সকলেই নিজের ও পরবর্তী প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চান। সকলের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকার ভিন্ন। কিন্তু সকলের পথই এক। আর সেটি হবে উন্নয়ন, সাম্য ও সমান সুযোগের মাধ্যমে। কিন্তু কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর এমন পরোক্ষ বার্তায় কী লাভ? দেশের সামনে তাঁকে এসে সুনিশ্চিত করতে হবে, দেশের কোনও প্রান্তে দলিতদের উপর কোনও অত্যাচার হবে না। আর এ ধরণের ঘটনা কঠোর হাতে মোকাবিলা করা হবে।
আরও পড়ুন- উত্তরাখণ্ডে ঢোকার আগে তিন বার ভারতের আকাশে হানা দিয়ে গিয়েছে চিন!