সভাপতি পদে থেকেই মোদীর মন্ত্রিসভায় শাহ

ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় আদালতের রায়ে গুজরাতে ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল বলে দিল্লিতে এসে থাকতে হয়েছিল। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আজ সেই দিল্লিতেই রাষ্ট্রপতি ভবনে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। 

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:১৫
Share:

নতুন দায়িত্ব: শপথ নিচ্ছেন অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার। রয়টার্স

আমদাবাদের নারাণপুরার সাংভি হাইস্কুলের পোলিং এজেন্ট। তার পর নারাণপুরা ওয়ার্ডের দলীয় সচিব। ধাপে ধাপে গুজরাতের বিধায়ক ও মন্ত্রী।

Advertisement

ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় আদালতের রায়ে গুজরাতে ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল বলে দিল্লিতে এসে থাকতে হয়েছিল। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আজ সেই দিল্লিতেই রাষ্ট্রপতি ভবনে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।

অসুস্থতার জন্য অরুণ জেটলি আর মন্ত্রী হতে রাজি হননি। সে ক্ষেত্রে প্রবল সম্ভাবনা, নতুন অর্থমন্ত্রী হতে পারেন অমিত। পুরোপুরি রাজনীতিতে নামার আগে বাবার ব্যবসা— শেয়ার কেনাবেচায় হাত পাকানো অমিতই তখন এ দেশের সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসেব কষবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাদ গত বারের অর্থমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, আরও যে মন্ত্রীরা জায়গা পেলেন না এ বার

এগারো নম্বর আকবর রোডে অমিতের বাসভবনের উঠোনে আজ সকালেই শামিয়ানা পড়েছে। কিন্তু বিজেপির ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির বাইরে গিয়ে সর্বভারতীয় সভাপতিকে সত্যিই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হবে কি না, তা নিয়ে নেতারাও প্রথমে কিছু বলতে পারেননি। শেষে বিকেল ৪টে ২৩ মিনিটে গুজরাত বিজেপির সভাপতি জিতু ভাগনানি টুইট করেন, মন্ত্রিসভায় যোগ দিচ্ছেন অমিত।

গুজরাতে সরকারের মন্ত্রী হিসেবে একাধিক দফতর সামলালেও একমাত্র শুল্ক ছাড়া আর কোনও অর্থনৈতিক দফতর হাতে পাননি অমিত। বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে বিএসসি পাশ করার পরে প্রথমে বাবা অনিলচন্দ্র শাহের পিভিসি পাইপের ব্যবসা দেখভাল করতেন। পরে মন দেন শেয়ার কেনাবেচায়।

লোকসভা ভোটে গাঁধীনগরের প্রার্থী হিসেবে অমিতের হলফনামা থেকে স্পষ্ট, বিজেপি সভাপতির লগ্নির ক্ষেত্রে এখনও প্রথম পছন্দ শেয়ার বাজার। সেখানে ১৭.৫৬ কোটি টাকার লগ্নি রয়েছে তাঁর। ৩০.৪ কোটি টাকার মোট সম্পত্তির অর্ধেকের বেশিই এই শেয়ার। মূলত ‘ব্লু চিপ’ শেয়ারই তাঁর পছন্দ। রিলায়্যান্স, টিসিএস, বাজাজ অটো, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার থেকে এল অ্যান্ড টি ফিনান্স, আলট্রাটেক সিমেন্টের নানা সংস্থার শেয়ার রয়েছে অমিতের ঝুলিতে। মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স সংস্থায় তাঁর প্রায় ২ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। আছে অনিল অম্বানীর একাধিক সংস্থার শেয়ারও।

শেয়ার বাজারে আর পাঁচ জন লগ্নিকারীর মতোই তাঁকেও লোকসান সইতে হয়। গত দু’বছরে অমিতের শেয়ারের মূল্য ৪.৯৩ কোটি টাকা বেড়েছে। উল্টো দিকে এমআরএফ, মারুতি সুজুকির মতো নানা সংস্থার শেয়ারে ১.২৮ কোটি টাকার লোকসানও হয়েছে তাঁর।

অর্থ মন্ত্রকে অরুণ জেটলির সম্ভাব্য উত্তরসূরির সামনেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জুলাই মাসে নতুন অর্থমন্ত্রীকে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে হবে। পাঁচ বছর আগে যখন জেটলি অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেই সময়ে বাজার-দরের হার বেশ চড়া। রাজকোষ ঘাটতি ও বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের ঘাটতিও লাগামছাড়া ছিল। পাঁচ বছর পরে মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বৃদ্ধির হারের গতি নীচের দিকে। শুক্রবারই ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসের বৃদ্ধির হার প্রকাশ পাবে। তাতে বৃদ্ধির হার ৬.৩ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা।

সব থেকে বড় চিন্তা, বাজারে চাহিদা কমছে। অর্থাৎ, কেনাকাটা কমছে। বাজার-দর কম থাকলে কেনাকাটা বাড়ার কথা। কিন্তু জিনিসপত্র বিক্রির পরিমাণই কম। তেল, সোনার আমদানি কমের দিকে। বাজার চাঙ্গা করতে দরাজ হাতে খরচ করতে গেলে রাজকোষে চাপ পড়বে। কারণ রাজস্ব আদায় আশানুরূপ নয়। ফলে প্রচুর ধার। তাই বেসরকারি লগ্নিকে চাঙ্গা করতে উৎসাহবর্ধক দাওয়াইয়ের সুযোগও কম। কেনাকাটা বাদ দিলে অর্থনীতির দ্বিতীয় ইঞ্জিন— রফতানির অবস্থাও ভাল নয়।

অর্থ, প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র— এই ‘বিগ ফোর’ মন্ত্রকের সদস্য হিসেবে আরও একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে অমিতের সামনে। দুর্নীতির দাগ লাগতে দেওয়া চলবে না। গত পাঁচ বছরে দু’বার অমিতের দিকে বেআইনি কাজকারবারের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে আমদাবাদ জেলা সমবায় ব্যাঙ্কে মাত্র পাঁচ দিনে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার পুরনো নোট জমা পড়েছিল বলে জানা যায়। অমিত ওই ব্যাঙ্কের অন্যতম ডিরেক্টর। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, অমিতের ব্যাঙ্ক থেকেই কালো টাকা সাদা হয়েছে। মোদী ক্ষমতায় আসার পরে অমিত-পুত্র জয় শাহের সংস্থার আয়ও এক বছরে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৮০ কোটি টাকায় পৌঁছে যায়। অথচ এর পরেই কোম্পানি গুটিয়ে ফেলেন জয়। সেই রহস্য নিয়েও জলঘোলা কম হয়নি। এই সব অভিযোগ থেকেও দূরে থাকতে হবে অমিতকে। তাঁর উপরে ‘বিশ্বাস’ রাখার জন্য আজ টুইটারে মোদীকে ধন্যবাদ দেন অমিত। লেখেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে প্রতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বৃদ্ধির সাক্ষী থেকেছে ভারত। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অক্লান্ত ভাবে কাজ করে চলেছে মোদী সরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন