কূটনীতির নয়া অঙ্ক

চিনা চাপে নাকাল মঙ্গোলিয়ার ভরসা দিল্লি

শোনা যায়, চিনের মোট জনসংখ্যা নাকি অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিলেন মোঙ্গল শাসক চেঙ্গিজ খান। আর আজ প্রবল পরাক্রান্ত চিন যখন টুঁটি টিপে ধরেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মঙ্গোলিয়ার, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল নয়াদিল্লি। মূল উদ্দেশ্য, ড্রাগনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

শোনা যায়, চিনের মোট জনসংখ্যা নাকি অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিলেন মোঙ্গল শাসক চেঙ্গিজ খান। আর আজ প্রবল পরাক্রান্ত চিন যখন টুঁটি টিপে ধরেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মঙ্গোলিয়ার, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল নয়াদিল্লি। মূল উদ্দেশ্য, ড্রাগনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা।

Advertisement

তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামাকে আমন্ত্রণ জানানোর ‘অপরাধে’ মঙ্গোলিয়ার উপরে আংশিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপাতে শুরু করেছে বেজিং। বন্ধ করা হয়েছে সীমান্ত। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গোলিয়ার পক্ষ থেকে সাউথ ব্লকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্প্রতি আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, ‘‘চিন-মঙ্গোলিয়া সম্পর্ক নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। এটুকু বলতে পারি, মঙ্গোলিয়া এই মুহূর্তে নানা কারণে আর্থিক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে সে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই আমরা। মঙ্গোলিয়া সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করা হচ্ছে। তারা যাতে অন্যান্য দেশের থেকে বিনিয়োগ এবং আর্থিক সম্পদ সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য আমরা সক্রিয়।’’

ভারতের এই কূটনীতিতে চাপ যে তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট। চিনের সরকারি মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’ লিখেছে, মঙ্গোলিয়া যদি এই ‘রাজনৈতিক মূর্খামি’ চালিয়ে যায়, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে বেজিং। ভারতের প্রতিও কঠোর বার্তা দিয়ে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং সুয়াং আজ বলেছেন, ‘‘পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থা (এনএসজি)-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি অথবা মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় রাখা নিয়ে আমাদের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।’’ গত সপ্তাহেই ভারত-চিন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের একটি অনুষ্ঠানে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, ভারত অসামরিক পরমাণু প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে চায়। চিনের উচিত নয় একে রাজনৈতিক রং দেওয়া। আজ চিনা বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্যেই স্পষ্ট, সে সবের কোনও ধার ধারছে না তারা।

Advertisement

কাজেই, রাশিয়া এবং চিনের মাঝখানে চিঁড়েচ্যাপ্টা মঙ্গোলিয়াকে ঘিরে এখন তৈরি হয়েছে একটি নতুন রণক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, মঙ্গোলিয়াকে সামনে রেখে চিনের উপরে চাপ তৈরির এই কৌশলে রাশিয়ার ভূমিকাও বুঝে নিতে চাইছে সাউথ ব্লক। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বেজিংয়ের দ্বৈরথের সময়ে মঙ্গোলিয়া ছিল মস্কোর পরম মিত্র। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পরে মস্কোর উদ্যোগেই চিনের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করে নিয়েছিল মঙ্গোলিয়া। সাউথ ব্লক মনে করছে, রাশিয়া এই মুহূর্তে বেজিং এবং ইসলামাবাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই এগোচ্ছে। তবে প্রতিবেশীদের কাজে লাগিয়ে চিনকে ঘেরাও করার এই কৌশলে সাউথ ব্লকের পাশে রয়েছে আমেরিকা। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলায় এমনিতেই সূক্ষ্ম চাপ তৈরি হয়েছে বেজিং-এর উপরে।

দীর্ঘদিন ধরেই বেজিং-এর খবরদারিতে অসন্তুষ্ট ছিল মঙ্গোলিয়া। সেই অসন্তোষই চরমে ওঠে গত মাসে। চিনের রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করে দলাই লামার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মঙ্গোলিয়া সরকার। যার জেরে গত কয়েক সপ্তাহে একের পর এক পদক্ষেপ করে মঙ্গোলিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে বেজিং। তার পরেই মঙ্গোলিয়া যোগাযোগ করে নয়াদিল্লির সঙ্গে। ভারতে নিযুক্ত সে দেশের রাষ্ট্রদূত গঙ্গচিগ গানবোল্ড জানিয়েছেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের আত্মিক সম্পর্ক। প্রবল ঠান্ডার মুখে চিন একতরফা ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে যে সব ব্যবস্থা নিচ্ছে, সে বিষয়ে ভারতের স্বর উচ্চগ্রামে নিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’’ বিদেশ মন্ত্রকের পূর্ব এশিয়া বিভাগের কর্তা প্রদীপ রাওয়াতের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই বৈঠকে চলতি পরিস্থিতিতে মঙ্গেলিয়ার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে ভারত। স্থির হয়েছে, সে দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি, গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মঙ্গোলিয়া সফরের সময়ে যে একশো কোটি ডলার অল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা-ও দ্রুত বাস্তবায়িত করা হবে বলে জানাচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন