Arunachal Pradesh

ডাক্তার কেমন হয়, প্রথম দেখলেন গান্ধীগ্রামের মানুষ

দু’দিনের শিবিরে ডাক্তাররা ১৫-২০ জন ছানি রোগীকে চিহ্নিত করে চিকিৎসা চালান। শয্যাশায়ী বৃদ্ধদের বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করে ওষুধ দেওয়া হয়।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০৫
Share:

গান্ধীগ্রামের স্বাস্থ্যশিবিরে স্থানীয়েরা। নিজস্ব চিত্র

সাদা এপ্রন। গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপ। রোগের কথা শুনছেন। খসখস করে লিখছেন ওষুধের নাম। কাউকে আবার হাতে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন সূচ! কারও চোখের মণি কেটে ফেলে আবার লাগিয়ে দিচ্ছেন! ও বাবা, ডাক্তার তা হলে এমনই হয়!

Advertisement

স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশ যখন ধুমধাম উৎসব পালনে ব্যস্ত, তখনই জাতির জনকের নামাঙ্কিত অরুণাচলের গান্ধীগ্রামে অনেকেই জীবনে প্রথমবার চাক্ষুষ করলেন ডাক্তার! তাও একজন-দু’জন নয়, একবারে ২৫ জন ডাক্তার!

দেশের একেবারে পূর্ব প্রান্তে থাকা চাংলাং জেলার বিজয়নগর প্রত্যন্ততম এলাকাগুলির মধ্যে পড়ে। সামরিক প্রয়োজনে সেখানে বসতি গড়া হয়েছিল বটে কিন্তু রাস্তা তৈরি হয়েছে স্বাধীনতার এত বছর পরে। তাই যাঁদের নিতান্ত কাজের প্রয়োজনে বা প্রবল শরীর খারাপ হয়ে সেনার হেলিকপ্টারে শহরের হাসপাতালে যেতে হয়েছে তাঁরা বাদে অন্যরা মোটরগাড়িও দেখেছেন এই কিছু দিন হল। বিজয়নগরের নিকটবর্তী শহর বলতে মিয়াও। দূরত্ব ১৫৭ কিলোমিটার। বিজয়নগরের মানুষকে পাহাড়তলির বাজার থেকে সমস্ত নিত্যপণ্য মুটের মাধ্যমে কয়েক দিনের পাহাড়ি পথ পার করে নিয়ে আসতে হয় গ্রামে। দু’বছর আগে বিএসএনএল সেখানে ২জি টাওয়ার বসালেও মোবাইলে সিগনাল মেলা ভাগ্যের ব্যাপার।

Advertisement

গান্ধীগ্রামে নাম কা ওয়াস্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে বটে কিন্তু নিয়মিত থাকেন না ডাক্তার। এক জন নার্স সাধ্যমতো পরিষেবা দেন বটে কিন্তু গ্রামের মানুষ যে কোনও অসুখের ক্ষেত্রে জঙ্গলের ওষধি গাছেই ভরসা রাখেন বেশি।

এই গান্ধীগ্রাম পর্যন্ত সড়ক তৈরি হয়েছে নামদাফা জাতীয় উদ্যান ও ব্যাঘ্র প্রকল্পের বুক চিরে। চাংলাংয়ের জেলাশাসক সানি কে সিংহ জানান, দুয়ারে সরকারের মতোই, নতুন তৈরি রাস্তার সাহায্যে গান্ধীগ্রাম-বিজয়নগরের মানুষের জন্য দুয়ারে ডাক্তার আনার পরিকল্পনা করা হয়। শনিবার ও রবিবার গান্ধীগ্রাম ও বিজয়নগরে বসা স্বাস্থ্য শিবিরে প্রায় আস্ত হাসপাতালই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

নতুন হওয়া রাস্তা দিয়ে অরুণাচল ও অসম থেকে নিয়ে আসা মোট ২৫ জন ডাক্তার ও স্থাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে ৬০ জনের বিরাট মেডিক্যাল টিম যখন ১২টি গাড়ির কনভয় করে গান্ধীগ্রামে হাজির হয় তখন রোগের কথা ভুলে চোখ কপালে তুলে গাড়ি ও ডাক্তার দেখতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা।

দু’দিনের শিবিরে ডাক্তাররা ১৫-২০ জন ছানি রোগীকে চিহ্নিত করে চিকিৎসা চালান। শয্যাশায়ী বৃদ্ধদের বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করে ওষুধ দেওয়া হয়। গান্ধীগ্রামের নদীর ও পারে থাকা গ্রামেও যায় মেডিক্যাল টিম। তাদের কয়েকটি স্ট্রেচার দিয়ে আসা হয়েছে।

সানি জানান, এক সঙ্গে এত জন ডাক্তার-নার্স সেখানকার মানুষ আগে কখনও দেখেননি। অনেকে তো প্রথম বার ডাক্তার দেখলেন। স্বাস্থ্য শিবিরের জন্য সরকার ১০ লক্ষ টাকার ওষুধ কিনেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন