পরীক্ষায় সন্তানকে পিছনে ফেললেন মা

মায়েরা অপরাজিতাই! সংসার-সংগ্রাম হোক বা উচ্চ মাধ্যমিকের লড়াই। তার প্রমাণ দিলেন অসমের দুই রমণী। হেঁসেল থেকে সময় বাঁচিয়ে ফের হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা। নিজেদের সন্তানদের সঙ্গেই বসেছিলেন পরীক্ষায়। উচ্চ মাধ্যমিকে দু’জনই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলেন। এমনকী, পরীক্ষার ফলাফলে পিছনে ফেলছেন সন্তানদেরও! অসমে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে দু’দিন আগে।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:৪৭
Share:

মায়েরা অপরাজিতাই!
সংসার-সংগ্রাম হোক বা উচ্চ মাধ্যমিকের লড়াই। তার প্রমাণ দিলেন অসমের দুই রমণী।
হেঁসেল থেকে সময় বাঁচিয়ে ফের হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা। নিজেদের সন্তানদের সঙ্গেই বসেছিলেন পরীক্ষায়। উচ্চ মাধ্যমিকে দু’জনই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলেন। এমনকী, পরীক্ষার ফলাফলে পিছনে ফেলছেন সন্তানদেরও!
অসমে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে দু’দিন আগে। ডিব্রুগড় জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম দিখৌকিনার চ্যাংমাইগাঁওয়ের বাসিন্দা নয়নমণি বেজবরুয়া ও তাঁর ছেলে অঙ্কুর নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবেই পরীক্ষায় বসেন। মায়ের বয়স ৩৭। ছেলের ১৮। এক সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তাঁরা। ফলাফলে দেখা যায়, ম্যাট্রিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও মা ছেলেকে পিছনে ফেলেছেন। ম্যাট্রিকে তাঁরা দ্বিতীয় বিভাগ পেয়েছিলেন। কিন্তু, উচ্চ মাধ্যমিকে মা পেয়েছেন প্রথম বিভাগ। ছেলে তৃতীয় বিভাগ।

Advertisement

অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় নয়নমণির পড়াশোনার পাট উঠেছিল। ইচ্ছে থাকলেও দারিদ্র্রের জন্য লেখাপড়া চালাতে পারেননি তিনি। কিন্তু, দু’বছর আগে তাঁর লেখাপড়ার ইচ্ছার কথা শুনে খোয়াং পিঠুবর গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকারা তাঁকে স্কুলে টেনে আনেন। মুকুব করা হয় তাঁর বেতন। উল্টে স্কুল থেকে দেওয়া হয় বই, খাতা। পড়াশোনার তাগিদে সংসার সামলে প্রতি দিন সাইকেল চালিয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে স্কুলে যেতেন নয়নমণি। তিনি ভেবেছিলেন, ম্যাট্রিক পরীক্ষা কোনও মতে পাশ করে পড়াশোনা শেষ করবেন। কিন্তু, সেখানে ছেলের চেয়েও ভাল ফল করায় ফের স্কুলের চাপে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়।

উচ্চ মাধ্যমিকে তো রীতিমতো অঘটন! নয়নমণি ৬৯.৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। সেইসঙ্গে সমাজবিদ্যায় লেটার। কিন্তু, সংসার টানার জন্য বাবার সঙ্গে সব্জি বিক্রি করা ছেলে পাশ করে তৃতীয় বিভাগে। তাই, ভাল ফলের উচ্ছাস নয়, সন্তানের মন্দ ফলের হতাশাই মাকে গ্রাস করেছে। উল্টে মাকে সান্তনা দিতে ব্যস্ত অঙ্কুর। তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের জন্য আমরা গর্বিত। ওঁর হাত ধরেই আমাদের পরিবারে ভাগ্য ফিরবে।’’ পরিবারের চাপে উচ্চশিক্ষার পথে পা বাড়াচ্ছেন নয়নমণি। তিনি জানান, অসমিয়া সাহিত্য তাঁর প্রিয় বিষয়। তাই সেই বিষয় নিয়েই কোনও কলেজে ভর্তি হতে চান।

Advertisement

খোয়াং পিঠুবর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সোনতরা গগৈ বলেন, ‘‘নয়নমণির জন্য আমরা গর্বিত। তিনি প্রমাণ করলেন ইচ্ছে থাকলে দারিদ্র্য, বয়স বাধা হতে পারে না।’’

প্রায় একই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন পাশের জেলা তিনসুকিয়ার বরগুড়ির বাসিন্দা ইভারানি শইকিয়া। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যাওয়া ইভাদেবী পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে তাঁর কাঁধেই সংসারের জোয়াল চেপেছে। কিন্তু, সংসার সামলে এ বার ছেলে টুলটুলের সঙ্গে তিনিও পরীক্ষায় বসেন। ছেলে ও মা দু’জনই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছেলে রসায়নে ও মা অসমিয়ায় লেটার পেয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব নিতে প্রকল্প তৈরি করছে রাজ্য সরকার। ম্যাট্রিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বিভাগ পর্যন্ত পাওয়া পড়ুয়ারা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠিয়ে সাহায্যের আবেদন করতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন