প্রোমোটারদের আইনে বাঁধতে বিল পাশ

নিজের ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার স্বপ্ন সকলেই দেখেন। তার সঙ্গে প্রোমোটারদের হাতে হয়রানির দুঃস্বপ্নও বাদ যায় না। এই হয়রানি বন্ধ করতে ইউপিএ জমানায় তৈরি হয়েছিল আবাসন ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ বিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

নিজের ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার স্বপ্ন সকলেই দেখেন। তার সঙ্গে প্রোমোটারদের হাতে হয়রানির দুঃস্বপ্নও বাদ যায় না। এই হয়রানি বন্ধ করতে ইউপিএ জমানায় তৈরি হয়েছিল আবাসন ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ বিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মোদী জমানায় আজ রাজ্যসভায় পাশ হল সেই বিল।

Advertisement

মোদী সরকারের আমলেই এক বার লোকসভায় পাশ হয়েছিল বিলটি। কিন্তু রাজ্যসভায় তা বিরোধিতার মুখে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, আবাসন নির্মাতা সংস্থাগুলির চাপে পড়ে মোদী সরকার বিলের নিয়মকানুন শিথিল করছে। বিল চলে যায় সিলেক্ট কমিটিতে।

বিরোধীদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিয়ে ফের নিয়মকানুন কঠোর করা হয়। তার পরেই কংগ্রেস ও বিরোধীদের সহযোগিতায় আজ রাজ্যসভায় বিল পাশ হয়ে যায়। তবে ৫০০ বর্গমিটারের কম জমি ও ৮টি বা তার চেয়ে কম ফ্ল্যাটের আবাসন আপাতত রইল এই আইনের আওতার বাইরে। রাজ্যসভায় সংশোধিত হওয়ায় বিলটি ফের লোকসভায় পাশ করাতে হবে।

Advertisement

সরকারের দাবি, টাকা দিয়েও ঠিক সময়ে ফ্ল্যাটের চাবি হাতে না পাওয়া, নকশা বা নির্মাণের ক্ষেত্রে গলদ, ঠিকঠাক অনুমোদনের অভাব—এই ধরনের যাবতীয় হয়রানি বন্ধ করার ব্যবস্থা রয়েছে বিলটিতে। প্রোমোটারদের আইনের শাসনে বাঁধার ব্যবস্থা হয়েছে। এত দিন হয়রানি হলেও আলাদা ভাবে আবাসন ক্ষেত্রের ক্রেতাদের অভিযোগ শোনার কোনও সংস্থা ছিল না। তারও ব্যবস্থা রয়েছে এই বিলে।

কেন্দ্রীয় আবাসনমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, ‘‘আবাসন ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে কালো টাকা ঢুকছিল। তা বন্ধ হবে। তবে নিয়ন্ত্রণের নামে প্রোমোটারদের গলায় ফাঁস চেপে বসানো হচ্ছে না। বরং আবাসন ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের উৎসাহ ফিরে আসবে।’’ নায়ডুর আশ্বাস, এ বার সঠিক সময়ে আবাসনের কাজ শেষ হওয়া নিশ্চিত হবে। মোদী সরকারের সকলের জন্য আবাসনের লক্ষ্যও পূরণ হবে।

মনমোহন সিংহ জমানার বিলে বলা হয়েছিল, প্রোমোটাররা একটি আবাসনের ক্রেতাদের থেকে টাকা নিয়ে অন্য প্রকল্পে খরচ করে ফেলে। ফলে ওই আবাসন তৈরির কাজ শেষ হয় না। তাই কোনও প্রকল্পের ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকার ৭০ শতাংশ একটি অস্থায়ী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখার নিদান দেওয়া হয়েছিল। মোদী সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকার ৫০ শতাংশ পৃথক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখলেই যথেষ্ট। বিরোধীদের চাপে তা বাড়িয়ে ফের ৭০ শতাংশ করেছে মোদী সরকার।

এই বিলে ফ্ল্যাটের ‘কার্পেট এরিয়া’র সংজ্ঞা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বিলের বক্তব্য, ফ্ল্যাটের দেওয়ালের ভিতরের অংশকেই ‘কার্পেট এরিয়া’র হিসেবে ধরা হবে। তার ভিত্তিতেই দাম দাম নির্ধারণ করতে হবে। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘সুপার-বিল্ট এরিয়া’ বা ‘কভার এরিয়া’-র হিসেবে প্রোমোটাররা ফ্ল্যাট বিক্রি করেন।

শুধু তা-ই নয়। বিল অনুযায়ী, আবাসন ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাদের কাছে সমস্ত প্রকল্প নথিভুক্ত করতে হবে। তা না হলে তিন বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা হবে। ফ্ল্যাটবাড়িতে কাঠামোগত কোনও সমস্যা দেখা দিলে প্রোমোটার ৫ বছর পর্যন্ত তার জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। বাণিজ্যিক ও আবাসিক, দুই ধরনের প্রকল্পই এই বিলের আওতায় আসছে। ঠিক সময়ে প্রোমোটার ফ্ল্যাটের কাজ শেষ না হলে বা ক্রেতা ঠিক সময়ে দাম মেটাতে না পারলে একই হারে দুই পক্ষকে সুদ গুণতে হবে। এত দিন প্রোমোটাররা নিজেদের তরফে চুক্তির খেলাপ হলে ২-৩ শতাংশ সুদ দেওয়ার শর্ত রাখতেন। কিন্তু ক্রেতাদের জন্য ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদের শর্ত রাখা হত। সেই বৈষম্য দূর হল।

একটি ক্ষেত্রে অবশ্য বিরোধীদের দাবি সরকার মেনে নেয়নি। আজ রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ আবৃত্তি করে দাবি তোলেন, ৫০০ বর্গমিটার বা তার কম জমির উপর তৈরি বা ৮টি বা তার কম সংখ্যার ফ্ল্যাটের আবাসনগুলিকেও এই বিলের আওতায় আনা হোক। ঋতব্রতের যুক্তি ছিল, সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষই ছোট ছোট আবাসনে ফ্ল্যাট কেনেন। তাঁরাই প্রোমোটার বা দালালদের হাতে সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হন। অথচ তাঁদের জন্যই কোনও আইনি সুরক্ষার বন্দোবস্ত থাকছে না। বেঙ্কাইয়া তাঁর আবৃত্তির প্রশংসা করলেও এই দাবি মেনে নেননি। তবে ভবিষ্যতে এই দিকটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারি সূত্রে খবর, নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ কমাতেই আপাতত ছোট প্রকল্পগুলিকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।

আবাসনে ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রে যাতে ধর্ম-জাতি-খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে বৈষম্য না হয়, বিলে তারও ব্যবস্থা করার দাবি তোলেন ঋতব্রত। সরকার সমস্যার কথা মানলেও ওই দাবিও পূরণ হয়নি।

শিল্পমহল অবশ্য মনে করছে, বিলটি আইন হলে ওই শিল্পে স্বচ্ছতা আসবে। ফিকির প্রেসিডেন্ট হর্ষ নেওটিয়া জানান, এই বিল গোটা শিল্পে আরও স্বচ্ছতা নিয়ে আসবে। একই সঙ্গে আবাসন শিল্পে নতুন জোয়ার আসবে বলে তাঁর দাবি। একই সুরে রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্ক-এর দাবি, নতুন নিয়ম চালু হলে আরও সংগঠিত হবে এই শিল্প। সেক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি টানতেও সুবিধা হবে বলে তাদের দাবি। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হর্ষবর্ধন পাটোডিয়ার দাবি, আবাসন শিল্পের জন্য কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে ক্রেতাদের আস্থা বাড়বে। বাজারে চাহিদা বাড়বে। তবে বিলের কিছু শর্ত স্থির করার ক্ষেত্রে প্রোমোটারদের প্রতি বেশি বিরূপ মনোভাব নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন ডিএলএফের সিইও রাজীব তলোয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন